নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৭ অগাস্ট, ২০১৭
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার বিরুদ্ধে অসদাচরণের তিন অভিযোগ উত্থাপন করছে সরকার। এই অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি দেবে সরকার। চিঠি প্রস্তুত করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল, আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে তা পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ৯৬ (৫) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশ দেবেন। তবে, এ ধরনের অসদাচারণের অভিযোগ আনুষ্ঠানিক উত্থাপনের আগে প্রধান বিচারপতি যদি পদত্যাগ করেন তবে সরকার আর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপন করবে না।
অসদাচরণের যে তিনটি অভিযোগ সরকার উত্থাপন করতে চাইছে, সেগুলো হলো:-
১. যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত একজন আসামির ডেথ রেফারেন্স আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায়, দণ্ডিত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে ‘বৈঠক’। সরকার মনে করছে, এর মাধ্যমে তিনি বিচারপতিদের যে আচরণবিধি তা লঙ্ঘন করেছেন। ডেথ রেফারেন্স বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আসামি পক্ষের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ গুরুতর অসদাচারণ বলে সরকার মনে করছে।
২. একজন আবেদকারীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বেঞ্চ পরিবর্তন। ওই আবেদনকারী প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন যে, বাড়ি সংক্রান্ত তাঁর মামলার শুনানির জন্য যেন একজন নির্দিষ্ট বিচারপতিকে বেঞ্চে না রাখেন। কোর্টের বাইরে এ ধরনের অভিযোগ পক্ষপাতপূর্ণ এবং তা অসদাচারণের পর্যায়ে পড়ে। ওই আবেদনকারীর অনুরোধে তিনি বেঞ্চ পরিবর্তন করেন।
৩. প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে আদালতের বাইরে রাজনৈতিক এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান যা একজন বিচারপতির আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকার পক্ষ থেকে এধরনের একাধিক বক্তব্যের অডিও এবং ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে।
সংবিধানের ৯৬ (৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এসব অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে এলে, তারা এ বিষয়ে তদন্ত করবেন। সংবিধানে ৯৬ (৭) অনুযায়ী তদন্তের জন্য কাউন্সিল স্বীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।
ষোড়শ সংশোধনী রায় বাতিলের পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুন:স্থাপনের কথা বলা হয়। প্রধান বিচারপতি রায়ের পরপরই কাউন্সিলের একটি সভা আহ্বান করেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্ব হলেও তাঁর বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করবেন, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ তিন বিচারপতি।
সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রধান বিচারপতিকে সরে যেতেই হবে। তবে, অসদাচারণের অভিযোগ এড়াতে তিনি চাইলে পদত্যাগও করতে পারেন। সংবিধানের ৯৬ (৮) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর পদত্যাগ পেশ করতে পারেন। বঙ্গভবন সূত্র নিশ্চিত করেছে, যেকোনো সময়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। সেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন। এরপরই নির্ধারিত হবে, আসলে প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের টানাপোড়েনের পরিণতি কী।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।