ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজনৈতিক মধ্যস্থতা: কী করতে পারে ইসি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ২০ অগাস্ট, ২০১৭


Thumbnail

নির্বাচনী আইনানুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা বা সমঝোতা করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আওতার মধ্যে পড়ে না। তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনের পন্থা নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কথা বলা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এ। নির্বাচনকালীন কোনো সরকার থাকবে তা সংবিধানেই নির্ধারিত। ফলে সংবিধান অনুসরণ করে নির্বাচন আয়োজন করতে হয় ইসির।

গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশন ও রেডিও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন,‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা করা ইসির কাজ নয়। ইসি সেটা করতেও চায় না। নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার থাকবে, তাও ইসির দেখার বিষয় নয়।’ এই বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সিইসি কি ঠিক বা বেঠিক কথা বলেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার কাছে পূর্বের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্ততা করার কোন সুযোগ নেই। আইন আমাদের সেই সুযোগ দেইনি।

সিইসি আরও বলেন, ‘সংবিধান, আরপিও বা বিভিন্ন বিধিমালায়ও এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাহলে আমরা আগ বাড়িয়ে কেন দায়িত্ব নিতে যাব। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠন থেকে দায়িত্ব-কর্তৃব্যের বিষয় উল্লেখ আছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন পরিচালনার মুল চাবিকাঠি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ,১৯৭২ (আরপিও)’তে নির্বাচন আয়োজনে বিষয় বিস্তারিত বলা আছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে বিষয়ে সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবে।’ এই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (২) বলা আছে, উপরি-উক্ত দফাসমূহ নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরুপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে, নির্বাচন কমিশন সেইরুপ দায়িত্ব পালন করবে।

সংবিধানে যেভাবে জাতীয় নির্বাচন করার বিধান থাকবে, সেই ভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে কমিশনকে। আর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ৩ এ বলা আছে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, (ক) বলা হয়েছে, মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে’। তবে শর্ত থাকে যে, ‘এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরুপে কার্যভার গ্রহণ করবেন না’। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (৩) অনুাযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভেঙ্গে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙ্গে যাবে।’

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। আর সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি। অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে কমিশনকে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের কাউন-ডাইন শুরু হবে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) জারি হয়। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সংশোধন, পরিমার্জন হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয় আরপিও। এই আরপিওকে নির্বাচন পরিচালনার দিকনির্দেশনা রয়েছে। আর আরপিও’র আলোকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ করা হয়। তবে এটি সংশোধন করে নির্বাচন সময়ের ব্যাখ্যা নির্ধারণ করেছে বিগত কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন। ১৩ সালের ২৪ নভেম্বর সংশোধনী বিধিমালায় নির্বাচন পূর্ব সময় বলতে স্পস্ট করা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন কিংবা কোনো শূণ্য আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশন কর্তৃক নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সময়কাল।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’-এর ৪৪ ই অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার অথবা বিভাগ, জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় কর্মরত তাদের অধীন কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে কাজ করবেন। এ জন্য ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে আরপিওতে অগাদ ক্ষমতা দেয়া আছে।

পাশাপাশি সংবিধানের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে বিপুল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন, সেহেতু দলগুলোর নিয়ন্ত্রণের অধিকারীও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির। শর্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। গণপ্রতিনিধি আদেশ ৯০-এ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ২০০৮ সালের আরপিও সংশোধন করে এ বিধান চালু করা হয়। এ পর্যন্ত ৪২টি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে আদালতে জামাতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। আর সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে কমিশন। আরপিও’র ৯০ এফ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে, বিশেষত, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সমস্যা ও পন্থা সম্পর্কে, কমিশনের সহিত পরামর্শের অধিকারী হবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্যতার বিষয়ে আরপিওতে বলা আছে, গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যে সংবিধানের পরিপন্থী হলে, গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গ ভেদে কোন বৈষম্য প্রতীয়মান হলে, নাম, পতাকা, চিহ্ন বা অন্য কোন কর্মকান্ড দ্বারা ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হলে কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, গঠনতন্ত্রে দলটির একদলীয় বা অদলীয় বিদ্যমান থাকলে এবং গঠনতন্ত্রে ভৌগোলিক সীমার বাইরে কোন দপ্তর, শাখা বা কমিটি গঠন এবং পরিচালনার বিধান থাকলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে ইসি। পাশাপাশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হলে, আয়-ব্যয়ের হিসাব পরপর তিন বছর দিতে ব্যর্থ হলে এবং পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও নিবন্ধন বাতিল হবে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মামুনুলকে ঘিরে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হবে ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন হেফাজতের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। আজ সকাল ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী নেতা। 

মামুনুল হক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পরই হেফাজত পাল্টে যেতে শুরু করে। উগ্র ভারত বিরোধিতা, সরকার বিরোধী অবস্থান এবং জঙ্গিবাদকে লালন করে মামুনুল হক সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেন। তার কারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নানা রকম অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। 

মামুনুল হক যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর হেফাজতকে উগ্রবাদী ধারা এবং সরকার বিরোধী একটি অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে দেশে নতুন করে উগ্র মৌলবাদীদের মেরুকরণ ঘটতে থাকে। এরকম বাস্তবতায় ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে মওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। খবর পেয়ে হেফাজত ও স্থানীয় কর্মীরা রিসোর্টে গিয়ে ভাংচুর চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। রয়েল রিসোর্টের সেই ঘটনার পর একাধিক মামলা হয় এবং এই সমস্ত মামলার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৮ এপ্রিল ২০২১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

পরে ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করা হয় এবং একই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রদ্রোহিতা সহ অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এই সমস্ত মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর অবশেষে আজ মুক্তি পেলেন এই বিতর্কিত সাবেক হেফাজত নেতা।

মামুনুল হকের মুক্তির পর কতগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। মামুনুল হকের একটি কর্মীবাহিনী রয়েছে। তার কিছু উগ্র জঙ্গীবাদী সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। আজ যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান তখনই দেখা যায় যে, তার কর্মী সমর্থকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন রকম স্লোগানও দিয়েছেন। 

এখন প্রশ্ন হল, মুক্তির পর মামুনুল হক কী করবেন? কেউ কেউ মনে করছেন যে, মামুনুল হকের মুক্তি আপস সমঝোতার অংশ হিসেবে হয়েছে। মামুনুল হক এখন আগের মতো সরকার বিরোধী, জঙ্গি বিরোধী অবস্থানে যাবেন না। কিন্তু যারা মামুনুল হকের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে অবহিত আছেন, তারা জানেন যে, তিনি জামাতপন্থী এবং হেফাজত ইসলামকে একটি উগ্র সরকার বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিকশিত করার জন্য তার একটি মহা পরিকল্পনা ছিল এবং সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি হেফাজতে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময় তার কর্মকাণ্ড ছিল রাষ্ট্রবিরোধী এবং প্রতিহিংসা মূলক। আর একারণেই সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়েছিল। 

মামুনুল হকের মত উগ্ৰ ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা কখনোই সরকারের পক্ষে শক্তি হতে পারে না। মামুনুল হক যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতাও করেন সেটি তার বাঁচার কৌশল হিসেবে। কিন্তু তার রাজনৈতিক ধারাই হলো সাম্প্রদায়িক উগ্র ধর্মান্ধ এবং ভারত বিরোধী। আর একারণেই মামুনুল হক মুক্তির পর হয়তো কিছু সময় নিবেন। কিন্তু আবার নতুন করে সংগঠিত হয়ে তিনি যে সরকারের বিরুদ্ধেই আবার ষড়যন্ত্র করবেন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন রকম সংশয় নেই।

মামুনুল হক   হেফাজত   মৌলবাদী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থনীতি সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।

বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।

বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।

কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।

ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।


অর্থনীতি   হাসান মাহমুদ আলী   আয়শা খান   আওয়ামী লীগ   সরকার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন পোশাক শ্রমিক

প্রকাশ: ০৭:৩৬ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পোশাক শ্রমিক হজরত আলী (২২)।

শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের রেফা মনিকে (১৮) বিয়ে করেন তিনি। হজরত আলী সাদুল্লাপুর উপজেলার রফিকুল আকন্দ ও সালমা বেগম দম্পতির ছেলে।

জানা গেছে, হজরত আলীর জন্মের পর থেকে রফিকুল আকন্দ ও সালমা বেগম স্বপ্ন বুনেন যে ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে করাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে আকাশ পথে গিয়ে বিয়ে করেন তিনি। এ সময় বর-কনের বাড়িতে হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় করেন।

হেলিকপ্টারে চড়ে বর আসায় মেয়ের বাবা এনমামুল হক বলেন, আমরা গর্বিত যে জামাই হেলিকপ্টার চড়ে আমাদের মেয়েকে নিতে এসেছে।

এ বিষয়ে বরের বাবা রফিকুল আকন্দ ও মা সালমা বেগম জানান, হজরত আলী ছাড়া আমাদের আর কোনো ছেলে নেই। ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে করানোর স্বপ্ন ছিল। আজ সেই ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে হচ্ছে।

হেলিকপ্টার   পোশাক শ্রমিক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শনিবার থেকে ট্রেনের নতুন ভাড়া, কোন রুটে কত

প্রকাশ: ০৭:০৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল শনিবার (৪ মে) থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে প্রায় সব রুটের ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে।

সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন তালিকা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হবে ৭৭৭ টাকা।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ১৫০ ও ২৮৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ১৬০ ও ৩০৫ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩৪০ ও ৬৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৪০৫ ও ৭৭১ টাকা।

ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৭৫ ও ৫২৪ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩১০ ও ৫৯৩ টাকা।

ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩২০ ও ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩৭৫ ও ৭১৯ টাকা।

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২০ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭২ টাকা।

ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১১৯৬ টাকা।

ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪২৫ ও ৮১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৫১২ ও ৯৭৫ টাকা।

ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫১০ ও ৯৭২ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৪৫ ও ১২৩৭ টাকা।

ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৯৫ ও ৯৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২০ ও ১১৮৫ টাকা।

ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৮০ ও ৯২০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬০০ ও ১১৫০ টাকা।

ঢাকা-ভূঞাপুর রুটে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৬০ ও ৪৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৯৫ ও ৫৭০ টাকা।

ঢাকা-দেওয়াগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২৫ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭৬ টাকা।

এ ছাড়া শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার বাদে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণির সিট ও বার্থ আসনের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে প্রদত্ত রেয়াত প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে।

ট্রেন   বাংলাদেশ রেলওয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ইলিশের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেল বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রের অণুজীবসমূহের গঠন ও বৈচিত্র্য উদঘাটন করে এক অনন্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধ্যান পেয়েছেন গবেষকরা। সর্বদা রোগমুক্ত মাছ হিসেবে ইলিশের যে গৌরব রয়েছে, যার প্রকৃত রহস্য এই উপকারি ব্যাকটেরিয়া-মনে করেন গবেষকরা।

বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের ইলিশের অন্ত্রে অনন্য এই প্রোবায়োটিকের সন্ধান পান গবেষকরা। মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ মাছের অন্ত্রে এই নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়।

গবেষকদের দাবি, উপকারী এই প্রোবায়োটিক বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহার করা গেলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বর্তমানে মৎস্যচাষে মাছ রোগমুক্ত রাখতে বিপুল পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যা মাছকে রোগমুক্ত রাখলেও জলজ বাস্তুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি করে। এ ধরনের উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার জলজ প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে মৎস্য চাষে নতুন বিপ্লব আনতে পারে।

গবেষকরা জানান, সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছ কখনো রোগাক্রান্ত হয়েছে, এমন কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন নেই। সুতরাং অত্যাধুনিক মেটাজিনোমিক্স দ্বারা আবিষ্কৃত অনন্য নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিায়ার শনাক্তকরণ, ইলিশের রোগপ্রতিরোধিতা এবং অন্যান্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিজ্ঞানীদল মনে করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারে সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।

গবেষণাদলের প্রধান বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই)’র অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়াসমূহের মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হিসেবে তাৎপর্য বহন করে। এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলি বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক এবং নদীর বাস্তুতন্ত্রে বিচরণকারী ইলিশের অনন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাদ ও ফিটনেসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত ড. এম. নাজমুল হক বলেন, এই গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা এবং পলিনেলা) শনাক্তকরণ যা পূর্বে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে রিপোর্ট করা হয়নি। সমষ্টিগতভাবে, এই গবেষণায় রিপোর্ট করা ইলিশ মাছের ব্যাকটেরিয়োম এবং শ্রেণিবিন্যাস পর্যবেক্ষণের বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আরও ব্যাপক গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।

গবেষণা প্রবন্ধটি উচ্চ ইমপ্যাক্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেন। তারা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আবাসস্থল যথাক্রমে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীতে বসবাসকারী ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এবং স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করে ইলিশের অন্ত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এ দেশের একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (এও) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এটি একটি আইকনিক ফ্ল্যাগশিপ প্রজাতি হিসেবে বিখ্যাত। স্বতন্ত্র্য এবং ব্যতিক্রমী স্বাদের কারণে ইলিশ মাছের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মূল্য এবং দেশ ও বিশ্বব্যাপী এর সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক আন্তঃসীমান্ত প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও, ইলিশ অপরিসীম আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। ইলিশ মাছের মোট বার্ষিক মূল্য ১৪, ৯৫০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.১৫ শতাংশেরও বেশি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ৪ মিলিয়ন মানুষের জীবিকার উৎস এই ইলিশ মাছ। এর বাইরে আনুমানিক ২.৫ মিলিয়ন ব্যক্তির বিস্তৃত ভেলুচেইনের সঙ্গে জড়িত। এই অতি চাহিদাসম্পন্ন এবং দামি মাছটি বাংলাদেশের সামগ্রিক মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রাখে।

ইলিশ   উপকারী ব্যাকটেরিয়া  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন