নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশে চোরাচালানের নেটওয়ার্কের অঘোষিত সম্রাট ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। বাবরকে বলা হতো ‘ক্যাসিনো বাবর’। এই চোরাচালান নেটওয়ার্কের সূত্রেই বাবরের সাথে পরিচয় হয় তারেকের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের। মামুন জড়িয়ে পরেন চোরাচালান নেটওয়ার্কে। তবে সাধারন পণ্য চোরাচালানে মামুনের আগ্রহ ছিলো কম। মামুন অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানে আগ্রহী ছিলেন। আর সেই সূত্রেই, তারেকের সহযোগিতা নেন মামুন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। তখন তারেক এই চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। বাবরকে করা হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আর সার্বিক তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয় গোল্ডেন মুনীরকে। তারেক তখন এই অঞ্চল মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালানের অঘোষিত গডফাদার পরিণত হন। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরার আগে, এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে কেউই তেমন কিছু জানতো না। কিন্তু ঐ ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরার পরও তারেকদের অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়নি। বরং রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ হয়ে ওঠে চোরাচালানের করিডোর।
ওয়ান ইলেভেন সরকার গঠিত হবার পর। তারেক, মামুন, বাবর এবং মুনীর গ্রেপ্তার হন। ভেঙ্গে যায় চোরাচালানের সিন্ডিকেট। ২০১২ সাল পর্যন্ত চোরাচালান নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিলো বাংলাদেশে। এর মধ্যে গোল্ডেন মুনীর জেল থেকে ছাড়া পান। লন্ডনে চোরাচালানের নতুন নেটওয়ার্ক তৈরী করেন তারেক জিয়া। এসময় গোল্ডেন মুনীরকে নিয়ে নতুন করে চোরাচালানের নেটওয়ার্ক তৈরী করেন তারেক। ২০১৫ সাল থেকে গোল্ডেন মুনীরের নেতৃত্ব বাংলাদেশে স্বর্ণ, মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালান শুরু হয়। এসময় লন্ডনে তারেকে অর্থায়ন করা, বাংলাদেশে সহিংসতায় অর্থ যোগান করে আলোচিত হন গোল্ডেন মুনীর। সাম্প্রতিক সময়ে বাসে আগুনের ঘটনায় আলোচনায় আসে গোল্ডেন মুনীর। এই বাসে আগুনের ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গোল্ডেন মুনীরের নাম সামনে আসে।
উল্লেখ্য, গোল্ডেন মুনীর গত কয়েক বছর প্রত্যক্ষ রানজীতি থেকে দুরে থাকলেও বিএনপিকে অর্থায়ন করতো গোপনে। এছাড়াও জঙ্গীদের অর্থায়ন এবং সন্ত্রাস ও সহিংসতায় অর্থায়নের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তারেক জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত লোকদের দিয়ে সন্ত্রাস সহ নানা অপকর্ম করাচ্ছিল। গোল্ডেন মুনীর তাদেরই একজন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।