নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান সম্পর্কের দৃশ্যমান উষ্ণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশও সম্পর্কের আড়ষ্টতা ভেঙ্গে যেন খোলস ছাড়ছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রদানের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করেছে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণের কিছু দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত এক বছরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সংগে একাধিকবার টেলি আলাপ করেছেন। বিজয়ের মাসেও বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কূটনীতিকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা স্রেফ একটি কূটনৈতিক কৌশল। পাকিস্তান কখনও বাংলাদেশের বন্ধু হবে না।বাংলাদেশ কখনও ৭১ এর ক্ষত মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু ভারতকে নমনীয় এবং চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই বাংলাদেশ পাকিস্তান অস্ত্র ব্যবহার করছে।
গত একবছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বেশ কিছু অস্বস্তি দেখা দেয়। সীমান্তে হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ সূত্রিতা এবং অনিশ্চয়তা। হঠাৎ করে পিয়াজ রপ্তানী বন্ধের সিদ্ধান্ত, ইত্যাদি নানা বিষয়ে দুদেশের সম্পর্কের টানা পোড়েন সৃষ্টি হয়। এদিকে চীনের সংগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়টি ভারতকে কিছুটা হলেও বিচলিত করে। বিশেষ করে, তিস্তার পানি সংরক্ষণে চীনা অর্থায়নে জলাধার নির্মাণের বিষয়টি ভারতকে উদ্বিগ্ন করে। এই টানা পোড়েন কাটাতে করোনার মধ্যেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফর করেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব দিল্লী যাচ্ছেন। আগামী মার্চে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে।
এই উপমহাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা পাকিস্তান তাই বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সংগে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখায় সেটা ভারতকে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন করবে, এটা বলাই বাহুল্য। আর একারণেই বাংলাদেশ ‘পাকিস্তান’ কার্ড খেলছে অনেক কূটনীতিক মনে করেন। কারো কারো মতে, বাংলাদেশের দিকে ‘পাকিস্তান’ কে ঠেলে দেয়ার পেছনে চীনেরও ভূমিকা রয়েছে। তবে, ভারত কখনও চাইবে না তার চিরশত্রু পাকিস্তান বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ হোক। বাংলাদেশকে পাশে রাখতে ভারত সম্ভাব্য সব কিছুই করবে। আর একারণেই করোনা ভ্যাক্সিন রপ্তানী করা হবে না বলে আবার পিছু হটেছে ভারত। শুধু তাই নয়, উপহারের টীকাও দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। পাকিস্তান জুজুতে তাহলে কি কাজ হয়েছে?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।