নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৯ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
একটি বাঁশের মাঝে ঝুলছে ঝুড়ি, যেখানে বসে আছে এক বৃদ্ধ। বাঁশের দুই প্রান্ত কাঁধে তুলে চলন শক্তিহীন ওই রোহিঙ্গা বৃদ্ধকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুই ছেলে। এমন দৃশ দেখা যায় গতকাল শুক্রবার গুমধুম সড়কে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে এভাবেই বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা।
গুমধুম সড়কের পাশের কাঁদামাটিতে দেখা যায় অনেক রোহিঙ্গা পলিথিনের ঘর তুলেছে। ছোট শিশুদের কোলে নিয়ে নারীদের অব্যক্ত চাহনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাড়িঘর ফেলে এসে রাস্তার পাশে পলিথিনের ঘরে ঠাঁই। তাওতো অন্তত প্রাণ নিয়ে তো বাঁচার সুযোগ আছে।
গুমধুম রোডের অনেক জায়গায়ই সড়কের দুইপাশে চোখে পড়ে বিভিন্ন রংয়ের পলিথিনের ঘর। কত রোহিঙ্গার যে বসবাস সেখানে তা গোনা অসম্ভব।
জলে থই থই নাফনদী। দূর থেকে দেখলে সাম্পানগুলোকে বাদামের খোসার মতো মনে হবে। এসব নৌকায় দল বেঁধে আসছে রোহিঙ্গারা। প্রমত্ত নদীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট সন্তানকে নিয়ে আসছেন কোনো মা। অনেক শিশুর কোলে তাঁর চেয়ে কম বয়সী কোনো শিশু। প্রাণে বাঁচতেই প্রাণ হাতে নিয়ে এই যাত্রা।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতনের থেকে বাচতে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে বালাদেশে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ঢল থামছে না। গত কয়েকদিনে অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে মিয়ানমারকে। কিন্তু তারপরও তারা থামেনি। এখনো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বসতভিটায় দেশটির সেনাবাহিনী আগুন দিচ্ছে। তাই ঘরবাড়ি, আপনজন আর জমি-জমা হারিয়ে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের ঢলও যেন থামছেই না।
ইতিমধ্যে, প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে, এই সংখ্যা আরও বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা প্রতিদিনই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। প্রতিদিন ভোর থেকে হেঁটে অথবা ট্রাক, পিকআপ, জিপ (চান্দের গাড়ি), অটোরিকশা, ইজিবাইকে করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আসছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান ও কক্সবাজারের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম জলপাই তলী, তুমব্রু পশ্চিম কুল, তুমব্রু কোনারপাড়া, বাইশপাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার সর্বত্রসহ পুরো কক্সবাজার জেলা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা শহরে এসব রোহিঙ্গারা বেশী করে অবস্থান নিচ্ছে।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের পাশে ঝাউবনের ছায়ায় তারা মাথা গোজার ঠাই হিসেবে প্লাস্টিক শিট দিয়ে একটি-দুটি করে ঝুপড়িঘর তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত কক্সবাজারের টেকনাফ শহর এবং তার পার্শ্ববর্তী উখিয়া এখন এক অর্থে রোহিঙ্গা শহরে পরিণত হয়েছে।
শত শত রোহিঙ্গাদের পথের পাশে অপেক্ষা করতে দেখা দেয়। পর্যটকরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি একটু কম হলেই দল বেঁধে শিশু-নারী-পুরুষ সব ছুটে এসে যেঁকে ধরে সাহায্যের জন্য। রোহিঙ্গাদের চাপে এককথায় টেকনাফ শহর নিজেই এখন বিপন্ন।
এদিকে রোহিঙ্গাদের এই সংকট মুহুর্তের সুযোগ নিয়ে অনেকেই ধান্দাবাজি শুরু করে দিয়েছে। প্রায় আট’শ মতো জেলে নৌকা এখন মাছ ধরার বদলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আনার ব্যবসায় লেগেছে। গভীর রাত অবধি চলছে এই পারাপার।
টেকনাফ বাসস্ট্যান্ডের পাশেরই মসজিদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে একটু খোলা জায়গা আছে। এখান থেকেই রোহিঙ্গাদের ট্রাকে, পিকআপে তোলা হচ্ছে। সারা দিন এখানে হাজারো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এটিই শহরের প্রধান সড়ক। প্রাণকেন্দ্রের এই জনজটের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কক্সবাজার থেকে আসা যানবাহনগুলোর টেকনাফ শহরে প্রবেশ করার জন্য দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই সারি কখনো কখনো দেড়-দুই কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যাচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা শহর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রেও। পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে এই জনস্রোত আর যানবাহনের স্রোত সামাল দিতে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে এসে ঢুকছে, ছুটছে দিক বেদিক। ভেসে চলেছে অজানা অচেনা গন্তব্যে। কেউ টেকনাফ কেউ বা উখিয়ার শরণার্থী শিবিরের দিকে। ওরা জানে না ঠিক কোথায় তাদের গন্তব্য, কোথায় আশ্রয়। কী অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে তাদের জন্য?
বাংলা ইনসাইডার/আরএ/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।