নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২১
দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। আজকের হিসেব অনুযায়ী গড়ে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে আরো খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। এখন ঢাকা শহরে এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে, যেখানে একজন করোনা রোগী নেই। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে তা করোনা মোকাবেলার জন্য অপ্রতুল এবং অপর্যাপ্ত বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের মতে এ দিয়ে করোনার গতি থামানো যাবে না। এসব বিধিনিষেধ আপেক্ষিক। তা প্রতিপালনে যে নজরদারী প্রয়োজন, তা করা সম্ভব হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, লকডাউন ছাড়া বিশ্বের কোন দেশই করোনা মোকাবেলা করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া লকডাউন দিয়েই করোনা প্রতিরোধ করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন সংক্রমণ বা স্টেইন ধরা পরে। এরপর থেকে যুক্তরাজ্যে ধাপে ধাপে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করে। কঠোর লকডাউনের মাধ্যমেই দেশটি এখন করোনাকে অনেকটাই লাগামের মধ্যে আনতে পেরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে করোনা মোকাবেলার জন্য লকডাউনের বিকল্প নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা থেকে বাঁচার উপায় দুরকম। প্রথম লকডাউন দ্বিতীয় স্বাস্থ্য বিধি। স্বাস্থ্য বিধির মধ্যে আছে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মানার আগ্রহ খুবই কম। আজ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হবার পরও দেখা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মানার তাগিদ নেই। এখনও বাজার হাট খোলা, সেখানে মানুষ অবাধে সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। গণ পরিবহনে বিধি নিষেধ করা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা মানা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের অবাধে চলা ফেরা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে, করোনা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে। সরকার সম্ভবত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই, লকডাউনে যেতে চাইছে না। সামনে রোজা এবং ঈদ, এর আগে সব কিছু বন্ধ করে দিলে, অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পরতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পরতে পারে। এরকম আশঙ্কা থেকেই সরকার হয়তো লকডাউনে যেতে আগ্রহী নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে আক্রান্ত বাড়লে, সরকারকে লকডাউন দিতে হবে না, অসুস্থ মানুষ ঘরে কাতড়াবে এতে এমনিতেই লকডাউন হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অন্তত ১৪ দিনের লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা উচিত। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় লকডাউনের বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।