নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৬ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২১
মামুনুলকে নিয়ে টালমাটাল হেফাজত। বিশেষ করে হেফাজতের এই যুগ্ম মহাসচিবের সর্বশেষ ফেসবুক লাইভের বক্তব্য এবং ঝর্ণার ডায়েরি হেফাজতকে বিপর্যস্ত করেছে। হেফাজত এখন কোনোভাবেই মামুনুলকে সমর্থন করতে পারছে না এবং মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নেয়াটা আত্মঘাতী বলে মনে করছেন হেফাজতের প্রায় সব নেতারা। এই পরিস্থিতিতে আই ওয়াশের জন্য হেফাজতের পক্ষ থেকে মামুনুলের ব্যাপারে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হেফাজতের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, মামুনুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো নিয়ে আমরা তদন্ত করবো এবং বিচার করবো। এই বিচারে মামুনুলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে।
হেফাজতের পক্ষ থেকে মামুনুলের বিরুেদ্ধে মোটাদাগে তিনটি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। প্রথমত, এরকম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে যেখানে হেফাজতের কর্মীরা জেলে আছে, কয়েকজন মারা গেছে সেই সময় কি পরিস্থিতিতে কেন তিনি রয়েল রিসোর্টে প্রমোদবিহারে গেলেন?।
দ্বিতীয়ত, তিনি যে নারীকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি কি তার বৈধ স্ত্রী কি না বা বৈধ বিবাহিত স্ত্রী যদি তিনি হন তাহলে বিয়ের কাবিন এবং কাগজপত্র মামুনুলের কাছে চাইবেন।
তৃতীয়ত, তিনি যদি বৈধভাবে বিয়ে করে থাকেন তাহলে তার বিয়ের কথা প্রথম স্ত্রীকে অবহিত করেছেন কি না। প্রথম স্ত্রীকে অবহিত না করে তিনি কেন বিয়ে করেছেন। যে নারীকে নিয়ে তিনি প্রমোদবিহারে গিয়েছিলেন সেই ঝর্ণা বলেছেন যে মামুনুল তাকে বিয়ে করেননি। এই প্রশ্নের উত্তগুলো খুঁজবেন হেফাজতের নেতারা। আর এই বিচারে প্রত্যেকের বক্তব্য শোনা হবে এবং শেষ পর্যন্ত সকলের বক্তব্য নেয়ার পর হেফাজতের আলেম-ওলামারা শরীয়াহ আইন অনুযায়ি মামুনুলের বিচার করবেন।
যদিও হেফাজতের থেকে বলা হয়েছে যে, এই বিষয়টি এখন আর মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয় নেই, এটির সঙ্গে হেফাজতের অস্তিত্ব এবং মান মর্যাদার প্রশ্ন জড়িয়ে গেছে। তাছাড়া কোনো মুসলমান যদি শরীয়াহ বহির্ভূত কাজ করেন বা কাউকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন বা প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এগুলো সবই ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ এর কাজ। প্রশ্ন হলো মামুনুল এটি করেছেন কি না?
হেফাজতের নেতারা বলেছেন মামুনুল যে কথাবার্তা বলেছেন সেগুলো অসংলগ্ন, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং হেফাজতের জন্য বিব্রতকর। কাজেই হেফাজত এখন মামুনুলের ব্যাপারে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকতে চায়। মামুনুল যদি শেষ পর্যন্ত কোনো অনিয়ম অন্যায় করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিও দিতে পারেন। কিন্তু হেফাজতের অন্য নেতারা বলছেন, শাস্তি দেয়ার আগে সকল পক্ষের কথা শোনা হবে।
প্রচলিত আইনের কেন মামুনুলের বিচার হবে না? হেফাজত মামুনুলকে কেন আইনের হাতে তুলে দেবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে হেফাজতের একজন নেতা বলেছেন, হেফাজতের সংগঠনের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতার জন্য বিচারের ব্যবস্থা আছে এবং হেফাজত এই কাজটি অতীতেও করেছে। আমরা সকল পক্ষের বক্তব্য শুনে দেখবো যে মামুনুলের দোষ আছে কি না বা তিনি আদৌও অন্যায় করেছেন কি না। যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে হেফাজতই তাকে শাস্তি দেবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।