নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ পিএম, ১২ অক্টোবর, ২০১৭
ছোট বোনকে কোলে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে ৭ বছরের শিশু ইয়োসা। যে বয়সে পিঠে স্কুল ব্যাগ থাকার কথা, চোখে মুখে উৎসাহ, সে বয়সে চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে নিজের আর ছোট বোনের প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালাতে হচ্ছে তাকে। ইয়োসার মতই বা এর চেয়ে আরও কষ্টের কাহিনী মিয়ানমার থকে পালিয়ে আসা অন্য শিশুদেরও। জীবনের তাগিদে পালিয়ে আসছে ঠিকই, কিন্তু ঝুঁকি কমেনি। অপুষ্টি, রোগ-শোকে কাতর হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে তারা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় পার করছে দিন-রাত।
২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতার পর থেকে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা, যাদের দুই তৃতীয়াংশ শিশু। টেকনাফ, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গা শিশুরা সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তারা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবুনিয়ার নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। প্রতিদিন এত রোগী আসছে যে তারা তাদের নামের তালিকা করার অবকাশ হচ্ছে না। অধিকাংশই পানিবাহিত রোগ, সর্দি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় এড়াতে রোহিঙ্গা শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে এবং জরুরি চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব দেওয়া না হলে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
রোহিঙ্গা শিশুদের ৮৫ ভাগই রোগাক্রান্ত। ঘরে ঘরে নানা ধরনের অসুখ। শরণার্থী শিবিরের পরিবেশ তাঁদের আরও রোগাক্রান্ত ও বিষণ্ন করে তুলছে। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও তারা বিপর্যস্ত।
শরণার্থী শিশু-কিশোরদের তাদের বয়স অনুযায়ী, বয়সের চাহিদা অনুযায়ী স্বাভাবিক কাজকর্ম, বিনোদন, খেলাধুলা, লেখাপড়ার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের মনের চাপ বা সংকট কমিয়ে আনা সম্ভব। এসবের জন্য সম্পদের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটা পরিবেশ তৈরি করা। আর এ জন্যই, রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য এক হাজার ৩০০ শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। কক্সবাজারে এসব শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যেখানে শিশুরা পড়ালেখা করবে এবং করবে খেলাধুলাও।
ইউনিসেফ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৮২টি কেন্দ্রে অন্তত ১৫ হাজার শিশুকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী এক বছরে প্রায় দুই লাখ শিশুকে শিক্ষা দেওয়া হবে বলে টার্গেট করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে ১৫শ কেন্দ্র। শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের জন্য থাকবে মানসিক বিভিন্ন কাউন্সিলিং, স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। শিশুদের কলম, রঙিন পেন্সিল, স্কুল ব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
পরিবার পরিজনকে হারিয়ে, এক অচেনা পরিবেশে এসে পড়েছে এই রোহিঙ্গা শিশুরা। নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বজন হারানোর শোক আর এই দুইয়ে মিলে সৃষ্ট হওয়া বিষণ্ণতা থেকে তাদের মুক্ত করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, অন্তত এক হাজার ৩০০ শিশুকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে যারা বাবা-মা বা কোনো আত্মীয়-স্বজনকে ছাড়াই বাংলাদেশে এসেছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর ধারণা, এসব শিশুর বাবা-মার দুই জনকেই অথবা বাবাকে মিয়ানমারে মেরে ফেলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এসব শিশু কি হবে?
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের হিসেব মতে প্রতিদিনই গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে, যার একটি বড় অংশই শিশু। এদের বেশিরভাগই চরম অপুষ্টিতে ভুগছে আর বাকীরা তীব্র খাদ্য সঙ্কটে আছে। মিয়ানমারের মংডুতে একতৃতীয়াংশ পরিবারই চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। এখানেই এসেও বেশিরভাগেরই একই দশা। ফলে জীবন ঝুঁকি আর মানসিক ট্রমা নিয়ে কষ্টের মাঝেই আছে এই রোহিঙ্গা শিশুরা।
বাংলা ইনসাইডার/আরএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।