নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৩ এএম, ১০ জুন, ২০২১
করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ১৬টি জেলায় সংক্রমণের হার তুলনামূলক দ্রুত বাড়ছে। এগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
রােজার ঈদের পর থেকে সংক্রমণ ও রোগী বৃদ্ধির হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। দুদিন ধরে সংক্রমণ বাড়তির দিকে দেখা যাচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় পর গত মঙ্গলবার (০৮ জুন) দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল বুধবার (০৯ জুন) দৈনিক শনাক্ত আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই দুই দিনই রোগী শনাক্তের হার ১২ শতাংশের ওপরে ছিল। একেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮টি জেলায় আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশের নিচে, আর ১০টি জেলায় এই হার শূন্য দশমিক ১ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে। এর বাইরে বাকি ৩৬ জেলায় রোগী বাড়ছে। এসব জেলায় এক সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ১০০ শতাংশের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবারও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে। ৭ জুন তালিকাটি হালনাগাদ করা হয়। ভারত, পাকিস্তানসহ ৬১টি দেশ আছে এই তালিকায়। এসব দেশে ভ্রমণ একান্ত জরুরি হলে মার্কিন নাগরিকদের আগেই টিকার পূর্ণ ডোজ নিতে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ সময়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি বেড়েছে। সীমান্তের কিছু জেলায় পুরোপুরি বা আংশিক লকডাউন দেওয়া হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৫টি জেলায় ৩১ মে থেকে ৬ জুন—এই এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের (২৪–৩০ মে) তুলনায় রোগী বৃদ্ধির হার ১০০ ভাগ বা তার বেশি ছিল। এগুলোর আটটিই ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা। এর বাইরে আটটি জেলায় রোগী বৃদ্ধির হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। এ ছাড়া মাগুরা, নড়াইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পিরোজপুর ও নোয়াখালীতেও এই সময় রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ কিংবা তার চেয়ে বেশি ছিল।
শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি হারে রোগী বেড়েছে এমন সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রাজশাহী, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি। আর রোগী বৃদ্ধির হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ছিল সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ফেনী, শেরপুর ও কুষ্টিয়া।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ব্যক্তিপর্যায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে শিথিলতার পরিচয় দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার এক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, কোনো জায়গায় শিথিলতার পরিচয় দিলে সেটি ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সীমান্তের কিছু জেলায় লকডাউন ও বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল হলেও আশপাশের জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ লাগোয়া নওগাঁ ও রাজশাহীতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন চারজন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সাতক্ষীরায় গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত বলেন, শুধু চিকিৎসা দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মানুষ সচেতন হচ্ছে না।
কুষ্টিয়ায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু।
খুলনায়ও সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ। সর্বশেষ আট দিনে (১–৮ জুন) এখানে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগের আট দিনে শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।