নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ১১ জুন, ২০২১
চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। বজ্রপাতের হিসাবে নতুন হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালাপুর, নেত্রকোণা ও চট্টগ্রামে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেড়েছে।
শুক্রবার (১১ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টনে সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম-এসএসটিএএফ’ এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসএসটিএএফ জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাসে বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৪৯ ও নারী ২৮ জন। তাদের মধ্যে শিশুর ১৩ জন, কিশোর ৬ ও কিশোরী ৩ জন। মৃত্যুর পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪০ ও নারী ৭ জন।
সামাজিক সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী- গত ৪ মাসে শুধু কৃষিকাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের আঘাতে প্রাণহানি হয়েছে ১২২ জনের। আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছে ১৫ জন। ঘরে অবস্থানকালেও বজ্রপাতে ১০ জন মারা গেছেন। এছাড়া নৌকায় মাছ ধরার সময় ৬ জন, মাঠে গরু আনতে গিয়ে ৫ জন, মাঠে খেলার সময় ৩ জন, বাড়ির আঙিনায় বা উঠানে ৬ জন, ভ্যান/রিকশা চালানোর সময় ২ জন এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানের সময় ১ জনের মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না থাকলেও মার্চ মাসের শেষদিক প্রাণহানির ঘটনা শুরু হয়। চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৫ জন।
সংগঠনটি জানায়, চলতি বছর বজ্রপাতের নতুন হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ। এ জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসেই মারা গেছেন অন্তত ১৮ জন। এছাড়া চলতি বছরের চার মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ জন, জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোণায় ১৩ ও চট্টগ্রামে ১০ জন মারা গেছেন।
সংগঠনের কেস স্টাডি বলছে, গত ৬ জুন বিকেলে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার লোহাচড়া গ্রামে বৃষ্টির সময় বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল আশরাফি খাতুন (১০) ও মহসিনা খাতুন (১২) নামের দুই শিশু। স্থানীয়রা জানান, ওইদিন দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল।
বিকেলে বৃষ্টি শুরু করে। সঙ্গে চলে প্রচণ্ড মেঘের গর্জন। এসময় ওই দুই বোন বাড়ির আঙিনায় বৃষ্টিতে ভিজতে বের হয়। পরে বাড়ির পাশে গাছ থেকে আম পড়ার শব্দ পেয়ে আম কুড়াতে গেলে বজ্রঘাতে শিশু দু’টি মারা যায়। বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় বাড়ির উঠানে বজ্রপাতে তামান্না আক্তার (১৫) ও তার চাচাতো ভাই আল-আমিন (৬) মারা যায়। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির সময় এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার সময় তারা দুইজন বজ্রপাতে আহত হন। তাদেরকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সংগঠনটি জানায়, বজ্রপাতে হতাহতের এ পরিসংখ্যান করা হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি কিছু পরামর্শ তুলে ধরে। সেগুলো হলো—
১. বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদফতর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীদের এসএমএস করে সতর্ক করা যেতে পারে।
২. ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার যতোটা, তার চেয়েও অনেক বেশি মৃত্যুর হার বজ্রপাতে। বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করা হলেও তা মোকাবিলায় বরাদ্দ কম। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৩. মাঠ, হাওর-বাওরে বা ফাঁকা কৃষিকাজের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার ওপরে বজ্র নিরোধক স্থাপন করতে হবে। যেন বজ্রপাতের সময় কৃষক ও শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান বা আশ্রয় নিতে পারেন।
৪. বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সব পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে।
৫. সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে।
৬. বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা/থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।
এসএসটিএএফ-এর সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।
এসময় অন্যদের মধ্যে বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ ড. মুনির আহমেদ, আইডিইবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর রিসার্চ ফেলো মো. মনির হোসেন, এসএসটিএএফ-এর সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, নির্বাহী প্রধান (গবেষণা সেল) আব্দুল আলীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমদাদ হোসাইন মিয়া, নির্বাহী পরিচালক রানা ভূঁইয়া, নূরে আলম জিকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
গাজীপুরে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন ও ওয়াগনের লাইনচ্যুত ১১ বগি উদ্ধারে রাতভর অভিযান চলেছে। এখন পর্যন্ত লাইন থেকে বগি সরানোর কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে চরম শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে ট্রেন। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুক্রবার দুর্ঘটনার পর আজ শনিবার (৪ মে) সকাল পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচল। কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা।
ভোর ৬টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টা পর্যন্ত ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাবে, কোথায় আসবে সেটিই দেয়া হয়নি। ফলে এই ট্রেনটি কখন ছাড়বে জানেন না যাত্রীরা।
একইভাবে ৪ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে ভোর সোয়া ৬টায় কক্সবাজার এক্সপ্রেসের ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি কখন ছেড়ে যাবে তা বলতে পারছেন না কেউ। এখন পর্যন্ত ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসতে পারেনি।
সকাল পৌনে ৭টায় চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখান থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বলা হচ্ছে ট্রেনটি সকাল ৯টায় ছেড়ে যাবে। কিন্তু ৮টা পর্যন্ত ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাবে, কোথায় আসবে সেটিই দেয়া হয়নি। জানা গেছে, ট্রেনটি এখনও ঢাকায়ই আসতে পারেনি।
সকাল সোয়া ৭টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটির প্ল্যাটফর্ম জানানো হয়নি। যদিও স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর ছাড়বে।
এমন অবস্থায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে, আজ সারাদিন উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনেরই ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয় হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাতভর উদ্ধার অভিযানের পর সকাল থেকে আবারও লাইনের ওপর থেকে ক্রেন দিয়ে বেঁধে একে একে সরানো হচ্ছে বগি। টাঙ্গাইল কম্পিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনের দুটি অংশ ও তেলবাহী ট্রেনের দুটি ওয়াগন এখনো লাইনের ওপর পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাঙ্গাইল কম্পিউটারের ইঞ্জিন ও তেলবাহী ওয়াগান সরানো গেলেই শুরু হবে লাইন মেরামতের কাজ।
শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল থেকে একটি কমিউটার ট্রেন ঢাকায় ফিরছিল। পথে জয়দেবপুর জংশনে পৌঁছালে একই লাইনে ঢাকা থেকে আসা দাঁড়িয়ে থাকা তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যায় বগি। ঘটনাস্থল থেকে দুই লোকোমাস্টারসহ চারজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালে। দুই রেলের ইঞ্জিনসহ ১১টি বগি লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন
তাপদাহ হাঁসফাঁস করছে মানুষ। স্বস্থি পেতে ব্যাবহার করছে এসি। এসিতে মানুষকে একটু হলে স্বস্তি দিচ্ছে। তবে এই আরামও আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যদি দীর্ঘ সময় এসিতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদিন এসিতে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীরে।
শ্বাসকষ্ট
যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তারা এসিতে থাকার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। কারণ অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় এসি রুমে থাকার কারণে শ্বাসকষ্ট বা খুশখুশে কাশি দেখা যায়। সেইসঙ্গে গলা শুকিয়ে আসা, চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই আগেভাগেই হতে হবে সতর্ক। অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় এসিতে থাকার ফলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহের সমস্যাও হতে পারে এই অভ্যাসের ফলে।
পানি শূন্যতা
গরমের সময় যেকোনোভাবে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসি থাকলে আপনার শরীর বেশি আর্দ্রতা শোষণ করবে। যে কারণে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়ার ভয় থাকে। তাই এসিতে থাকলেও আপনাকে একটু পর পর পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।
মাথাব্যথা
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় এসিতে থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে অনেকের ক্ষেত্রেই। তবে শুধু মাইগ্রেন নয়, সেইসঙ্গে যেকোনো ধরনের মাথাব্যথাই বেড়ে যেতে পারে এই অভ্যাসের কারণে। ঠান্ডাজনিত অসুখের কারণে মাথা ব্যথার প্রকোপও দেখা যায়। তাই এসি রুমে থাকার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন।
ত্বকের সমস্যা
তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় এসিতে থাকলে ত্বকের ওপর প্রভাব পড়ে। কারণ এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। অনেক সময় ত্বক ফেটে গিয়ে চুলকানি দেখা দিতে পারে। আবার রোদ ও এসির ঠান্ডা এই দুইয়ের মাঝে আমাদের ত্বক অনেক সময় খাপ খাওয়াতে পারে না। যে কারণে ত্বকে দেখা দেয় অনেক ধরনের সমস্যা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।