নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৮ জুন, ২০২১
টানা ১২ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। এই ১২ বছরে দেশ অসাধারণ উন্নতি করেছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় গিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতকে অতিক্রম করেছে। সব সূচকে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে। বিশেষ করে করোনার সময় যে দেশগুলো করোনা মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হবে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে বাংলাদেশে দৃশ্যমান মেগা প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের মত প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক স্মারকচিহ্ন বটে।
এই অবস্থায় বাংলাদেশে বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি যখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বা গোপনে আন্দোলন করতে পারছে না তখন তারা এক ধরনের নোংরা সাইবার যুদ্ধে নেমেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করছে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে লাগাতার সরকারবিরোধী নোংরা, কুৎসিত এবং মিথ্যা অপপ্রচার করছে। আর এই সমস্ত অপপ্রচার এমন পর্যায়ে চলছে যে এটিকে অনেক বিশেষজ্ঞরা সাইবার ওয়ার হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আর এই অপপ্রচার যে শুধু সরকার বা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা হচ্ছে তা নয়, এই সমস্ত অপপ্রচারগুলো করা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে যারা চায়নি, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এই সমস্ত নোংরা খেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, লন্ডন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা থেকে মূলত এই সাইবার যুদ্ধ চলছে। লন্ডনের একাধিক ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারের বিরুদ্ধে বানোয়াট এবং মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। যারা করছে তারা সকলেই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী এবং বিএনপি-জামায়াতের অনুগ্রহ পুষ্ট। লন্ডন থেকে বহিষ্কৃত একজন সেনা কর্মকর্তা যার নাম শহীদ উদ্দিন, তিনি নোংরা, কুৎসিত এবং মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচারের জন্য ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছেন। এছাড়াও আরেকজন স্বাধীনতাবিরোধী বুদ্ধিজীবী তাজ হাশমী বাংলাদেশ সরকার বিরোধী অপপ্রচারের অন্যতম একজন ব্যক্তি বলে জানা গেছে। কনক সরওয়ার বলে জামায়াত পন্থী এক সাংবাদিক, তিনি তার একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে মিথ্যার বেসাতি ছড়ানো হচ্ছে এবং সেই মিথ্যা এতই নিম্নমানের এবং অরুচিকর যে এখন এসমস্ত ইউটিউব চ্যানেলগুলো পর্নোগ্রাফিকেও হার মানিয়েছে। কানাডা থেকে নাগরিক টিভি বলে একটি টেলিভিশনের প্রধান কাজ হল সরকারবিরোধী অপপ্রচার করা এবং যারা সরকারের ঘনিষ্ঠ, যারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকে টার্গেট করে এই সমস্ত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নাগরিক টিভিতে বিভিন্ন রকম টকশো আর মিথ্যাচারের মাধ্যমে মূলত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকেই পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হচ্ছে। সুইডেনের নেত্র নিউজ এর মাধ্যমে ডেভিড বার্গম্যান এবং তাসনিম খলিল সরাসরি সরকারবিরোধী অপপ্রচার করছে এবং এই অপপ্রচারের মাত্রা এতটাই ভয়ঙ্কর যে এই সমস্ত কথাবার্তাগুলো যেকোনো বিচারে ন্যূনতম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রীতিনীতির পরিপন্থী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশ সরকার, বিটিআরসি এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই সমস্ত অপরাধী এবং সাইবার ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সমস্ত অপপ্রচার বন্ধে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।