নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ এএম, ০৫ নভেম্বর, ২০১৭
আর্সেনিক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এক বিষ। এর কোনো রং, গন্ধ ও স্বাদ নেই। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রো গ্রামের কম হলে সেটি নিরাপদ। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এটি দশ মাইক্রো গ্রামের কম হতে হবে। উল্লেখ্য, দেশে পানিদূষণের সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সাধারণভাবে জীবাণু দূষিত পানির বিপত্তি তো আমাদের সবসময়ই ছিল। এর সঙ্গে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার সমস্যা যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, এই সংখ্যাটি পাঁচ কোটি সত্তুর লক্ষের মতো। উদ্বেগের ব্যাপার হল এ সব মানুষ যেই পানি পান ও ব্যবহার করেন, তাতে আর্সেনিকের পরিমাণ প্রতিলিটারে পঞ্চাশ মাইক্রোগ্রাম মাত্রার অধিক। অথচ পানিতে প্রতি লিটারে দশ মাইক্রোগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই ব্যাপারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। আর্সেনিক দূষণের কারণটি ভূতাত্তি¡ক। তবে এই ব্যাপারেও রয়েছে দুটি মত।
একটি মত অনুসারে, অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভূ-অভ্যন্তরে অক্সিজেন প্রবেশ করে। ফলে পানিবাহী শিলাস্তরের আর্সেনিক পাইরাইট জারিত হয়ে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক তরল অবস্থায় মিশে যায়। অন্য একটি মতে, প্রক্রিয়াটি বদ্বীপ ও নদীবাহিত সমভূমির পলি সঞ্চয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ গাঙ্গেয় বদ্বীপের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আর্সেনিক দূষণের জন্য দায়ী। তাই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আর্সেনিকের প্রকোপ অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে কম হবার কথা থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। একসময় বিশুদ্ধ পানির উৎস হিসাবে নলকূপের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছিল। তখন প্রকল্প করে লক্ষ লক্ষ নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু আর্সেনিক দূষণের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার কারণে বর্তমানে পুরাতন পদ্ধতিতেই ফিরে যাবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ভূ-উপরিভাগের পানিকে পরিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। যদিও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক না থাকলেও তা সংরক্ষণ করে ব্যবহার উপযোগী রাখা নিঃসন্দেহে একটি ঝামেলাপূর্ণ ব্যাপার। এই জন্য অধিকাংশ মানুষই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করেন। অগভীর নলকূপের তুলনায় গভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের প্রকোপ সামান্য। তাছাড়া নদী-নালা-পুকুরের পানি কাজে লাগিয়েও আমরা আর্সেনিক দূষণ হতে প্রতিকার লাভ করতে পারি।
এই জন্য ভূগর্ভের উপরিভাগের পানিকে যথাযথভাবে বিশুদ্ধ করবার উপায় আয়ত্ত করা জরুরী। চার চেম্বারের আর্সেনিক নিরোধক ফিল্টার এবং রজন পদ্ধতি ব্যবহার করেও পানিকে আর্সেনিক মুক্ত করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে অল্প কিছু মানুষই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আর্সেনিকের ব্যাপকতার বিবেচনায় এটা সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা জরুরি। প্রয়োজন রয়েছে আর্সেনিক পরীক্ষার কিট সহজলভ্য করবারও। কেননা, বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে পানি আর্সেনিকমুক্ত হল কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের বেশির ভাগ এলাকার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। আর্সেনিক রয়েছে এমন টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ আর্সেনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে যারা আর্সেনিক দূষণের নেতিবাচক প্রভাব দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর্সেনিক কিংবা লোহা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর্সেনিক হতে আর্সেনোকোসিস রোগ ছাড়াও ক্যান্সার হবার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া পানিতে মিশ্রিত এই অবাঞ্ছিত পদার্থগুলি কিডনি, লিভার এবং হার্টের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সম্মিলিত ভাবে এই দূষণ রোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে,আর্সেনিকের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি মোকাবিলায় এখনই সতর্ক হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগ। তবেই আর্সেনিক ঝুঁকি থেকে রেহাই পেতে পারে বাংলাদেশের আমজনতা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।