নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। আজ করোনায় নতুন শনাক্ত ৮১৮ জন। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মারা গেছে ২৫ জন। সার্বিকভাবেই দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। লকডাউন নামের আতঙ্ক থেকেও এখন মুক্ত মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই সাধারণ জ্বর-সর্দির মত হয়ে গেছে। টিকাকরণই করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ বলে জানিয়েছিলেন সমস্ত চিকিৎসক গবেষকরা।
অক্সফোর্ডের মেডিসিনের এক অধ্যাপক বলেছেন, টিকাকরণের হাত ধরেই আসবে সম্পূর্ণ করোনা মুক্তি এবং আগামী বছরের মধ্যেই সর্দি-কাশির মতোই একটি সাধারণ রোগে পরিণত হবে করোনা। এর সাথে সুর মিলিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক স্যার জন বেল একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভাইরাসটি আগামী বছরের বসন্তকালের মধ্যেই সাধারণ জ্বর-সর্দির মতো একটি রোগে পরিণত হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের এই মতামতের কিছুটা চিত্র এখনই পরিলক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশেই। ঋতু পরিবর্তনের পাশাপাশি ডেঙ্গু সহ নানান ধরণের জ্বরে এখন আক্রান্ত বাংলাদেশের মানুষ। সেই সাথে রয়েছে করোনার প্রভাব তবে তা এখন শুরুর দিকের মত খুব বেশি ভয়াবহ নয়। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের এখন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে করোনার প্রতিরোধ এখন বেড়েছে। যদিও করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পরও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায় তাই বিশেষজ্ঞরা তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা জানিয়েছেন।
করোনা প্রকোপের শুরু থেকেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ছিল অনেক বেশি। যদিও সরকার, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হয়েছে, পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্যও করেছে। তারপরও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেছে হরহামেশাই। এখন করোনার সংক্রমণ সহনশীল, নেই লকডাউন কিংবা কঠোর বিধিনিষেধ। সেই সাথে এখন নেই স্বাস্থ্যবিধিও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সাথে লকডাউন মুক্ত হলো বাংলাদেশ। লকডাউন মুক্ত বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্যবিধি অনেকটাই উপেক্ষিত। বিশেষ করে গণপরিহন, হাট-বাজার, মার্কেট, রাস্তাঘাট, পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানেই এখন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মাস্ক পরিধান করছেন না অধিকাংশই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাথে আসা অভিভাবকরাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। শিক্ষার্থীরা থুঁতনিতে মাস্ক রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে রাস্তার উপর থাকা বিভিন্ন খোলা খাবার খাচ্ছে। সার্বিকভাবেই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার সচেতনতা নেই মানুষের মধ্যে।
করোনার প্রকোপ কমে যাওয়া কিংবা টিকার আওতায় চলে আসা যেটাই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার কারণ হোক না কেন করোনার তৃতীয় ঢেউ আসলে সেটি স্বাস্থ্যখাতের বড় ধরণের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।