ইনসাইড ইকোনমি

ভারতীয় মালাবার দেশে আসলে বেকার হবে লক্ষাধিক শ্রমিক

প্রকাশ: ০৩:০৪ পিএম, ০২ এপ্রিল, ২০২২


Thumbnail ভারতীয় মালাবার দেশে আসলে বেকার হবে লক্ষাধিক শ্রমিক

ভারতীয় কোম্পানি মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড'স বাংলাদেশে ব্যবসা করার খবরে বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বিশেষ করে স্বর্ণ কারিগর ও কারখানার মালিকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মালাবার বাংলাদেশে রেডিমেড গহনা এনে ব্যবসা করলে কর্মহারা হবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক সোনার কারিগর। বন্ধ হয়ে যাবে শত বছরেরও পুরনো সব গহনা তৈরির কারখানা। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী গহনা রফতানির সম্ভাবনাও ভেস্তে যাবে।

জানা গেছে, মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড'স চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ঘোষণা দেয়। দুবাইয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির মুল ব্যবসায়িক কার্যালয় হলেও মূলত এ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি করা সোনার গহনা বাংলাদেশের বাজারে আনবে বলে জানায়। দুবাইয়ের মুভেনপিক গ্র্যান্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত ফোরামে এ ঘোষণা দেয় মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের অর্থ ও প্রশাসনের পরিচালক আমীর সিএমসি।

মালাবারের এমন ঘোষণার পরই আতংকিত হয়ে পড়েন দেশের সোনার কারিগর ও কারখানার মালিকরা। তারা জানান, মূলত এ দেশের স্বর্ণ চোরাচালানি চক্র ও স্বর্ণ শিল্প ধ্বংসের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িতরাই মালাবারকে বাংলাদেশে আনতে ইন্ধন দিচ্ছে। দেশের স্বর্ণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রফতানিমুখী করতে মালাবারের বাংলাদেশে আসা যে কোন মূল্যে ঠেকানোরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দিনেশ চন্দ্র পাল এ বিষয়ে বলেন, একটি অসাধু চক্র বিদেশী রেডিমেড গহনা দেশে আনার চোরাচালানি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই চায় বিদেশী রেডিমেড গহনা উৎপাদনকারী বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করুক। এই চক্রটি চায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় স্বর্ণ শিল্প ধ্বংস হোক। এখন তারা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মালাবারকে বাংলাদেশে আনার চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদেশ থেকে রেডিমেড গহনা আসায় দেশী কারিগররা কাজ পায় না। এ জন্য সোনার কারিগররা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

দিনেশ চন্দ্র পাল বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েছি, যাতে করে রেডিমেড গহনা আনা বন্ধ হয়। আমরা বার বার সরকারকে অনুরোধ করেছি গার্মেন্টসের পরই যেন দেশের স্বর্ণ শিল্প প্রধান রফতানি পণ্য হয় সে সুযোগ করে দিতে। কিন্তু সরকার থেকে এ বিষয়ে কোন সাড়া নেই। অথচ আমাদের কারিগরদের তৈরি করা গহনার বিদেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে। এখানকার কারিগরদের হাতে তৈরি গহনার ফিনিশিং ও সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

দিনেশ চন্দ্র পাল বলেন, এখন সময় এসেছে দেশের স্বর্ণ শিল্পের বিকাশে সরকারের সহযোগিতা করার। সরকার থেকে কাঁচামাল বা আমাদেরকে কাঁচামাল আনার সুযোগ দিলে দেশে গহনা তৈরি করে রফতানি করা সম্ভব। বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আমরাই সরকারকে এনে দিব। তিনি বলেন মালাবার অন্য কোন বিদেশী বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করুক আমরা তা চাইনা। এটা করা হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এদেশের লক্ষাধিক সোনার কারিগর বেকার হয়ে যাবে। বিদেশী কোম্পানির ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ গহনা আমদানি ঠেকাতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘের সিনিয়র সহ সভাপতি শংকর বসাক বলেন, বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠান রেডিমেড গহনা নিয়ে যদি এ দেশে আসে তাহলে দেশের স্বর্ণ শিল্প শেষ হয়ে যাবে । এমন উদ্যোগ থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশী কোন গহনা দেশে আনা যাবে না। কারণ আমাদের কারিগরদের হাতে তৈরি গহনার বিদেশে অনেক চাহিদা আছে। তারপরও বর্তমানে কাজের অভাবে আমাদের কারিগররা ভারতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। কারণ ভারত সোনা রফতানি করে। ভারত সরকারও প্রচুর রেভিনিউ পায় এ খাত থেকে। বিদেশী কোম্পানিকে সুযোগ না দিয়ে দেশের কারিগরের তৈরি সোনার অলংকার রফতানির সুযোগ দিলে আমাদের সরকারেরও বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ আয়ের সুযোগ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শংকর বসাক বলেন, বিদেশী কোম্পানিকে ও বিদেশী গহনা আমদানি ঠেকান। নতুবা এ দেশের স্বর্ণ শিল্পীরা না খেয়ে মারা যাবে। সেই সঙ্গে দেশের রফতানিমুখী সম্ভাবনাময় এ শিল্প খাতটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘের সভাপতি ও বাজুসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গঙ্গাচরন মালাকার বলেন, সারা বিশ্বের  স্বর্ণ রফতানির প্রধান বাজার হলো দুবাই। সেখানে সব দেশের শো-রুম আছে। নেই শুধু বাংলাদেশের। আমরা যত দিন সোনার গহনা রফতানিতে না যাব তত দিন এ শিল্পের সাফল্য আসবে না। সরকারের রফতানি আয়ও বাড়বে না। সরকার এদেশে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে এনে ব্যবসার সুযোগ না দিয়ে আমাদের তৈরি করা গহনা রফতানির সুযোগ করে দিক। আমরা গার্মেন্টসের চেয়ে বেশি রফতানি আয় এনে দিব সরকারকে। তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত সারা বিশ্বের সোনার গহনার মোট প্রায় ৭৫ শতাংশ রফতানি করে। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশী কারিগরদের কারণে। বাংলাদেশ থেকে তারা হাজার হাজার কারিগর নিয়ে গেছে। অথচ এই কারিগরগুলোর উৎপাদিত সোনার গহনা আমরাই রফতানি করতে পারতাম।

গঙ্গাচরন মালাকার বলেন, বর্তমানে ইতালি, তুরস্ক ও ইন্ডিয়া মেশিনে সোনার গহনা উৎপাদন করলেও আমাদের দেশে তৈরি অলংকারই সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা। এত সূক্ষ্ম ও হালকা ওজনের গহনার পৃথিবীর কেউ বানাতে পারে না। তারপরও বিদেশী গহনা আমদানির কারণে আমাদের সোনার কারিগররা এখন অটো রিক্সা চালিয়েও জীবিকা নির্বাহ করে। এখন যদি মালাবার বাংলাদেশে আসে তাহলে লাখের অধিক কারিগর বেকার হয়ে যাবে । সরকার তাদের কর্মসংস্থান করবে কিভাবে? সুতরাং এদেশের স্বর্ণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা মালাবারকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে দিবে না।

বাংলাদেশের গহনা সারা বিশ্বে রফতানির সুযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একাধিক বার উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সরকার থেকে সাড়া পাই না। এখন বসুন্ধরা গ্রুপ যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের উচিত একে পৃষ্ঠপোষকতা করে বড় করতে দেওয়া।

সরজমিনে রাজধানীর তাঁতিবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ভবনের ছোট-বড় কারখানাগুলো টুক টুক শব্দে গহনা বানানোতে ব্যস্ত কারিগররা। সেই সঙ্গে কপালে চিন্তার ভাজ। মালাবার বাংলাদেশে আসা খবরে বেকার হওয়ার আতংকে চিন্তিত আনন্দ গোল্ড ওয়ার্কশপের কারিগর ও মহাজন ৬৫ বছর বয়স্ক মদন পালকে বলা হয় তাঁতি বাজারের সবচেয়ে বয়স্ক ও সিনিয়র কারিগর। প্রায় ৪৫ বছর ধরে সোনার বালা বানিয়ে আসা এ কারিগর বলেন, এই শিল্পের এখন আর সুদিন নেই। কারণ বিদেশী রেডিমেড গহনা দেদারছে আসে। আগে তাঁতি বাজারে কারিগরদের জন্য হাটা যেত না। এখন তাঁতি বাজার ফাঁকা পড়ে আছে। গত কয়েকদিন শুনতেছি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মালাবার রেডিমেড গহনা এনে এ দেশে বিক্রি করবে। এটা হলে আমরা সবাই বেকার হয়ে যাব।

তিনি বলেন, এ শিল্পের অনেক কারিগর ভারত আগেই নিয়ে গেছে। তারপরও আমারা এটি ধরে রেখেছি। এখন ভারত বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশী কারিগররা আট আনায় যে গহনা তৈরি করতে পারে ভারতে সেটা করতে প্রায় দেড় ভরি সোনা লাগে। এজন্য ভারতের ঈর্ষা হয়। বিদেশী ক্রেতারাও বাংলাদেশী গহনা কিনতে চান। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের অভাবে আমাদের গহনা রফতানি করা সম্ভব হয় না।

মা গোল্ড হাউজ কারখানার মহাজন ও কারিগর সুধীর কুমার পাল বলেন, একজন কারিগরের ৩ থেকে ৪ বছর সময় নিয়ে গহনা তৈরির কাজ শিখে। এই শিল্পে দেশ জুড়ে লাখের অধিক শ্রমিক আছে।

তিনি বলেন, বিদেশী প্রতিষ্ঠান মালাবার বাংলাদেশে আসলে এই লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। আমাদের কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেই চোরাচালানে আসা রেডিমেড গহনার কারণে দেশের কারিগররা কাজ পায় না। তার উপর বিদেশি এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে আসলে দেশের স্বর্ণ শিল্প একেবারে মরে যাবে। কারিগরদের ও দেশের স্বর্ণ শিল্প বাঁচাতে হলে বিদেশী রেডিমেড গহনা দেশে না আনতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। 

সুদীর পাল বলেন, বিদেশী কোম্পানির বাংলাদেশে আসা ঠেকাতে প্রয়োজনে সারাদেশের সব স্বর্ণ কারিগররা আন্দোলনে মাঠে নামবে।

তাঁতি বাজারের আরেক কারিগর পলাশ মালাকার আমিন জুয়েলার্সের জন্য গহনা তৈরি করেন জানিয়ে বলেন, এ শিল্প এখন ভাল নেই। বিদেশ থেকে রেডিমেড গহনা আসায় কাজের চাপ কম। পুরো মাস কাজ করতে পারলে দিন পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ভাল থাকতে পারি। না হলে সংসার চালাতে হিমশিম খাই। বিদেশী প্রতিষ্ঠান দেশে রেডিমেড গহনা এনে বিক্রি করলে পুরোপুরি বেকার হয়ে যাব।

তাঁতিবাজারের সোনার কারিগর প্রকাশ বর্মন বলেন, আমাদের হাতে তৈরি করা গহনার বিদেশে অনেক চাহিদা আছে। সরকারীভাবে এ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে দেশীয় কারিগরদের তৈরি করা গহনা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। তাই আমরা চাই সরকার কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে এদেশে আসার সুযোগ না দিক।

সন্দীপ জুয়েলারি ওয়ার্কশপের মহাজন ও কারিগর বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, আমার কারাখানার আপন জুয়েলার্সের গহনা তৈরি করা হয়। এই কারখানায় শ্রমিক কমতে কমতে  এখন মাত্র ৩ জন আছে। তারপরও কাজ নেই। মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ থাকে। অর্ধেক মাসের আয় দিয়েতো পুরো মাস পরিবার নিয়ে চলে না। তাই এই শিল্প ছাড়ছে কারিগররা।

বাংলাদেশ ছেড়ে কারিগররা ভারত চলে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে যে কোন মূল্যে বিদেশী রেডিমেড গহনা দেশে আনা বন্ধ করে দেশী কারিগরের বানানো গহনাকে সুবিধা দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশী কারিগরের তৈরি করা গহনার বিদেশীদের কাছে অনেক চাহিদা আছে। সরকার থেকে সুযোগ করে দেওয়া হলে আমাদের তৈরি গহনা রফতানি করে দেশ উন্নত হবে। আমরাও ভাল থাকবো।

তাঁতিবাজারের সোনার কারিগর আফজাল তালুকদার ২০০২ সালে থেকে গহনা তৈরির কাজ করছেন জানিয়ে বলেন, বর্তমানে এ শিল্পের শ্রমিকরা ভাল নেই। কারণ দেশের বাজারে বিদেশী রেডিমেড গহনা ব্যাপক হারে ঢুকে। এ অবস্থায় বিদেশী প্রতিষ্ঠান দেশে আসলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

স্বর্ণ   বসুন্ধরা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

রফতানির তথ্য সঠিক, নাকি ফোলানো-ফাঁপানো

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। পণ্য রফতানি বাবদ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অর্থপ্রাপ্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে ঘোষিত রফতানি ও অর্থপ্রাপ্তির পার্থক্য প্রায় ৮৫৮ কোটি ডলার বা ৩১ শতাংশের কিছু বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান থেকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে। তবে রফতানিকারকরা বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য সংকলন ব্যবস্থার ত্রুটিতে ফোলানো-ফাঁপানো রফতানি পরিসংখ্যান প্রকাশ হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের কাছে রফতানিকারকের দেওয়া প্রকৃত তথ্য থাকলেও ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিওপি) হিসাব করতে গিয়ে তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন ইপিবি প্রকাশিত তথ্য। এতে রফতানি ও এর বিপরীতে অর্থপ্রাপ্তির তথ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা দিচ্ছে। 

রফতানিকারকদের দাবি, হিসাব সংকলন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অর্থ পাচারের সন্দেহ ও অভিযোগের শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়া এ ত্রুটি জাতীয় আর্থিক হিসাবের তথ্য নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। 

দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বড় অংকের ঘাটতি দেখা গেছে। এ ঘাটতি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) আরো স্ফীত হয়েছে। এতে বড় ভূমিকা রাখছে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত রফতানির বড় অংকের অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার কারণেই ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি বাড়ছে, যা প্রকারান্তরে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকেও বাড়িয়ে তুলছে। জুলাই-মার্চ সময়ে নিট ট্রেড ঘাটতির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। 

রফতানির অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ইপিবি বলছে, তারা এনবিআর তথা কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করছে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে দেখা গেল, এ দুই সংস্থার তথ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইএক্সপির (রফতানির ঘোষণা) তথ্য আছে, সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে ইপিবির তথ্যকে ভিত্তি ধরলে রফতানির তথ্যে বড় পার্থক্য থেকে যাচ্ছে।

পোশাক রফতানিকারকদের ভাষ্য হলো নানা কারণে অর্থ প্রত্যাবাসন না হতে পারে। যেমন কোনো কোনো ক্ষেত্রে শর্তই হলো অর্থ পরিশোধ হবে ছয় মাস পর। কোনো অর্থ যদি নির্ধারিত সময়ে না আসে, সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় শেষে রফতানিকারক বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশ বোর্ডে রেড মার্কড হয়ে যাবেন। পরদিন থেকে কোনো ব্যাংকই ওই রফতানিকারকের কার্যক্রমে হাত দেবে না। 

এ পরিস্থিতিতে কেউ যদি অর্থ প্রত্যাবাসন না করে থাকে, তাহলে সেই রফতানিকারকের কার্যক্রম চলমান রয়েছে কীভাবে বলে প্রশ্ন তুলছেন তারা। 

বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রকাশিত রফতানি তথ্যের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু এখন আগের মতোই তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। যে কোনো কথা বলতে গেলে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কথা বলা উচিত। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। যে তথ্য দেয়া হয় সেটা যে একতরফা তথ্য, সেটা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, রফতানি তথ্যের পার্থক্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিক কারণ রয়েছে। প্রকৃত রফতানি তথ্য নিশ্চিতে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত চিত্র তুলে আনলেই পার্থক্যের যথার্থ কারণ বেরিয়ে আসবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ: ১০:২৮ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। দেশটির এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে লেনদেনে নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নীতি চালু রয়েছে। এর ফলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুয়া (ফেক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। মঙ্গলবার দেশটির এক সংবাদপত্রে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টির সত্যতা জানতে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটির সত্যতা নাকচ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। ১৬ মার্চ মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে।

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে অপরাধীরা। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলে যাওয়া দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরি   বাংলাদেশ ব্যাংক   নিউইয়র্ক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

দুর্বল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করতে হবে: সাদিক আহমেদ

প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদিক আহমেদ। 

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগপর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।

সাদিক আহমেদ বলেন, এ সময় পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতি (ব্যাসেল ৩ নিয়মের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত) পূরণ করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।

বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে। এটা বড় ধরনের চাপ।

সাদিক আহমেদের মতে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হচ্ছে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন। তিনি বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।

পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না। এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কোনো উদ্যোগই কাজ করেনি।

দুর্বল ব্যাংক   ঋণ খেলাপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনৈতিক সংকট কাটবে কীভাবে?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বাজারে তীব্র ডলার সংকট। সবকিছু মিলিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মত বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠাটাই এখন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়নের কিছু কম। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর মার্চ-এপ্রিল মাসে দায় মেটানোর পর মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতিতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার বা ১৮.৩২ বিলিয়ন। প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৬৩ কোটি ডলার। এর ফলে রিজার্ভ কমে যায়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। যদিও এখন তা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে।

এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়েছে এবং তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ অতিক্রম করছে। এই অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বাজারে ডলারের দাম এ লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে এখন ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের জন্য হাহাকার ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে আমদানির ক্ষেত্রে। এই রকম অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে এক ধরনের কৃচ্ছতা সাধন এবং সংকোচন নীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ডলারের মূল্য ৭ টাকা বৃদ্ধির ফলে এখন প্রবাসী আয় বাড়বে। এই মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। তাছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপারেও তারা আশাবাদী।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনা করছেন এবং সেই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। যে সমস্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি বাণিজ্য রয়েছে, যেমন- ভারত, চীন; সেগুলোতে ডলারের পরিবর্তে সে দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে সরকার মনে করছে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি চলছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ধরনের ব্যবস্থাগুলোর সুফল আগামী অর্থবছরে পাওয়া যাবে।


ডলার   বাংলাদেশ ব্যাংক   অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ   আইএমএফ   রিজার্ভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোমল পানীয়র করভার বাড়ার সম্ভবনা

প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজের বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর (টার্নওভার ট্যাক্স) ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এই হার চলতি অর্থবছরের বাজেটেও প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। পরে কোম্পানিগুলোর দাবিতে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এই করহার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৫ শতাংশ করহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরেও এই প্রস্তাব ছিল আয়কর বিভাগের। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে এই করহার ৫ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অর্থাৎ রোববার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে এই করহারের বিষয়ে সায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাজেটের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশের পানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কোমল পানীয়ের খাত থেকে বর্তমানে জাতীয় কোষাগারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসে। প্রস্তাবিত টার্নওভার কর বেড়ে যাওয়ার সরাসরি ফলাফল হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। 


কোমল পানীয়   করভার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন