ইনসাইড ইকোনমি

ডাচ্-বাংলাকে হটিয়ে দেশসেরা ব্যাংক ইস্টার্ন, দ্বিতীয় অবস্থানে সিটি

প্রকাশ: ০১:০৩ পিএম, ০৪ জুলাই, ২০২২


Thumbnail ডাচ্-বাংলাকে হটিয়ে দেশসেরা ব্যাংক ইস্টার্ন, দ্বিতীয় অবস্থানে সিটি

গোটা বিশ্বেই একটি ব্যাংকের সক্ষমতা, পারফরম্যান্স ও প্রকৃত পরিস্থিতির চিত্র বিশ্লেষণে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড বা নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে সম্পদের বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন অ্যাসেট বা আরওএ), শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন ইকুইটি বা আরওই), শ্রেণীকৃত ঋণ (এনপিএল) অনুপাত, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস), মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি রেশিও বা সিএআর) ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা (ওপিবি)। আগের বছরগুলোয় শেয়ারপ্রতি আয়কে (ইপিএস) সেরা ব্যাংক নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে ২০২০ সাল থেকেই ইপিএসের পরিবর্তে কর-পরবর্তী নিট মুনাফাকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। 

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক নিয়ে ২০১৩ সালে প্রথম সেরা ব্যাংক নির্বাচন করে বণিক বার্তা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা দশম র‍্যাংকিং তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে তারা বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সাতটি নির্দেশকে স্কোরিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এবারের র‍্যাংকিংয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টির প্রাপ্ত স্কোর বেড়েছে। কমেছে ১০টি ব্যাংকের। গত বছরের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এবার তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। শীর্ষে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)। গত বছর তৃতীয় স্থানে থাকা দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। তবে শীর্ষ তিন ব্যাংকেরই প্রাপ্ত নম্বর ৩৫-এর ঘরে। ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।

ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ছাড়, কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঊর্ধ্বগতি ও আমানতের নিম্ন সুদহারের কারণে ২০২১ সালে অধিকাংশ ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছে। অবশ্য ঋণ শ্রেণীকরণে নীতি ছাড় সত্ত্বেও বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। নীতি ছাড় উঠিয়ে নেয়ার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি এড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরো দক্ষতার সঙ্গে তাদের ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অধিকন্তু উচ্চমূল্যস্ফীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রক্ষণশীল মুদ্রানীতির কারণে স্প্রেডের (আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য) ওপর চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাত নির্দেশকের ভিত্তিতে তৈরি এ র‍্যাংকিংয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইবিএল, দ্য সিটি ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। এর আগে ২০২০ সালের পারফরম্যান্স নিয়ে গত বছর করা র‍্যাংকিংয়েও ব্যাংকগুলো শীর্ষ তিনে ছিল। এবারের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়া অন্য ব্যাংকগুলো হলো ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) লিমিটেড।

নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদে পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা এবারের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ তিনের মধ্যে রয়েছে ইবিএল, সিটি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। গত বছর প্রকাশিত র‍্যাংকিংয়ে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ইবিএল, ডাচ্-বাংলা ও সিটি ব্যাংক।

দুই বছরের র‍্যাংকিং উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় এবারের র‍্যাংকিংয়ে সার্বিক স্কোর বেড়েছে ২০টি ব্যাংকের। এগুলো হলো ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এমটিবি, এনসিসি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, আইএফআইসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এবি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

অন্যদিকে স্কোর হ্রাস পাওয়া ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক (এনবিএল) ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।

২০২০ সালের র‍্যাংকিংয়ে সাতটি সূচকের মধ্যে ছয়টিতেই প্রথম স্থান অর্জন করে শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে নিজের অবস্থান খুইয়েছে ব্যাংকটি। ২০২১ সালের র‍্যাংকিংয়ে দেশসেরা ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ৭০-এর স্কেলে ব্যাংকটির স্কোর ৩৫ দশমিক ৬৫। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে দ্য সিটি ব্যাংক। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক নেমে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকের স্কোর ৩৫ দশমিক ৬১ আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৩৫ দশমিক ১৫।

তবে ৭০ ও ৫০ উভয় স্কেলেই শীর্ষস্থান পাওয়া ইস্টার্ন ব্যাংকের স্কোর ২০২০ সালের তুলনায় খুব বেশি বাড়েনি। বরং ৫০-এর স্কেলে ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ২০২০ সালে ৫০-এর স্কেলে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২৭ দশমিক ৭৩। আর ২০২১ সালে এ স্কেলে ব্যাংকটি নম্বর পেয়েছে ২৭ দশমিক ৫৪। মূলত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্কোর কমে যাওয়ায় শীর্ষস্থানে ফিরতে পেরেছে ইস্টার্ন ব্যাংক।

ইস্টার্ন ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা। দেশব্যাপী মাত্র ৮৫টি শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। দ্য সিটি ব্যাংক রয়েছে তৃতীয় স্থানে। আরওএ, আরওই, নিট মুনাফায়ও ভালো অবস্থানে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। তবে ব্যাংকটির সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো সিএআর ও খেলাপি ঋণ।

টানা তিন বছর ধরে র‍্যাংকিংয়ে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে দ্য সিটি ব্যাংক। ২০২০ সালে র‍্যাংকিংয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা ব্যাংকটি এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ৭০ ও ৫০ উভয় স্কেলে দেশসেরা ব্যাংকের দ্বিতীয় স্থান দখলে নিয়েছে ব্যাংকটি। ৭০ স্কেলে এবার ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর ৩৫ দশমিক ৬১। ২০২০ সালে এ স্কেলে ৩০ দশমিক ৩৭ নম্বর পেয়েছিল সিটি ব্যাংক। ৫০-এর স্কেলে ২৭ দশমিক শূন্য ৪ নম্বর পেয়েছে ব্যাংকটি, যা আগে ছিল ২৩ দশমিক ১০।

২০২১ সালে আরওএ, আরওই, নিট মুনাফা ও শাখাপ্রতি মুনাফায় ভালো করেছে সিটি ব্যাংক। কিন্তু খারাপ করেছে খেলাপি ঋণের হার, এনএভিপিএস ও সিএআরে। আরওই ও আরওএতে সিটি ব্যাংকের অবস্থান পুরো ব্যাংক খাতে প্রথম। আর নিট মুনাফার দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান দ্বিতীয়। তবে খেলাপি ঋণের দিক থেকে ১৮তম ও সিএআরে ১২তম অবস্থান সিটি ব্যাংকের।

ইস্টার্ন ব্যাংককে পেছনে ফেলে ২০২০ সালে দেশসেরা ব্যাংক হয়েছিল ডাচ্-বাংলা। কিন্তু ২০২১ সালে ৭০ স্কেলের র‍্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে। আর ৫০-এর স্কেলে ডাচ্-বাংলার অবস্থান পঞ্চম। অবস্থান হারানোর পাশাপাশি ২০২১ সালে নম্বরও কমেছে ব্যাংকটির। ২০২০ সালে ৭০-এর স্কেলে ডাচ্-বাংলার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩৮ দশমিক ৩৩, এবার তা ৩৫ দশমিক ১৫-তে নেমেছে। আর ৫০-এর স্কেলে এবার ২৩ দশমিক ৭৪ নম্বর পেয়েছে ডাচ্-বাংলা, ২০২০ সালে যা ছিল ২৬ দশমিক ৯৭।

নিট মুনাফা ও এনএভিপিএসের দিক থেকে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ডাচ্-বাংলা। তবে খারাপ করেছে শাখাপ্রতি মুনাফা, খেলাপি ঋণ, সিএআরে। এ তিনটি নির্দেশকে খারাপ করার কারণে পিছিয়ে পড়েছে ব্যাংকটি।

২০২১ সালের র‍্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বড় চমক ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। ২০২০ সালের র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়া ব্যাংকটি এবার এক লাফে পাঁচ ধাপ উন্নতি করেছে। ৭০-এর স্কেলে ট্রাস্ট ব্যাংকের এবারের র‍্যাংকিং চতুর্থ। আর ৫০-এর স্কেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংক। র‍্যাংকিংয়ের পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে ব্যাংকটির।

সাতটি নির্দেশকে ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রাপ্ত নম্বর ৩১ দশমিক ৫৬। ২০২০ সালে সাত নির্দেশকে ২৫ দশমিক ১৩ নম্বর পেয়েছিল ব্যাংকটি। অন্যদিকে পাঁচ নির্দেশকে এবার ২৬ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক, যা ২০২০ সালে ছিল ২০ দশমিক ৫৯। ট্রাস্ট ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে শাখাপ্রতি মুনাফার সূচকে ভর করে। এ সূচকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। খেলাপি ঋণের হার, সিএআরে ভালো অবস্থানে আছে ট্রাস্ট ব্যাংক। তবে আরওএ, নিট মুনাফা ও এনএভিপিএসের দিক থেকে পিছিয়ে আছে ব্যাংকটি।



এবারের র‍্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। ২০২০ সালে পিছিয়ে পড়া ব্যাংকটি এবার ৭০ স্কেলের র‍্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। আর ৫০ স্কেলের র‍্যাংকিংয়ে চতুর্থ স্থান পেয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। র‍্যাংকিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে ব্যাংকটির। খেলাপি ঋণের নিম্নহারের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে সেরা ব্যাংক প্রিমিয়ার। ২ দশমিক ৭১ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে ব্যাংকটির অবস্থান সবার শীর্ষে। খেলাপি ঋণের সর্বনিম্ন হারের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক। আর এক্ষেত্রে তৃতীয় স্থান যমুনা ব্যাংকের। প্রিমিয়ার ব্যাংকের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হলো এনএভিপিএস, সিএআর ও নিট মুনাফা।

এদিকে টানা তিন বছর ধরেই র‍্যাংকিংয়ে অবনমনের পথে হাঁটছে ব্র্যাক ব্যাংক। ৭০ ও ৫০—দুটি স্কেলেই নিজের অবস্থান হারিয়েছে ব্যাংকটি। সাত নির্দেশকভিত্তিক র‍্যাংকিংয়ে আগেরবার চতুর্থ স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক এবার ষষ্ঠ স্থানে নেমে গিয়েছে। পাঁচটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির এবারের অবস্থান ১৪তম, যেখানে গত বছরের র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান ছিল অষ্টম। র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান হারালেও দুই স্কেলেই স্কোর বেড়েছে বাজার মূলধনে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটির।

আগেরবার সাতটি নির্দেশকে ব্র্যাক ব্যাংকের সার্বিক স্কোর ছিল ২৭ দশমিক ৯৮। এবারের র‍্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির স্কোর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ১৮। পাঁচ নির্দেশকের সার্বিক স্কোর আগেরবারের ২০ দশমিক ২৯ থেকে বেড়ে এবার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৪২। শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ও নিট মুনাফায় ভালো অবস্থানে থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংকের পারফরম্যান্স দুর্বল হয়েছে মূলত আরওই, সিএআর ও খেলাপি ঋণের হারের কারণে।

গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ এগিয়ে এ বছর র‍্যাংকিংয়ের সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে প্রাইম ব্যাংক। সাতটি নির্দেশকে ব্যাংকটির গত বছরের স্কোর ২২ দশমিক ৯২ থেকে বেড়ে এবার ২৭ দশমিক ৯৯-এ দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‍্যাংকিংয়ে প্রাইম ব্যাংক গত বছরের তুলনায় ছয় ধাপ এগিয়ে এবার ষষ্ঠ অবস্থানে উঠে এসেছে। এ বছর ব্যাংকটির স্কোর দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ১২, যা গত বছর ছিল ১৮ দশমিক ৫৮। সিএআরে শীর্ষে থাকলেও খেলাপি ঋণ, এনএভিপিএস, আরওই ও আরওএতে পিছিয়ে আছে প্রাইম ব্যাংক।

গত বছরের চেয়ে পাঁচ ধাপ এগিয়ে ২৭ দশমিক ১২ স্কোরের ভিত্তিতে সাতটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে এবার অষ্টম স্থান অর্জন করেছে ব্যাংক এশিয়া। যেখানে গত বছর ২৪ দশমিক ৪৯ স্কোরের ভিত্তিতে ১৩তম স্থানে ছিল ব্যাংকটি। পাঁচটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে আগেরবারের নবম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে এবার সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। এবার ব্যাংকটির স্কোর দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৬, যা গত বছর ছিল ২০ দশমিক ১৩। ওপিবি ও সিএআরের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও খেলাপি ঋণ, এনএভিপিএস, আরওএ, আরওইতে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংকটি।

র‍্যাংকিংয়ে বেশ বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। গত বছর ২২তম স্থানে থাকা ব্যাংকটি এবার নবম স্থানে উঠে এসেছে। ২০২১ সালে ব্যাংকটির স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩, যা আগের বছর ছিল ২০ দশমিক ৯৯। পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‍্যাংকিংয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক গতবারের ২১তম স্থান থেকে এবার ১২তম স্থানে উঠে এসেছে। আগেরবারের স্কোর ১৬ দশমিক ৫১ থেকে বেড়ে এবার ২০ দশমিক ৭৭-এ দাঁড়িয়েছে। আরওএ, আরওই ও নিট মুনাফার দিক দিয়ে শীর্ষ দশে থাকলেও ওপিবি, এনএভিপিএস, সিএআর ও খেলাপি ঋণের বিবেচনায় পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংকটি।

২০২১ সালের র‍্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের। ৭০ স্কেলের র‍্যাংকিংয়ে ২০২০ সালে ২৪তম স্থানে ছিল ব্যাংকটি। কিন্তু এবার দশম স্থানে উঠে এসেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট। এবার ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর ২৬ দশমিক ৩৮। ২০২০ সালে ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৫৭।

সেরা ব্যাংকের তালিকায় ২০২১ সালের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে করা এবারের সাতটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে গতবারের ১৮তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে ১১তম স্থানে দাঁড়িয়েছে এনসিসি ব্যাংক। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‍্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি গতবারের ১৫তম স্থান থেকে এবার নবম স্থানে উঠে এসেছে। সিএআরের বিবেচনায় ব্যাংকটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে পিছিয়ে আছে এনএভিপিএস ও নিট মুনাফায়।

সাতটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে গতবারের অষ্টম অবস্থান থেকে নেমে এবার ১২তম স্থানে দাঁড়িয়েছে পূবালী ব্যাংক। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের র‍্যাংকিংয়ে গতবারের ১৬তম থেকে এবার ১৭তম স্থানে নেমে গেছে ব্যাংকটি। খেলাপি ঋণ, এনএভিপিএস ও নিট মুনাফায় এগিয়ে থাকলেও পূবালী ব্যাংক ওপিবি, আরওই, আরওএ এবং সিএআরের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

সম্পদ ও দায়ের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির দায় ও ইকুইটির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক অবয়বের তুলনায় মুনাফা কম হওয়ায় ব্যাংকটি বেশির ভাগ নির্দেশকেই পিছিয়ে পড়েছে। আরওএ, আরওই, সিএআর, শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় র‍্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। ২০২১ সালের র‍্যাংকিংয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকটির অবস্থান ১৩তম। যদিও আগের বছরের র‍্যাংকিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে শক্তির জায়গা হলো নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস। এ দুটি নির্দেশকে ব্যাংকটির অবস্থান সব ব্যাংকের মধ্যে তৃতীয়। আর খেলাপি ঋণের নিম্নহারের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের আরওএ ২৫তম, আরওই ২১তম। সিএআরের দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান ২২তম।

২০২১ সালের সেরা ব্যাংকের র‍্যাংকিংয়ে সিএআর ও আরওইতে ভালো করায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২১ থেকে ১৬, ওপিবি ও নিট মুনাফার কারণে আইএফআইসি ব্যাংক ২৮ থেকে ২৩ এবং ওপিবি, এনএভিপিএস ও নিট মুনাফার কারণে এসআইবিএল ২৬ থেকে ২৪তম স্থানে উঠে এসেছে। 

অন্যদিকে ওপিবি, নিট মুনাফা, আরওএ এবং আরওইর কারণে ঢাকা ব্যাংক ১০ থেকে ১৪; ওপিবি, নিট মুনাফা ও আরওইর কারণে যমুনা ব্যাংক ৫ থেকে ১৫; সিএআর, এনএভিপিএস, ওপিবি, আরওএ ও খেলাপি ঋণের কারণে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৬ থেকে ১৭; আরওই, আরওএ ও নিট মুনাফার কারণে সাউথইস্ট ব্যাংক ১২ থেকে ১৮; আরওই, আরওএ, সিএআর ও নিট মুনাফার কারণে ইউসিবি ১৫ থেকে ২০।

নিট মুনাফা, ওপিবি, আরওএ, আরওই ও খেলাপি ঋণের কারণে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১১ থেকে ২১; আরওএ, আরওই, এনএভিপিএস ও নিট মুনাফার কারণে এক্সিম ব্যাংক ১৪ থেকে ২২; আরওএ, খেলাপি ঋণ ও এনএভিপিএসের কারণে ওয়ান ব্যাংক ২৩ থেকে ২৬তম অবস্থানে নেমে গিয়েছে। আর সব নির্দেশকেই পিছিয়ে থাকায় এনবিএলের অবস্থান ২০ থেকে ২৮তম হয়েছে। 

উত্তরা ব্যাংক (১৯), এবি ব্যাংক (২৫), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (২৭), রূপালী ব্যাংক (২৯) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের (৩০) এবারের র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।

সূত্র: বণিক বার্তা

ডাচ্-বাংলা   ব্যাংক   ইস্টার্ন ব্যাংক   সিটি ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

প্রকাশ: ০৮:৫৫ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন । অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও।

জানা গেছে, ২৪ মে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট–সংক্রান্ত প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। 

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন। 

জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানের খরচও বহন করবে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র   অফশোর ব্যাংকিং  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশিদের ৫.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে বিদেশে

প্রকাশ: ১০:৩৭ এএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশিদের প্রায় ৫ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের অফশোর সম্পদ আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সম্পদের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে, বাকিটা ইউরোপ ও আমেরিকায়।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ট্যাক্স অবজারভেটরির প্রকাশিত অ্যাটলাস অফ অফশোর ওয়ার্ল্ড শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব জানা গেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অফশোর বিনিয়োগের ২০২২ সালের তথ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ট্যাক্স হেভেনে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বল্প কর দিয়ে বা বিনা করে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর বিনিয়োগকৃত এই সম্পদকে অফশোর সম্পদ বলা হয়।

২০২১ সালে ট্যাক্স হেভেনে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন অফশোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ১৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, হংকংসহ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, না জানিয়ে এই অফশোর বিনিয়োগে শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন কর পাওয়া যায়নি বলে অনুমান করা যায়।

এতে আরও দেখা গেছে, ট্যাক্স হেভেনে রিয়েল এস্টেট খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ করা মোট অফশোর সম্পদের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের বেশিরভাগই সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে। এছাড়া লন্ডন ও প্যারিসে কিছু বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অফশোর রিয়েল এস্টেট শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন হয় কিংবা জটিল অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে ভিন্ন দেশের কোনো বাসিন্দার মালিকানাধীন হয়ে থাকে যেখানে প্রকৃত মালিকের পরিচয় অস্পষ্ট থাকে।'

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) সাম্প্রতিক একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ের ৬৪১টি আবাসিক সম্পত্তির মালিক, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২২৫ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। সংস্থাটি ২০২২ সাল থেকে এ অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে।

ওসিসিআরপি বলছে, দুবাই অফশোর বিনিয়োগের জন্য জনপ্রিয় কারণ 'পলাতক অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আমিরাত যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখায় না।'

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'তদন্তাধীন বা অন্য কোথাও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিরা কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই সম্পদ কিনতে পারে এবং মালিক হয়ে যেতে পারে তা বোঝা কঠিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজেদেরই এসব ঘটনা চিহ্নিত করতে পারা উচিত এবং সম্পদগুলো টার্গেট করে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করা উচিত।'


বাংলাদেশি   বিলিয়ন   ডলার   বিদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রায় এক মাস হতে চলল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গতকাল এ ব্যাপারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে, তার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যখন আর্থিক খাতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডলার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নানা রকম গুজবকে উস্কে দিচ্ছে। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক খাত নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত খবরগুলো সরকারের ইমেজ নষ্ট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একলাফে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া, সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে দেওয়া কিংবা ব্যাংক একীভূতকরণ; সবগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক লেজেগোবরে অবস্থায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং প্রত্যেকটি কাজের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অদৃশ্য কারণে সে পথে হাঁটছে না। এই না হাঁটার ফলে নানা রকম গুজব এবং নেতিবাচক সংবাদ উস্কে দেওয়া হচ্ছে।

কদিন আগেই রিজার্ভ চুরি নিয়ে এক গুজব ছড়ানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই তথ্য নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন মানুষ গুজবকে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমবান্ধব। তিনি যে কোন বিদেশ সফর করে এসে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেন এবং এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি গণমাধ্যমের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?

বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে টকশোগুলোতে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ব্যক্তিরা এসে নানা রকম সমালোচনা করছে এবং এই সমস্ত সমালোচনা কোনরকম সেন্সরশিপ ছাড়াই করা হচ্ছে। সরকারের যখন এই অবস্থান তখন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন ভূত আছে? যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করছে।

কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক মাস ধরে এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। দেশে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ রকম একটা বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেবেন না, গণমাধ্যম বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবে না- এটি এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

অনেকেই মনে করছেন, কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে থাকা কোন ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে যেন সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়, গুজব ছড়ানো সহজ হয় এবং অসত্য মিথ্যা তথ্য যারা পরিবেশন করছে তাদেরকে উস্কে দেওয়া হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন তথ্যই গোপন রাখা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে কোন তথ্য গোপন করতে পারেনি। তারা ডলারের দাম বৃদ্ধির আগেই সব খবর প্রকাশ করেছে। স্ক্রলনীতির সংবাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্যই কী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কোন মহল সক্রিয়?


বাংলাদেশ ব্যাংক   সাংবাদিক   গণমাধ্যম   অর্থনীতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৫২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে এক হাজার ২৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে বড় ১০টি মেগাপ্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সভায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর আগে গত ৭ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বর্ধিত সভা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবার এডিপির আকার বাড়ছে দুই হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে আকার কমে দাঁড়ায় দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত এডিপিতে এক হাজার ৩৩৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ৭৯টি।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উনয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এই গুচ্ছ কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় হাজার পাঁচ কোটি টাকা। এরপরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ‘ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট: মেট্রো রেল লাইন-১’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ তিন হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ তিন হাজার ৫৪৪ কোটি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫৩৫ কোটি, এক্সপাংশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৩৮৪ কোটি এবং পাঁচটি হাসপাতাল ৫০০ শয্যা উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা।

এদিকে প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

এ ছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৩৭১ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৯ হাজার ২২৭ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৯০৩ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য চার হাজার ৪২৫ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য দুই হাজার ৯২৭ কোটি এবং সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এবার যেসব প্রকল্প শেষ হওয়া সম্ভব, সেগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরও সেভাবে কাজ করায় ভালো সুফল পাওয়া গেছে। প্রকল্প শেষ করতে এবার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পরিকল্পনা কমিশন এবং আইএমইডি সবাই তৎপর ছিল, যার ফলে ৩৩৪টি প্রকল্প এবার শেষ হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আগে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল। সেই সঙ্গে দক্ষতার অভাব, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া অনুমাননির্ভর প্রকল্প নেওয়া এবং বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ ঠিকমতো না করায় সময়মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন হতো না। পরে আমরা চেষ্টা করেছি ওয়ার্ক প্ল্যান নেওয়ার।’


মেগাপ্রকল্প   পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র   অর্থবছর   এডিপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

রফতানির তথ্য সঠিক, নাকি ফোলানো-ফাঁপানো

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। পণ্য রফতানি বাবদ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অর্থপ্রাপ্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে ঘোষিত রফতানি ও অর্থপ্রাপ্তির পার্থক্য প্রায় ৮৫৮ কোটি ডলার বা ৩১ শতাংশের কিছু বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান থেকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে। তবে রফতানিকারকরা বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য সংকলন ব্যবস্থার ত্রুটিতে ফোলানো-ফাঁপানো রফতানি পরিসংখ্যান প্রকাশ হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের কাছে রফতানিকারকের দেওয়া প্রকৃত তথ্য থাকলেও ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিওপি) হিসাব করতে গিয়ে তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন ইপিবি প্রকাশিত তথ্য। এতে রফতানি ও এর বিপরীতে অর্থপ্রাপ্তির তথ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা দিচ্ছে। 

রফতানিকারকদের দাবি, হিসাব সংকলন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অর্থ পাচারের সন্দেহ ও অভিযোগের শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়া এ ত্রুটি জাতীয় আর্থিক হিসাবের তথ্য নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। 

দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বড় অংকের ঘাটতি দেখা গেছে। এ ঘাটতি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) আরো স্ফীত হয়েছে। এতে বড় ভূমিকা রাখছে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত রফতানির বড় অংকের অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার কারণেই ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি বাড়ছে, যা প্রকারান্তরে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকেও বাড়িয়ে তুলছে। জুলাই-মার্চ সময়ে নিট ট্রেড ঘাটতির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। 

রফতানির অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ইপিবি বলছে, তারা এনবিআর তথা কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করছে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে দেখা গেল, এ দুই সংস্থার তথ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইএক্সপির (রফতানির ঘোষণা) তথ্য আছে, সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে ইপিবির তথ্যকে ভিত্তি ধরলে রফতানির তথ্যে বড় পার্থক্য থেকে যাচ্ছে।

পোশাক রফতানিকারকদের ভাষ্য হলো নানা কারণে অর্থ প্রত্যাবাসন না হতে পারে। যেমন কোনো কোনো ক্ষেত্রে শর্তই হলো অর্থ পরিশোধ হবে ছয় মাস পর। কোনো অর্থ যদি নির্ধারিত সময়ে না আসে, সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় শেষে রফতানিকারক বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশ বোর্ডে রেড মার্কড হয়ে যাবেন। পরদিন থেকে কোনো ব্যাংকই ওই রফতানিকারকের কার্যক্রমে হাত দেবে না। 

এ পরিস্থিতিতে কেউ যদি অর্থ প্রত্যাবাসন না করে থাকে, তাহলে সেই রফতানিকারকের কার্যক্রম চলমান রয়েছে কীভাবে বলে প্রশ্ন তুলছেন তারা। 

বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রকাশিত রফতানি তথ্যের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু এখন আগের মতোই তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। যে কোনো কথা বলতে গেলে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কথা বলা উচিত। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। যে তথ্য দেয়া হয় সেটা যে একতরফা তথ্য, সেটা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, রফতানি তথ্যের পার্থক্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিক কারণ রয়েছে। প্রকৃত রফতানি তথ্য নিশ্চিতে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত চিত্র তুলে আনলেই পার্থক্যের যথার্থ কারণ বেরিয়ে আসবে।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন