ইনসাইড ইকোনমি

ডলার সংকটে আরও বাড়তে পারে আমদানি পণ্যের দাম

প্রকাশ: ১২:১০ পিএম, ০৪ অগাস্ট, ২০২৩


Thumbnail ডলার সংকটে আরও বাড়তে পারে আমদানি পণ্যের দাম।

দেশে ডলারের সংকট সহসাই কাটছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ সংকট চলতি অর্থবছরও থাকবে। ফলে ডলার, পণ্য ও জ্বালানিসহ অন্যান্য সেবার মূল্যবৃদ্ধির চাপ মূল্যস্ফীতিতে এ অর্থবছরও মোকাবিলা করতে হবে। এর প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম আরও বাড়বে। ফলে অন্যান্য পণ্যের দামেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে বিনিয়োগ খুব একটা বাড়বে না। 

এতে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে। আগের কর্মসংস্থান ধরে রাখাও হবে চ্যালেঞ্জিং। ডলারের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবগুলো চলতি অর্থবছরে আরও বেশি ভোগাবে। তবে আগামী অর্থবছর থেকে সংকট কমতে পারে।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। ওই সময় থেকেই দেশে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে বেড়ে যায় জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম। বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির হার। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিতে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করে। পরে ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়। কেবলমাত্র খাদ্য, জ্বালানি, কৃষি, শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আমদানি ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের সংস্থান ছাড়া কোনো এলসি খোলা যাচ্ছে না। ফলে এখন কেবলমাত্র যাদের ডলার আয় আছে যেমন-রপ্তানিকারক, কেবল তারাই এলসি খুলতে পারছেন। এর বাইরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের কিছু বাড়তি ডলার দিয়ে সরকারি খাত ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। 

এছাড়া বাণিজ্যিক খাতে কোনো পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি খাতনির্ভর যেসব শিল্প দেশে গড়ে উঠেছিল সেগুলো এখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত। এর মধ্যে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ভেসেল বা পুরোনো জাহাজ ৬১ শতাংশ, আয়রন ও স্টিল স্ক্র্যাপ ২০ শতাংশ, বিভিন্ন ধরনের মেটাল ৭১ শতাংশ, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল ১৪ শতাংশ, কটন ইয়ার্ন ৪০ শতাংশ আমদানি কমেছে। 

এমনকি রফতানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও ১৬ শতাংশ কমেছে, এলসি খোলা কমেছে ৩৪ শতাংশ। বৈশ্বিক মন্দায় রফতানির আদেশ কম আসায় এ খাতে এলসি ও আমদানি কমেছে। এসব খাতে কর্মসংস্থান যেমন কমেছে, তেমনি জিডিপিতে অর্থের জোগানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ডলার সংকটে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ১২ শতাংশ ও এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের এলসি ৩১ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ২৪ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি ৩২ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ১০ শতাংশ। শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি ৫৭ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ১৭ শতাংশ। বিবিধ শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি কমেছে ৪৬ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ৩২ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের এলসি ২০ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ১ শতাংশের বেশি। তবে জ্বালানি তেল ও জ্বালানি খাতের উপকরণ আমদানির এলসি বেড়েছে আড়াই শতাংশ ও আমদানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এর প্রভাবে শিল্প খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উৎপাদন কমছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও নিম্নমুখী।

ডলার সংকট শিল্প খাত ছাড়াও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও বড় ধরনের আঘাত করছে। এ আঘাতের মাত্রা ক্রমেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকে এর দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে এক ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। এখন তা বেড়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ছাড়িয়ে গেছে। দাম বেড়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ দেড় বছরে টাকার মান কমেছে ৩০ শতাংশ। ডলারের এ মূল্যবৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষকে আঘাত করেছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ওই আঘাত আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট কাটাতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকার এখনো বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে পারেনি। কিন্তু ব্যয় কমিয়ে সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমাতে গিয়ে এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। দীর্ঘ সময় আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে আমদানিনির্ভর যেসব শিল্প গড়ে উঠেছিল সেগুলো হুমকির মুখে পড়বে। এতে ওইসব খাতে খেলাপি ঋণ বাড়বে। কর্মসংস্থান কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাতের প্রবৃদ্ধি একেবারেই নগণ্য। কিন্তু ব্যয়ের হিসাব অনেক বড় হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তার আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে কমেছিল ১৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ কমার পর বেড়েছে মাত্র পৌনে তিন শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছে দুই হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এক বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ৫৮ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। 

আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ খাতের আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে নিট বৈদেশিক অনুদান বেড়েছিল ৫৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ২৩ শতাংশ। 

একই সঙ্গে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ওই সময়ে এফডিআই এসেছিল ১৭৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি কমলেও বকেয়া আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ মিলে প্রতি মাসে যে ডলারের সংস্থান হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৭০০ কোটি ডলারের আয় হচ্ছে। এর বিপরীতে তাৎক্ষণিক আমদানির দেনা মেটাতে যাচ্ছে ৬৫০ কোটি ডলার। বকেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে আরও কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার। এ হিসাবে মাসে ঘাটতি ৫০ কোটি ডলার। এছাড়া বিদেশে বিভিন্ন সেবা, রয়্যালটি, মুনাফা প্রত্যাবাসনসহ সব মিলে আরও বাড়তি খরচ হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে ডলারের ঘাটতি হচ্ছে।

এদিকে আগে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে স্বল্পমেয়াদি দায় মেটানো হতো। এখন ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমে গেছে। যে কারণে এখন ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ মান কমিয়ে দেওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ায় বিদেশ থেকে ঋণপ্রবাহ আরও কমবে। একই সঙ্গে বাড়বে খরচ। এতে ডলারের সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ডলারের সংকট ধীরে ধীরে কমছে। আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরও কিছু দিন থাকবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে হলে ডলারের সংস্থান করতে হবে। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দা শুরুর পর যেসব বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে।


ডলার সংকট   আমদানি পণ্য   দাম  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ: ১০:২৮ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। দেশটির এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে লেনদেনে নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নীতি চালু রয়েছে। এর ফলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুয়া (ফেক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। মঙ্গলবার দেশটির এক সংবাদপত্রে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টির সত্যতা জানতে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটির সত্যতা নাকচ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। ১৬ মার্চ মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে।

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে অপরাধীরা। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলে যাওয়া দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরি   বাংলাদেশ ব্যাংক   নিউইয়র্ক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

দুর্বল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করতে হবে: সাদিক আহমেদ

প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদিক আহমেদ। 

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগপর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।

সাদিক আহমেদ বলেন, এ সময় পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতি (ব্যাসেল ৩ নিয়মের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত) পূরণ করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।

বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে। এটা বড় ধরনের চাপ।

সাদিক আহমেদের মতে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হচ্ছে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন। তিনি বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।

পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না। এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কোনো উদ্যোগই কাজ করেনি।

দুর্বল ব্যাংক   ঋণ খেলাপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনৈতিক সংকট কাটবে কীভাবে?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বাজারে তীব্র ডলার সংকট। সবকিছু মিলিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মত বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠাটাই এখন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়নের কিছু কম। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর মার্চ-এপ্রিল মাসে দায় মেটানোর পর মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতিতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার বা ১৮.৩২ বিলিয়ন। প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৬৩ কোটি ডলার। এর ফলে রিজার্ভ কমে যায়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। যদিও এখন তা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে।

এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়েছে এবং তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ অতিক্রম করছে। এই অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বাজারে ডলারের দাম এ লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে এখন ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের জন্য হাহাকার ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে আমদানির ক্ষেত্রে। এই রকম অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে এক ধরনের কৃচ্ছতা সাধন এবং সংকোচন নীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ডলারের মূল্য ৭ টাকা বৃদ্ধির ফলে এখন প্রবাসী আয় বাড়বে। এই মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। তাছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপারেও তারা আশাবাদী।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনা করছেন এবং সেই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। যে সমস্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি বাণিজ্য রয়েছে, যেমন- ভারত, চীন; সেগুলোতে ডলারের পরিবর্তে সে দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে সরকার মনে করছে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি চলছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ধরনের ব্যবস্থাগুলোর সুফল আগামী অর্থবছরে পাওয়া যাবে।


ডলার   বাংলাদেশ ব্যাংক   অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ   আইএমএফ   রিজার্ভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোমল পানীয়র করভার বাড়ার সম্ভবনা

প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজের বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর (টার্নওভার ট্যাক্স) ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এই হার চলতি অর্থবছরের বাজেটেও প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। পরে কোম্পানিগুলোর দাবিতে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এই করহার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৫ শতাংশ করহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরেও এই প্রস্তাব ছিল আয়কর বিভাগের। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে এই করহার ৫ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অর্থাৎ রোববার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে এই করহারের বিষয়ে সায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাজেটের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশের পানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কোমল পানীয়ের খাত থেকে বর্তমানে জাতীয় কোষাগারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসে। প্রস্তাবিত টার্নওভার কর বেড়ে যাওয়ার সরাসরি ফলাফল হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। 


কোমল পানীয়   করভার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশ ছাড়াল

প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে এখন ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। অর্থাৎ ৪ মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা এপ্রিলে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সাত বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অন্যদিকে, গ্রামে শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। গত এপ্রিলে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। শহরে এই হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে এই হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি   বিবিএস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন