ইনসাইড ইকোনমি

আবারও বিশৃঙ্খলা ডলারের বাজারে

প্রকাশ: ০৯:০৪ এএম, ০৯ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাফেদা ও এবিবির ওপর ডলারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ায় বাজারে এর দাম নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ডলারের তীব্র সংকটের মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না।

এদিকে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। প্রণোদনার নামে রেমিট্যান্সের ডলার ১২১ থেকে ১২৩ টাকা দরেও কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। বেশির ভাগই কিনছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা করে। এতে ডলারে কেনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও প্রিমিয়াম এবং নানা ফির নামে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে। আমদানির ডলার ১১১ টাকা করে বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৭ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক হয়। বৈঠকে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় তারা বলেন, রেমিট্যান্সের ডলারের ক্ষেত্রে আগের দামই অর্থাৎ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা বহাল থাকবে। তবে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ এর দাম কোনো ক্রমেই ১১৫ টাকার বেশি হবে না। এর চেয়ে বেশি দামে কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কিনলে এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেই বহন করতে হবে।

বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার কিনছে ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে। ওইসব ডলার তারা এক টাকা মুনাফায় ১২৩ থেকে ১২৪ টাকার কম দামে বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এত দামে অনেক ব্যাংক ডলার কিনতে চাচ্ছে না। ফলে অনেক ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। তবে কিছু ব্যাংক বাড়তি দামে ডলার কিনছে। এদিকে চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার না কেনায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের কাছে মোটা অঙ্কের ডলার আটকে রয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এক ডলারের থাক্কা দেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। টাকার মান কমায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। ডলারের মজুত বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে সামনে আরও খেসারত দিতে হবে।’

আরও পড়ুন:  রিজার্ভ নামলো ১৯ বিলিয়নের ঘরে

তবে কমতে থাকা রিজার্ভ থেকে আর কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেছেন, এখন থেকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে দেশের অভ্যন্তরে আর ডলার বিনিয়োগ করা হবে না। যেসব খাতে রিজার্ভ বিনিয়োগ করা হয় তাও কমিয়ে আনা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ডলার আসবে। তখন রিজার্ভ বাড়বে। এজন্য দেশের রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক   বাফেদা   এবিবি   ডলার   নিয়ন্ত্রণ   বিশৃঙ্খলা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

একীভূত হতে নারাজ ন্যাশনাল ব্যাংক

প্রকাশ: ০৭:৫৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখনই একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। 

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগে থেকে কোনো ধরনের আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। তবে চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়নি। ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঋণ আদায় জোরদার করবে। বিশেষ করে শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায়ে ক্রাশ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্থরে ঋণ আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পারভীন হক সিকদার এমপি বলেন,  অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা কখনও তারা নেননি। একীভূত হওয়ার ইস্যুতে পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ জানেনও না। 

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪১ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গঠন করে দিয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে এই ব্যাংক আবার দেশের এক নম্বর ব্যাংকে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ব্যাংক একীভূত   ন্যাশনাল ব্যাংক   বাংলাদেশ ব্যাংক   ইউসিবি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ছয় দিনে ৫ বার স্বর্ণের দাম কমলো

প্রকাশ: ০৬:১৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দেশের বাজারে গত ছয় দিনে টানা পাঁচ বার কমলো স্বর্ণের দাম। পঞ্চম দফায় স্বর্ণের দাম কমেছে ৩১৫ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম কমার প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ ব্যবধানে পাঁচ দফায় ভালো মানের স্বর্ণের দাম কমেছে। এ সময়ে ভালো মানের স্বর্ণ ভরিতে ৬ হাজার ৮১২ টাকা কমেছে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। একইদিন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের বৈঠকে নতুন এ দাম নির্ধারণ হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩০৪ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২৫৬ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ১৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ২১০ টাকা কমিয়ে ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল ২৭ এপ্রিল এবং তার আগে ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৩ এপ্রিল চার দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ২৭ এপ্রিল ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৬৩০ টাকা, ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২ হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়।

স্বর্ণ   বাজুস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

২৬ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ডলার

প্রকাশ: ০৬:২৪ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার দেশে এসেছে। 

রোববার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

এতে বলা হয়, এপ্রিল মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে এসেছিল ১৬২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। সেই হিসাব অনুযায়ী, চলতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম ২৬ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, এপ্রিলের ২০ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল দেশে এসেছে ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। এছাড়া ৬ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর ১ থেকে ৫ এপ্রিল দেশে এসেছে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।


রেমিট্যান্স   ডলার   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বাজেটে

প্রকাশ: ০১:০১ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের চাপ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় শেষে এই ঋণের সুদসহ পরিশোধের বিধান রয়েছে। এই ঋণের একটা অংশ প্রতি মাসে সরকার এখন সুদ-আসলে পরিশোধও করছে। তবে বিদেশি ঋণে নির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় দিন যত পার হচ্ছে, এ ঋণ পরিশোধে সরকারের চাপও তত বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) গত ৯ মাসেই বিদেশি ঋণের সুদ-আসল মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে।

যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের আসল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধ বাবদ ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৩৭ হাজার ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে, বাজেটে বৈদেশিক ঋণের দায় খাতে রাখা বরাদ্দের অর্থ দিয়ে চলতি অর্থবছরের বাকি ব্যয় সংকুলান হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রমতে, এ কারণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকার ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক বাজেটে বিদেশি ঋণের জন্য ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে সেটি ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত বাংলাদেশের মতো কল্যাণমূলক উন্নয়নশীল দেশে সব সরকারেরই জনপ্রতিশ্রুতি থাকে। এ কারণে উন্নয়নের চাহিদাও বেশি হয়। বিশেষ করে এই বাস্তবতায় এ ধরনের দেশগুলোয় রাজনৈতিক সরকারের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কম আয়ে বেশি উন্নয়নের চেষ্টা। ফলে সরকার বিভিন্ন সময় উন্নয়ন চাহিদা পূরণে বাড়তি ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের তাল মেলাতে প্রতি বছর যে বাজেট তৈরি করছে, তার ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাতের বাইরে বৈদেশিক বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করে থাকে। দেশে সরকারের কাঁধে এখন যে ঋণের বোঝা, এটি তারই পুঞ্জীভূত আকার। যার ঋণ এখন প্রতি মাসেই সুদ-আসলে শোধ দিতে হচ্ছে। তবে বিদেশি ঋণে সুদ তুলনামূলক কম, পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ডও বেশি। এ কারণে সরকার বিদেশি ঋণেই ঝুঁকছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় আড়াই গুণ।

সংশোধিত বাজেটে বিদেশি ঋণের দায় খাতে এই অতিরিক্ত বরাদ্দের কারণ জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি ঋণের প্রায় ৪৫ শতাংশই নেওয়া এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) মুদ্রায়, যা পরিশোধ করতে হয় সাধারণত মার্কিন ডলার কিংবা যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিংয়ে; কিন্তু সম্প্রতি বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে এখন এই এসডিআর মুদ্রার সঙ্গে ডলার ও পাউন্ডের বিনিময় হার, ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য এবং ইউরোবর ও সোফর হার অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের ওপর সুদ পরিশোধের পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে।

অর্থাৎ ডলার ও পাউন্ডের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে একই পরিমাণ বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয়ই এখন বাজেট ব্যবস্থাপনায় সরকারের বড় চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে। যেগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এখন তার অর্থায়নকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এতে করেও নতুন-পুরোনো মিলে সরকারের কাঁধে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপও আগের তুলনায় বেড়েছে। এই বাস্তবতায়ও বাজেট সংশোধনীতে এ খাতের সুদ পরিশোধের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে এই বৈদেশিক উৎসের ঋণ সরকারের নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু দেশীয় বাস্তবতায় সরকারের আয় কম। আবার আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রও কম। একমাত্র ভরসা হলো রাজস্ব খাত। সেখান থেকেও নানা কারণে কাঙ্ক্ষিত আয় আসছে না। যে কারণে সরকার নিজের আয় থেকে আংশিক পরিশোধ করে বাকিটা ঋণ নিয়েই ঋণের দায় শোধের চেষ্টা করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমস্যা হচ্ছে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের আয় বাড়াতে পারছে না। আবার যে আয় করছে, তার বড় একটা অংশ ভর্তুকিতেই খরচ করে ফেলছে। আবার রাজস্ব আয় বাড়ানোর যে সংস্কার কাজ তারও গতি বাড়াতে পারছে না। এ বাস্তবতায় যে বিদেশি ঋণ আসছে, তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কিছুটা ধীরগতির কারণে হয়তো সেটি বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে থাকতে পারে।

তবে এতে করে বিদেশি ঋণের আকার যেমন বাড়বে, তেমনি সুদ পরিশোধ খাতেও বড় আকারের ব্যয় করতে হবে। এর থেকে বেরিয়ে সরকারের উচিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে রাজস্ব ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা উঠিয়ে সরকারের রাজকোষ সমৃদ্ধ করা। এতে অন্তত প্রতি বছর যে মোটা অঙ্কের সুদ ডলারে পরিশোধ হচ্ছে, সেটি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।


বৈদেশিক ঋণ   বাজেট   অর্থবছর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনীতিতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দেশের অর্থনীতি ক্রমশ নাজুক ঋণনির্ভর এবং সঙ্কটজনক অবস্থায় যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বটে তবে এখন পর্যন্ত কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। অর্থনৈতিক মোকাবিলা করাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় রকম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সরকারের পক্ষ থেকেও অর্থনৈতিক সংকটের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে না। বরং অর্থনীতিতে ৭টি বিপদ সংকেতকে সরকারের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে বলেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অর্থনীতির যে সাতটি বিপদ সংকেত সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলো-

.ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম: ব্যাংকিং খাতে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হচ্ছে। জন আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। বিশেষ করে ব্যাংক একীভূত করার কৌশলটি নিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন উঠেছে। ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটি নিয়ে কথা উঠছে এবং খেলাপিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের এই নাজুক পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

.ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে: বাংলাদেশের ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে‌। সুদ এবং ঋণের দায় মেটানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যার ফলে সামনের দিনগুলোতে বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ বাড়বে। এখনই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে নীচে নেমে গেছে এবং রিজার্ভ বাড়ানোর কোনও উদ্যোগই এখন পর্যন্ত সফল হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে ঋণ এবং সুদ মেটাতে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে বলেও কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ মনে করছেন। অর্থনীতিতে এই বিদেশি ঋণ পরিশোধ এখন সরকারের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে, সামনের দিনগুলোতে ঋণের দায় মেটানোটা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

. মুদ্রাস্ফীতি: মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। গত ১ বছরের গড় মুদ্রা ১০ এর কাছাকাছি। এর ফলে, জিনিসপত্রের দাম সীমাহীন ভাবে বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে এবং এর ফলে জন অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।

. প্রবাসী আয় কমে যাওয়া: প্রবাসী আয় যে ভাবে বাড়ার কথা ছিল সেভাবে প্রবাসী আয়ে বাড়ছে না। প্রবাসী আয় কমে যাওয়াটা সরকারের জন্য একটা বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

. অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের হতাশাজনক চিত্র: অর্থনৈতিক সঙ্কট মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর এই অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও তেমন কোনও আশাজনক বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বলেই অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন।

. দুর্নীতি: একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে চলেছে অন্যদিকে, দুর্নীতিও কমছে না। ফলে কোন কিছুতেই অর্থনৈতিক সংকট কমিয়ে আনার মত কোন বাস্তব পরিস্থিতি থাকছে না বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

. বিদ্যুৎ এবং রপ্তানি আয়ের উপর আঘাত: বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিলে রপ্তানি আয়ের উপরেও একধরনের সমস্যা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, আমদানি নির্ভর জ্বালানি খাত সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে, এবং রপ্তানি আয়ের উপর বড় ধরনের প্রভাব পরবে বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সব কিছু মিলিয়ে এই বিপদগুলোকে কাটিয়ে ওঠায় সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।


অর্থনীতি   মুদ্রাস্ফীতি   প্রবাসী আয়   দুর্নীতি   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন