ইনসাইড ইকোনমি

দুর্বল ব্যাংকগুলোর চাপে নুয়ে পড়ার শঙ্কায় ভালো ব্যাংক

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ০৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ মন্দ ঋণ বা খারাপ সম্পদ কোন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করা হবে, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের চাপে ভালো ব্যাংকও নুয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে সাধারণ আমানতকারীসহ অনেক ব্যাংকের পরিচালকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ ভালো ব্যাংক যেগুলো আছে, সেগুলো তো নিয়মকানুন মেনে, কমপ্লায়েন্স মেনে, নানা ধরনের প্রতিকূলতা পার করে ভালো হয়েছে। ফলে তারা কেন একটি দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে?’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বরে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বিষয়টি স্পষ্ট করে গত ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাটি। এর পরই একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গত মার্চে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ডেকে ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা না হলে আগামী বছরের মার্চে ব্যাংকগুলোর ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

যদিও এখন পর্যন্ত একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অনেক বিষয়ই স্পষ্ট করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর যেসব ঋণ মন্দ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে আছে, সেগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ঋণ বা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগের শুরুতেই গত ১৪ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ঘোষণা দেয় এক্সিম ব্যাংক। এ দুটি ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক তুলনামূলক ভালো হলেও বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি আর সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসেছিল পদ্মা ব্যাংক।

তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। এরই মধ্যেই খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর বাইরেও ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ অবলোপনের খাতায় যুক্ত আছে। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৬০৭ কোটি টাকা।

অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ ১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির কোনো মূলধন ঘাটতি নেই। এর বাইরেও ব্যাংক দুটির বিপুল পরিমাণ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, ব্যাংক দুটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন থেকে যদি আর না-ও বাড়ে, তাহলেও একীভূত হওয়ার পর এক্সিম ব্যাংকে খেলাপির হার দাঁড়াবে মোট ঋণের ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের নিচে থাকার কথা।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা বলছে, খারাপ ব্যাংকের দায় বিক্রি করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ধরনের কোনো নীতিমালা জারি হয়নি। এমনকি মন্দ সম্পদ কম দামে বিক্রির পর বাকি দায় কীভাবে সমন্বয় করা হবে তারও কোনো স্পষ্ট বর্ণনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায়। শুধু তাই নয়, এক্সিম ব্যাংকের মূলধনে বর্তমানে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। অথচ, সমন্বয় না করা হলে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকটি ৬০৭ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এক্ষেত্রে মূলধন হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, পদ্মা ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করেছে তার বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেওয়া হয়নি। এমনকি বিতরণ করা ঋণের বেশিরভাগই আর ফিরে না আসায় তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। পরে ২০২২ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা এসএলআর থেকে অব্যাহতি দেয়। বর্তমানেও ওই সুবিধা বহাল রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্যোগে পড়তে পারে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের চেয়ে কয়েক গুণ বড় ন্যাশনাল ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আকৃতিতে বিশাল, কিন্তু আর্থিকভাবে ভেঙে পড়া একটি প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ইউসিবি নিজেই ভেঙে পড়ে কি না—তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, তালিকাভুক্ত ইউসিবির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির সঙ্গে একীভূত হতে যাওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকা আর পরিশোধিত মূলধন ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।

শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক ৪২ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ১১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। আর মোট খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। একীভূত হলে ইউসিবির ৪৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকার সঙ্গে মিলে মোট ঋণ হবে ৯২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউসিবির খেলাপি আড়াই হাজার কোটি টাকা হলেও তখন দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউসিবির খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ০১ শতাংশ। একীভূত হওয়ার পর এ হার দাঁড়াবে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

ইউসিবির কোনো প্রভিশন ঘাটতি না থাকলেও ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এর বাইরেও প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকটির ২ হাজার ২৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। সব মিলিয়ে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আর্থিক হিসেবে দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় ঢুকে যাবে ইউসিবি।

যদিও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালকরাই ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এরই মধ্যে বোর্ড সভা করে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংক একটি সুসংগঠিত ব্যাংক। ব্যাংকের প্রায় ৩০০ শাখা-উপশাখার মধ্যে হাতেগোনা ১১ থেকে ১২টি শাখা ছাড়া সব মুনাফা করছে। এখন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে খেলাপি আদায় বেড়ে গেছে। সামনে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগির খেলাপি সন্তোষজনক পর্যায়ে চলে আসবে। যদি না আসে, তখন একীভূত করা যেতে পারে।’

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল)। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিডিবিএলের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৯৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর বাইরেও ব্যাংকটি অবলোপন বা গোপন করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি।

আর সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রভিশন ঘাটতি না থাকলেও সোনালী ব্যাংকের ডেফারেল সুবিধা নেওয়া আছে ৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বেসিক ব্যাংককে যুক্ত করা। এরই মধ্যে বেসিক ব্যাংক এ প্রক্রিয়ায় না যেতে সরকারের উচ্চমহলে চিঠি দিলেও প্রক্রিয়া থেকে সরে আসা ব্যাংকটির জন্য কঠিন। সে ক্ষেত্রে সিটির সঙ্গেই একীভূত হতে পারে বেসিক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৫ হাজার ১৯৫ টাকার সঙ্গে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঘাটতি কম দেখানো আছে ৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়াবে ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির মন্দ ঋণের কোনো নিরাপত্তা নেই।

শুধু তাই নয়, সরকারি এই ব্যাংক ২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। আর মূলধন ঘাটতি আছে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বর্তমানে সিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি নেই, নেই মূলধন ঘাটতিও। অথচ বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে পড়বে।

এ ছাড়া একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত ব্যাংক কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে রাকাবের বিতরণ করা ঋণ ৭ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া রাকাবের মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জোর করে একটা ব্যাংককে অন্য একটা ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দিলে তো ব্যাংক খাতের মূল সমস্যার সমাধান হবে না। খেলাপি ঋণে জর্জরিত পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা হচ্ছে। যেসব পরিচালকের কারণে পদ্মা ব্যাংকের আজকের এ পরিণতি তাদের কোনো শাস্তির আওতায় না এনে পাঁচ বছর পর নাকি তারা আবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে। এটা কোনো কথা হলো? প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি না মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক জোরপূর্বকভাবে তড়িঘড়ি করে মার্জ করে দিচ্ছে। এতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছেন। পুরো ব্যাংক খাতে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’


দুর্বল ব্যাংক   বাংলাদেশ ব্যাংক   একীভূত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমলে ৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া সূচকের বড় পতনের মধ্যদিয়ে লেনদেন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এতে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। 

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক এবং লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯০টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা বা দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি কমেছে ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকেরও গত সপ্তাহে বড় পতন হয়েছে। গত সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছে ৩০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৮২ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৬৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯৬০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৯৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ই-জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।

এছাড়া লেনদেনে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, বেস্ট হোল্ডিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, গোল্ডেন সন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফারইস্ট নিটিং এবং অ্যাডভেন্ট ফার্মা।


ডিএসই   মূলধন   শেয়ারবাজার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

প্রকাশ: ০৮:১৯ এএম, ১৮ মে, ২০২৪


Thumbnail

দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সেজন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধ- সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও তাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৪ মে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন। জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানের খরচও বহন করবে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো।

পাশাপাশি একই সময়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আয়োজনে আন্তর্জাতিক ব্যাংক সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আরও ২৫ জন এমডি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এসব ব্যাংক এমডির বিদেশ যাওয়াসংক্রান্ত নথি অনুমোদন করেছে। ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংকে বিশেষ জোর দিয়েছে। এ জন্য নানা প্রচারণাও চালাচ্ছে ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্র   ব্যাংক   এমডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

প্রকাশ: ০৮:৫৫ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন । অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও।

জানা গেছে, ২৪ মে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট–সংক্রান্ত প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। 

ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন। 

জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানের খরচও বহন করবে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র   অফশোর ব্যাংকিং  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশিদের ৫.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে বিদেশে

প্রকাশ: ১০:৩৭ এএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশিদের প্রায় ৫ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের অফশোর সম্পদ আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সম্পদের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে, বাকিটা ইউরোপ ও আমেরিকায়।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ট্যাক্স অবজারভেটরির প্রকাশিত অ্যাটলাস অফ অফশোর ওয়ার্ল্ড শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব জানা গেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অফশোর বিনিয়োগের ২০২২ সালের তথ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ট্যাক্স হেভেনে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বল্প কর দিয়ে বা বিনা করে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর বিনিয়োগকৃত এই সম্পদকে অফশোর সম্পদ বলা হয়।

২০২১ সালে ট্যাক্স হেভেনে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন অফশোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ১৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, হংকংসহ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, না জানিয়ে এই অফশোর বিনিয়োগে শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন কর পাওয়া যায়নি বলে অনুমান করা যায়।

এতে আরও দেখা গেছে, ট্যাক্স হেভেনে রিয়েল এস্টেট খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ করা মোট অফশোর সম্পদের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের বেশিরভাগই সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে। এছাড়া লন্ডন ও প্যারিসে কিছু বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অফশোর রিয়েল এস্টেট শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন হয় কিংবা জটিল অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে ভিন্ন দেশের কোনো বাসিন্দার মালিকানাধীন হয়ে থাকে যেখানে প্রকৃত মালিকের পরিচয় অস্পষ্ট থাকে।'

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) সাম্প্রতিক একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ের ৬৪১টি আবাসিক সম্পত্তির মালিক, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২২৫ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। সংস্থাটি ২০২২ সাল থেকে এ অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে।

ওসিসিআরপি বলছে, দুবাই অফশোর বিনিয়োগের জন্য জনপ্রিয় কারণ 'পলাতক অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আমিরাত যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখায় না।'

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'তদন্তাধীন বা অন্য কোথাও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিরা কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই সম্পদ কিনতে পারে এবং মালিক হয়ে যেতে পারে তা বোঝা কঠিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজেদেরই এসব ঘটনা চিহ্নিত করতে পারা উচিত এবং সম্পদগুলো টার্গেট করে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করা উচিত।'


বাংলাদেশি   বিলিয়ন   ডলার   বিদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রায় এক মাস হতে চলল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গতকাল এ ব্যাপারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে, তার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যখন আর্থিক খাতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডলার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নানা রকম গুজবকে উস্কে দিচ্ছে। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক খাত নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত খবরগুলো সরকারের ইমেজ নষ্ট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একলাফে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া, সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে দেওয়া কিংবা ব্যাংক একীভূতকরণ; সবগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক লেজেগোবরে অবস্থায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং প্রত্যেকটি কাজের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অদৃশ্য কারণে সে পথে হাঁটছে না। এই না হাঁটার ফলে নানা রকম গুজব এবং নেতিবাচক সংবাদ উস্কে দেওয়া হচ্ছে।

কদিন আগেই রিজার্ভ চুরি নিয়ে এক গুজব ছড়ানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই তথ্য নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন মানুষ গুজবকে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমবান্ধব। তিনি যে কোন বিদেশ সফর করে এসে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেন এবং এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি গণমাধ্যমের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?

বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে টকশোগুলোতে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ব্যক্তিরা এসে নানা রকম সমালোচনা করছে এবং এই সমস্ত সমালোচনা কোনরকম সেন্সরশিপ ছাড়াই করা হচ্ছে। সরকারের যখন এই অবস্থান তখন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন ভূত আছে? যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করছে।

কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক মাস ধরে এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। দেশে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ রকম একটা বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেবেন না, গণমাধ্যম বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবে না- এটি এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

অনেকেই মনে করছেন, কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে থাকা কোন ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে যেন সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়, গুজব ছড়ানো সহজ হয় এবং অসত্য মিথ্যা তথ্য যারা পরিবেশন করছে তাদেরকে উস্কে দেওয়া হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন তথ্যই গোপন রাখা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে কোন তথ্য গোপন করতে পারেনি। তারা ডলারের দাম বৃদ্ধির আগেই সব খবর প্রকাশ করেছে। স্ক্রলনীতির সংবাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্যই কী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কোন মহল সক্রিয়?


বাংলাদেশ ব্যাংক   সাংবাদিক   গণমাধ্যম   অর্থনীতি  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন