দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার
ব্যয় বাড়ছে। গত বছরের প্রথম ছয় মাসেই পরিবারে শিক্ষা ব্যয় আগের বছর ২০২২ সালের তুলনায়
প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ বেড়েছে। আর এই ব্যয়ের বড় কারণ হলো কোচিং-প্রাইভেট
এবং নোট গাইড। এমনটাই বলছে নতুন এক গবেষণার তথ্য।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর
মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে করা ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর
টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে শিক্ষার এমন আরও নানা রকমের তথ্য তুলে
ধরা হয়েছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩’
নামে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ
করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী
পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেছেন এখন তাঁরা
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে দেবেন। তবে গবেষণাকালে
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরাও যুক্ত ছিলেন এবং তাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য
তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। সারা
দেশের ৮ বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও ৫টি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে
তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা
মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ২২৫ জন কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের চিত্রটি বের করা হয়েছে পঞ্চম
শ্রেণি এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে।
তিনি বলেন, ’২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর)
দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩
হাজার ৮৮২ টাকা। তবে শহরাঞ্চলে এই খরচ বেশি। মফস্সল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু
বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা; যা শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা।
কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা।
২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর
জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্সল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা
এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ক্ষেত্রেই
প্রধানত ব্যয় হয়েছে প্রাইভেট টিউটরের বেতন ও নোট বা গাইড বই বাবদ’।
গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে
৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মহামারির পরে তাদের নতুন
শ্রেণির পাঠ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী
পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধায় ছিল।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন-চতুর্থাংশের
বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের সহায়তা নিয়েছে বা কোচিং সেন্টারে গিয়েছে। শিক্ষার্থী
ও অভিভাবক উভয়ের কাছ থেকে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান না
হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাইড বইয়ের ওপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায়
এই নির্ভরতার হার ছিল যথাক্রমে ৯২ ও ৯৩ শতাংশ।
প্রাথমিক পর্যায়ের ৪১ শতাংশ ও মাধ্যমিকের
৫৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাদের
বেশির ভাগই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ৮ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ১৭ শতাংশ স্কুলের কাজে বা লেখাপড়াসংক্রান্ত কাজে ইন্টারনেটের
ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে।
এদিকে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের
প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষকের ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং (অনলাইন ও সশরীরে)’ পদ্ধতি সম্পর্কে
সুস্পষ্ট ধারণা নেই।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার সংক্রমণজনিত
পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটি বিদ্যালয় ছাড়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০২০ সালে প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত এমন শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ২০২৩ সালে এসে দেখা গেছে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ
শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঝরে পড়া
মহামারির জন্য প্রভাবিত। এ জন্য যে কারণগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হলো, মহামারির কারণে
নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর আরও কমে যাওয়া, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য অভিভাবকদের খরচ বৃদ্ধি,
মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং বিদ্যালয় থেকে যথাযথ নির্দেশনার
অভাব।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করা
হয়েছিল তারা বিদ্যালয়ে ফিরতে আগ্রহী কি না? জবাবে প্রাথমিক স্তরে ৫৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক
স্তরে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তারা আর বিদ্যালয়ে ফিরতে আগ্রহী নয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা
বর্তমানে কী করে সেটিও জানার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়। তাতে প্রাথমিক স্কুল বয়সী
শিশুদের ৪১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৪৯ শতাংশ বলেছে তারা কাজ বা শিশুশ্রমে নিয়োজিত
আছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া
মেয়ে শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। একটি ছোট অংশ বলেছে, তারা
গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত এবং অন্যরা বলেছে তারা কিছুই করছে না।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসায় স্থানান্তরের একটি প্রবণতা দেখা গেছে। মাধ্যমিক স্তরের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে এ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (৬ দশমিক ৪ শতাংশ) ছিল। শিশুরা সাধারণত মূলধারার স্কুলগুলোয় বেশি পড়ালেখা করে। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে তাদের অভিভাবককে সন্তানের জন্য মাদ্রাসা বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিভাবক ধর্মীয় কারণকে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এক–পঞ্চমাংশ বলেছেন মাদ্রাসা বাড়ির কাছে ও মহামারি চলাকালে মাদ্রাসা খোলা ছিল এবং মূলধারার স্কুলগুলো তখন বন্ধ ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও
করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি ও পরিকল্পিত আর্থিক সহায়তা বাড়ানো, বিবাহিত মেয়েদের
উপবৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নিয়ম বাদ দেওয়া, অভিভাবকদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ
স্থাপন, শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতির মাত্রার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ক্লাসসহ উপযুক্ত সহায়তা
করা, শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া ইত্যাদি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ গবেষণা দলের প্রধান
ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, করোনার কারণে বড় অভিঘাত
হয়েছে। কিন্তু সেটা যেন আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয়
শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য দেন গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ
শাহাদাত হোসাইন, মো. আহসান হাবিব।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী
২০২২ সালে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীপিছু
পরিবারে গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২
২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ খরচ ২৫
শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৭
২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীপিছু
পরিবারের ব্যয় ২৭ হাজার ৩৪০
২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৭১২
শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা
মন্তব্য করুন
আগামী ৮ মে শুরু হচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট। এদিনের সকল পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসিকে পাঠিয়েছে ইসি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। ২০২২ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষ (নিয়মিত, অনিয়মিত ও গ্রেড উন্নয়ন) পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী ৮ মে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২০২২ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স ১ম বর্ষ পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী ৮ মে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। আগামী ২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা/কর্মচারীকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
একই দিনে ভোটগ্রহণ ও উল্লিখিত পরীক্ষা কার্যক্রম একসঙ্গে চালানো সম্ভব নয় বলে উক্ত পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে ৮ মে এর পরিবর্তে অন্য কোনো (২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন ব্যতীত) তারিখে নির্ধারণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এই অবস্থায়, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ইসির ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ভোট ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৬ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
পুরো দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। টানা ২৮ দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে ইতিহাসের ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে দেশবাসী। দফায় দফায় হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতেও ঈদুল ফিতরের ছুটির পর গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তবে খোলার একদিনের মাথায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদরাসার ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে যেসব স্কুলে এসির ব্যবস্থা আছে বা পরীক্ষা চলমান আছে সেসব স্কুলের জন্য এবং ও লেভেল, এ লেভেল পরীক্ষা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না বলে আদেশে বলা হয়েছে।
গরমের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে হাইকোর্টের এমন আদেশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নিদের্শনা নিয়ে আসতে হবে? শুধু তাই নয়, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান তিনি।
এ সময় সাংবিধানিকভাবে যার যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন- সংবাদমাধ্যমে আসা এমন খবর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাকি অন্যত্র ছিলেন তাও দেখার বিষয়।
মন্ত্রী বলেন, স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়? যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
এর আগে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর ছুটি ঘোষণা নির্বাহী এখতিয়ার। কদিন ছুটি থাকবে বা থাকবে না এটা একটা বিশেষায়িত বিষয়। এটা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নয়।
বিদ্যালয় বন্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষামন্ত্রী
মন্তব্য করুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় তীব্র দাবদাহ
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
পুরো দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। টানা ২৮ দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে
ইতিহাসের ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে দেশবাসী। দফায় দফায় হিট এলার্ট
জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তীব্র এই দাবদাহে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ছে।
ঈদুল ফিতরের ছুটির পর গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুরু হয়েছে
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম।
তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কমেছে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার।
তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দেশেরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক
থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের প্রথম দিনেই সারা দেশে অনেকেরই ‘হিট স্ট্রোকে’ মৃত্যু হয়েছে প্রাইমারি স্কুলের শিশুসহ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের। আর
এভাবে চলমান দাবদাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কারণে সরকারের প্রতি অভিবাবকদের
একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) প্রথম দিনের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যেই তাপদাহে
মৃত্যুর আসঙ্খা বেগতিক দেখে রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ থেকে গতকাল রাতেই
বার্তা দেয়, তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে
ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা
ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার (২৯ এপ্রিল) বন্ধ থাকবে।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলছেন, ‘বেশি গরম
পড়ছে বলেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে এটার কোনো মানে নেই। কোন জেলার তাপমাত্রা
৪২ ডিগ্রির উপরে গেলে ঐদিন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে’। বিশ্ববিদ্যালয়ের-কলেজ
শিক্ষার্থীদের বেলায় বিষয়টা কিছুটা যৌক্তিক মনে হলেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার
মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিশুদের ক্লাস পাঠানোর বিরোধিতা করছেন অভিভাবক থেকে সচেতন
মহলের অনেকেই।
তাদের মতে, আরও এক সপ্তাহ সরাসরি ক্লাস বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস
করাতে পারত সরকার। স্কুলে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী হিট স্ট্রোকে মারা গেলে এর দায় কে নেবে?
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলাকালীন স্কুল বন্ধ রাখা বা অনলাইনে
ক্লাস নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই)
অনুযায়ী, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে শিশুরা। অস্বাভাবিক
তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। হিট স্ট্রোক ও পানি শূন্যতাজনিত
ডায়রিয়ার মতো, উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এই বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত
হয়ে থাকে।
যেখানে ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পরে
খুলেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা
ইউনেসকোর জানিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী মহামারির এ সময় শ্রেণীকক্ষের
বাইরে ছিল। সেখানে বর্তমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিশুদের স্বাস্থ ও নিরাপদের কথা
বিবেচনা করে সরকার তাপপ্রবাহ চলাকালিন শিক্ষাপ্রতিষ্টান বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য
বিবেচনয়া শিখাক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে মহামারি করোনার সময়ও করোনা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন
উদ্যেগ নিয়ে সফলতা দিয়ে তা মোকাবিলা করেছে। তখন যদি প্রায় দুই বছর স্কুলগুলো বন্ধ রেখে
মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে তাহলে এই তীব্র দাবদাহে স্কুলগুলো কি বন্ধ রাখে মৃত্যুর মিছিল
কি বন্ধ রাখা যায় না।
এছাড়াও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে। বর্তমানে দাবদাহে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চালু করলে হয়ত ‘হিট স্ট্রোক’ কিংবা গরমে শিশু শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক মারা যাওয়া বন্ধ হতে পারে। কেননা, গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়টাতে দেশের জলবায়ুর ফলে বৃষ্টি থাকে, আবহাওয়া অনেকটাই স্বাবাবিক থাকে। যার ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেত সহজেই।
দাবদাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিট স্ট্রোক সরকার তীব্রতাপ প্রবাহ
মন্তব্য করুন
পুরো দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। টানা ২৮ দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে ইতিহাসের ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে দেশবাসী। দফায় দফায় হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের প্রথম দিনেই সারা দেশে অনেকেরই ‘হিট স্ট্রোকে’ মৃত্যু হয়েছে প্রাইমারি স্কুলের শিশুসহ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের। আর এভাবে চলমান দাবদাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কারণে সরকারের প্রতি অভিবাবকদের একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।