নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ নভেম্বর, ২০২১
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) চিকিৎসাসেবা দিতে সাময়িক নিবন্ধনের জন্য ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর আবেদন করেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। আবেদনের সঙ্গে দেওয়া এমবিবিএস ডিগ্রির সনদ ও কাগজপত্রে চীনের ‘তাইসান মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র নাম। ফলে তা যাচাইয়ের জন্য ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইমেইলের মাধ্যমে সনদ যাচাইয়ের আবেদন করে বিএমডিসি। দুই সপ্তাহ পর সেই ইমেইলের জবাবে তারা জানায়, প্রেরিত নামের কোনো নিবন্ধিত ছাত্রের তথ্য তাদের কাছে নেই এবং ইমেইলে পাঠানো সনদটিও তাদের দেওয়া নয়। ফলে মিথ্যা প্রমাণিত হয় আফসারের এমবিবিএস ডিগ্রির প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট। এতে জাল ও ভুয়া সনদ সন্দেহে আফসারের রেজিস্ট্রেশন আবেদনটি বাতিল করে বিএমডিসি।
এ তালিকায় রয়েছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার একজন, সাতক্ষীরার তালা থানার একজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার একজন, ভোলার দৌলতখান থানার দৌলতখান পৌরসভার একজন, কুমিল্লার বরুড়া থানার দুইজন, চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) থানার একজন, ঢাকার সাভারের একজন, বাগেরহাট সদরের দুজন, ফেনীর দাগনভুঁইয়ার একজনসহ আরও কিছু ব্যক্তি।
অনেকেরই এমবিবিএস ডিগ্রির সনদ ও কাগজপত্রে রয়েছে চীনের সেই তাইসান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির নাম। এর আগে রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়েরও এমন তিনটি ভুয়া এমবিবিএস সনদ ধরা পড়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু তারাই নন, এমন আরও ২২টি ভুয়া ও জাল সনদধারীর বিষয়ে আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। এর মধ্যে গত মাসের শেষে মামলা হয়েছে ১০টি। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. আরমান হোসেনের পক্ষে বাদী হয়ে এ মামলা করেন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর এ কে এম আনোয়ার উল্যাহ। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ১৬টি মামলার তদন্ত চলমান।
এ বিষয়ে মামলার বাদী এ কে এম আনোয়ার উল্যাহ বলেন, ‘আগে বিদেশ থেকে যারা এমবিবিএস ডিগ্রি নিতেন তাদের বিএমডিসির নিবন্ধন পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সনদপত্র সত্যায়িত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিএমডিসিতে আবেদন করতে হতো। এরপর বিএমডিসি একটি পরীক্ষা নিতো। পরীক্ষায় পাস করলে প্রথমে ইন্টার্নশিপের জন্য সাময়িক ও ইন্টার্নশিপ শেষ হলে স্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হতো। দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভেরিফাই (যাচাই) করতো বলে নতুন করে যাচাই করা হতো না।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যাচাই প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড হওয়ায় পদ্ধতি উন্নত ও সহজ হয়েছে। এতে ভুয়া সনদ জমা দিলে তা যাচাই করতে গেলেই ধরা পড়ে। প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। যাদের সনদের সত্যতা মেলেনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেগুলো তদন্ত করতে দিয়েছেন। আশা করি, তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করবেন আদালত।’
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভুয়া সনদ ব্যবসায়ী চক্র ও এর সঙ্গে দূতাবাসের কেউ জড়িত না থাকলে সেটা সত্যায়ন করা যেমন সম্ভব নয়, আবার ভুয়া সনদধারীদের বিএমডিসির পরীক্ষায় কেউ জড়িত না থাকলে পাস করারও কথা নয়। এমন না হলে সনদ, দূতাবাসের সত্যায়নসহ সব কাজ করতে একটা সংঘবদ্ধ চক্র হয়তো থাকতে পারে।
বিএমডিসির তথ্য মতে, চলতি বছরের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটি থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৫১ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নিবন্ধন নিয়েছেন। বিডিএস (ডেন্টাল) নিবন্ধন করেছেন ১১ হাজার ৫৩৮ জন।
এছাড়া ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গত এক দশকে এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি নিতে বিদেশে পড়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছেন সেই সংখ্যা মোট দুই হাজার ৩৫৫ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সালে বিদেশে পড়তে গেছেন ৫৬ জন, ২০২০ সালে ৩৭ জন, ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৫ জনে।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে মোট জিপিএ ৯ (নয়) পায় তারা অনুমতি নিয়ে বিদেশে পড়তে যেতে পারে। যারা বিদেশে এমবিবিএস ও বিডিএস (ডেন্টাল) পড়তে যান তাদের মধ্যে দেশে ফিরে পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার্নশিপ পাওয়া ও চূড়ান্ত নিবন্ধন নম্বর নেওয়ার সংখ্যাও কম। বিদেশে পড়তে যাওয়া দুই হাজার ৩৫৫ জনের মধ্যে শুধু গত বছর পরীক্ষা দিয়ে এমবিবিএস ও বিডিএসের (ডেন্টাল) চূড়ান্ত নিবন্ধন পেয়েছেন ১০০ জনের মতো। এর আগে এই সংখ্যা ছিল আরও কম। এছাড়া চূড়ান্ত নিবন্ধন পরীক্ষায় অনেকে পাসও করেন না।
জানা যায়, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বিডিএস (ডেন্টাল) চূড়ান্ত নিবন্ধন পরীক্ষায় কেউ পাস করেননি। ২০২১ সালে পরীক্ষায় অংশ নেবেন মাত্র চারজন। প্রাথমিক নিবন্ধন নিয়ে যারা বিদেশে যান তাদের অনেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন নেন না কিংবা নিতে পারেন না। ফলে চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য আবেদন না করা পর্যন্ত তাদের ডিগ্রি ভুয়া কি না সে ব্যাপারে জানারও সুযোগ থাকে না। তবে এর একটি অংশ আবার মেডিকেল ডিগ্রি নিতে বিদেশ গেলেও ডিগ্রি নেন অন্য বিষয়ে বা অন্যকিছু করেন। কেউ কেউ আর দেশেও ফেরেন না।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য অনুমতি বাধ্যতামূলক। যারা বিএমডিসির নিবন্ধন নিয়েছেন, সেই তুলনায় উপজেলাসহ সারাদেশে হিসাব করলে নিবন্ধন ছাড়াও অনেক চিকিৎসক পাওয়া যাবে। উচ্চশিক্ষার নামে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিচ্ছে। এগুলোর জন্য প্রয়োজন সঠিক যাচাই প্রক্রিয়া। অন্যথায় এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, ভুয়া সনদ দিয়ে যারা চিকিৎসা করছেন তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে। আমরা চাই, নজরদারি কিংবা ভালোভাবে তদারকির মাধ্যমে যারা ভুয়া সনদ দিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
ভুয়া সনদ নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সংক্রান্ত মামলার তদন্তের বিষয়ে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অর্গানাইজেশন) আহসান হাবীব পলাশ বলেন, এ ধরনের মামলার তদন্ত আমরা আগেও করেছি। যারা বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসেন তাদের সব তথ্য ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে আমরা যাচাই করি। এর আগে এ ধরনের যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে সেসব ঘটনায় বাংলাদেশেও যারা জড়িত তাদেরও আমরা শনাক্ত করেছি। আশা করছি, বাকি মামলার তদন্তেও যারা এসব ভুয়া কাজ করেছেন তা বের হয়ে আসবে। এবারও জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
ভুয়া ও জাল সনদ দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছে অনেকে। উপজেলা পর্যায়ে সেটা দিন দিন বেড়েই চলছে বলে মনে করেন অনেকে। ফলে দেশজুড়ে প্রয়োজন সঠিক তদারকি।
মন্তব্য করুন
আগামী
৩০ মার্চ থেকে নিজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলা হাসপাতালে এবং ২০ উপজেলা হাসপাতালে পাইলটিংভাবে এ কার্যক্রম শুরু হবে। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সেবা দেবেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, মার্চ থেকেই সরকারি চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখন ৩০ মার্চ থেকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস চালু করার চেষ্টা করছি। প্রথমে কয়েকটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু করবো।
তিনি বলেন, বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সেখানে প্র্যাকটিস করতে পারবেন চিকিৎসকরা। এতে নার্স ও টেকনিশিয়ানরাও সপ্তাহে দুদিন করে কাজ করবেন। তারা যে সেবা দেবেন, তার বিনিময়ে তাদের সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে। তার একটি অংশ পাবেন চিকিৎসকরা। ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হবে। এর মধ্যে ৪০০ টাকা পাবেন অধ্যাপকরা। সরকারও একটি অংশ পাবেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, আমরা দুই-তিন মাস যাবৎ ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা ছিল, এ টার্মের শুরুতেই ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করা হোক। কিন্তু ডেঙ্গু ও করোনার কারণে তা আমরা শুরু করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমরা আস্তে আস্তে সব জেলা ও উপজেলায় শুরু করব।
মন্তব্য করুন
আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় মারবার্গ ভাইরাস ছড়িয়ে
পড়েছে। তানজানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া
গেছে।
অত্যন্ত
সংক্রামক এই ভাইরাসটি ইবোলার
সমগোত্রীয়। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে-
জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি এবং কখনও
কখনও চরম রক্তক্ষরণ।
সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়ে শত শত
মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাসের সংক্রমিত রোগীদের অর্ধেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
ভাইরাসটি প্রথম
শনাক্ত হয় ১৯৬৭ সালে। জার্মানির মারবার্গ, ফ্রাঙ্কফুর্টে এবং সার্বিয়ার বেলগ্রেডে একসাথে
ছড়িয়েছিল ওই ভাইরাস। প্রথমে ৩১ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় এবং সাতজনের মৃত্যু হয়।
উগান্ডা থেকে
আমদানি করা আফ্রিকান সবুজ বানর ভাইরাসটির জীবাণু বহন করছিল। তবে ভাইরাসটি তখন থেকে
অন্যান্য প্রাণীর সাথে যুক্ত হয়েছে। শূকর ও বাদুড়ও ভাইরাসটি বহন করে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৮৮২
সালে প্রথম ডা. রবার্ট কোচ যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করেন। যার ফলে উন্মোচিত হয় যক্ষ্মার রোগনির্ণয়
ও নিরাময়ের পথ। ১৯৯৩ সালে পৃথিবীতে যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন। সেই বছর থেকে মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে ২৪ মার্চ পালিত
হচ্ছে এই দিবসটি।
এখনো
যক্ষ্মা বিশ্বের অন্যতম ১০টি মৃত্যুজনিতের মধ্যে একটি। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকের কাছে যক্ষ্মা টিবি হিসেবেও পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে
যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
যক্ষ্মা
একটি ব্যাক্টেরিয়া বাহিত রোগ। মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করে। যার ফলে এই যক্ষা রোগ
হয়। করোনাভাইরাসের মতো এই ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে
ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যে দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। একজনের হাঁচি-কাশি থেকে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে
যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে
১.
যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসে দেখা দেয়
যক্ষ্মা
রোগ ফুসফুস থেকে শুরু হলেও শরীরের অন্যান্য অংশেও (যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, লসিকা গ্রন্থি) প্রভাব ফেলতে পারে। ফুসফুসের রাইরে যে যক্ষ্মা হয়
তাকে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা বলা হয়।
২.
যক্ষ্মা একটি জন্মগত রোগ
আসলে
যক্ষ্মা কোনো জন্মগত বা জেনেটিক রোগ
নয়। যক্ষ্মা জীবনের যেকোনো সময় যে কাউকে সংক্রমিত
করতে পারে। এটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয় এবং এটি
একটি সংক্রমক রোগ।
৩.
ধূমপান না করলে যক্ষ্মা
হয় না
একজন
অধূমপায়ী ব্যক্তিও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই ধূমপান করা বা না করার
সঙ্গে যক্ষ্মার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে অথবা অন্যান্য কারণ যেমন ডায়াবেটিস, এইডস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের জন্য রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৪.
যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই
আজও
অনেকের মনেই এই ভীতি রয়েছে
যে একবার যক্ষ্মা হলে নিরাময়ের কোনো উপায় নেই, অর্থাৎ এই রোগের কোনো
চিকিৎসা নেই। সত্য হলো যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য প্রাথমিক রোগনির্ণয় খুবই জরুরি। যদি একজন রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান, নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাহলে যক্ষ্মা থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ সম্ভব। চিকিৎসা সম্পন্ন করে স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে যাওয়া যায়।
৫.
টিকা নিলে কখনো যক্ষ্মা হবে না
জন্মের পরই এখন শিশুদের বিসিজি টিকা (যক্ষ্মার টিকা) দিয়ে দেওয়া হয়। টিকা দেওয়া থাকলে যক্ষ্মা মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা কমে যায়। তবে এটি কিন্তু যক্ষ্মাকে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। তাই যক্ষ্মা প্রতিরোধে সচেতনতা আবশ্যক।
মন্তব্য করুন
দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এখনও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এগুলো দূর করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র আলোকে আইনটিকে সংশোধন করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন: গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা’-শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। তামাকের এই সর্বগ্রাসী ক্ষতি প্রতিরোধে ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনে। তারপরও আইনটিতে বেশকিছু দুর্বলতা রয়েছে গেছে। তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাংবাদিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।’
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিকাল রিসার্চ) ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান। তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যান্সার, বক্ষব্যাধি এবং অন্যান্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। যতো দ্রুত আইনটি সংশোধন করা হবে ততো বেশি মানুষের জীবন বাাঁচানো সম্ভব হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ তামাকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো- সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
এদিকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ১৭ জন সাংবাদিককে এনসিডি (নন-কমিউনিকেবল ডিজিস) মিডিয়া ফেলোশিপ আওয়ার্ড ২০২২ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১১ জন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, তিনজন করে অনলাইন ও টিভিতে কর্মরত। বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
এ সময় তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে এসডিজি-গোল পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা, ইউনুছুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফজিলাতুন নেসা মালিক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বি, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স বাংলাদেশের ম্যানেজার (অ্যাডভোকেসি) আতাউর রহমান মাসুদ প্রমুখ।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দুর্বলতা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল
মন্তব্য করুন
রমজান মহান আল্লাহর রহমত এবং তার সান্নিধ্য লাভের সুবর্ণ সুযোগসংবলিত একটি মাস। এবারও রমজান আসছে গরমের দিনে। এসময় প্রায় ১৫ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হবে সবাইকে। তাই এসময় খাবারে একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ইফতারিতে এমন কিছু খাওয়া যাবে না যাতে, পেটে গ্যাস, বদহজম ও নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। রোজায় সুস্থ থাকতে তাই বাকি ৯ ঘণ্টা পরিকল্পিতভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে।
যক্ষ্মা একটি ব্যাক্টেরিয়া বাহিত রোগ। মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করে। যার ফলে এই যক্ষা রোগ হয়। করোনাভাইরাসের মতো এই ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যে দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। একজনের হাঁচি-কাশি থেকে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে