ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

তদন্তে আস্থা কুড়োচ্ছে পিবিআই

প্রকাশ: ০৯:২৫ এএম, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২


Thumbnail তদন্তে আস্থা কুড়োচ্ছে পিবিআই

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর হাত ধরে একের পর এক মামলার জট খুলছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রত্যেকটি ঘটনার এতো দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে যে, পিবিআই এর তদন্তকে ‘ম্যাজিক’ বলে অভিহিত করছে দেশবাসী। 

ছয় বছর আগের ঘটনা। চট্টগ্রাম থেকে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাস থামে গাবতলীর সালসাবিল পেট্রল পাম্পের পাশে। সব যাত্রী নিজেদের মালামাল নিয়ে নেমে গেলেও পাওয়া যাচ্ছিল না চট্টগ্রামের এ কে খান কাউন্টার থেকে তুলে দেওয়া একটি হলুদ রঙের ট্রাংকের মালিককে। এতে ঈগল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজারের সন্দেহ হয়। তখনই তিনি খবর দেন গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ এসে ট্রাংকটি খুলেই ভেতরে পায় এক অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ। বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।

সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম এ কে খান কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে পরের কাউন্টার থেকে একজন নারী উঠবেন জানিয়ে তড়িঘড়ি করে ট্রাংকটি বাসের বক্সে তুলে দেন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। কিন্তু পরের কাউন্টারে আর কোনো নারী ওঠেননি। গাবতলীতে সেই ট্রাংকটি খুলে পাওয়া মরদেহের কোনো পরিচয় না মেলায় দারুসসালাম থানা পুলিশ এ সংক্রান্ত একটি মামলা করে এবং লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহটি ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। থানা পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটির তদন্ত করলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেলেনি ওই নারীর পরিচয় কিংবা হত্যার কোনো রহস্য।

দীর্ঘদিন এই হত্যা নিয়ে কিছু না হওয়ায় আসামি হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন ঘটনা সেখানেই শেষ। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। প্রায় দুই বছরের তদন্তে চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে উদ্ঘাটিত হয় ঘটনার রহস্য। 

জানা যায়, সেই নারীর নাম শম্পা খাতুন, তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কথিত স্বামী রেজাউল করিম স্বপন শ্বাসরোধ করে শম্পাকে হত্যা করে মরদেহ গোপন করতেই ট্রাংকে ভরে ঈগলের বাসে ‘অজানা গন্তব্যে’ পাঠিয়ে দেন।

২০১৫ সালের ৩ মে ওই মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে জানা যায়, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এসময় শম্পা হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। সেখানে শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের একটা সময় পর্যন্ত একত্রে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও বিয়ে করেননি।

পরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে রেজাউল করিম ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে শম্পাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মরদেহ গোপন করতে সেটি ট্রাংকে ভরে ঈগল পরিবহনের ওই বাসে তুলে দেন। শম্পার বাবাকে জানান, তাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে শম্পা বাড়িতে না পৌঁছালে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। না পেয়ে শম্পার ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরেই হত্যাকাণ্ডটির রহস্যভেদ করে পিবিআই।

মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় তার স্বামী এসপি বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার তথ্য বের হয়ে এসেছে পিবিআইয়ের তদন্তেই। পরে ২০২১ সালে কুমিল্লা থেকে রেজাউল করিম স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে আদালতে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, মামলাটি তদন্তে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এটি আদালতে বিচারাধীন। এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলও করা হয়েছে।

শুধু এমন হত্যাকাণ্ডই নয়; ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, চুরি, প্রতারণা, জালিয়াতি, মাদকসহ থানায় করা (জিআর) ১৬ ধরনের তফসিলভুক্ত মামলার পাশাপাশি তফসিলবহির্ভূত অন্যান্য মামলা এবং আদালতের নির্দেশে (সিআর) নানা ধরনের মামলার তদন্তে ‘চমক’ দেখাচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই। এসব মামলার কোনোটা থাকে শম্পা হত্যার মতো নানা রহস্য আর জটিলতায় পূর্ণ। কোনোটা আবার বেশ চাঞ্চল্যকর। এসব মামলার তদন্তে রহস্য উদ্ঘাটন করতে অ্যানালগ পদ্ধতির পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তিরও সহযোগিতা নেয় পিবিআই। ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংস্থাটি তদন্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নেয় নানা কৌশল। যেমন- বাদী ও বিবাদীর বিস্তারিত বক্তব্য নেওয়া, পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থাকে গুরুত্ব না দেওয়া, সামাজিক মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয় তার ওপরও দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি।

আস্থা বাড়ছে মানুষের, বাড়ছে তদন্তের চাপও

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, তদন্তে কারও প্রতি আনুগত্য যেন দেখাতে না হয়, সেজন্য যেমন কৌশল নেয় পিবিআই, তেমনি এড়িয়ে চলে রাজনৈতিক প্রভাবও। তাছাড়া শুরুতেই কাউকে দোষী হিসেবে মনস্থির না করে তদন্ত চালায় সংস্থাটি। রহস্যজনক ও ক্লুলেস (আলামতহীন) ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের জন্য বিধি অনুযায়ী করা হয় টিম। আন্তর্জাতিক মানের নানা প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও তদারকির ফলে পুরো টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।

পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় থাকে বলে পিবিআইয়ের তদন্তের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে। মানুষের আস্থা বাড়ায় এবং জটিল ঘটনার রহস্য উদঘাটনের নজির তৈরি করায় পিবিআইয়ের ওপর মামলা তদন্তের চাপও বাড়ছে। সীমিত লোকবল, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও সময়ের স্বল্পতার মধ্যেই মামলার সংখ্যার ঊর্ধ্বমুখিতা ভাবিয়ে তুলছে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের।

পিবিআইয়ের আইন ও গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ১৫টিরও বেশি ইউনিটের মধ্যে অন্যতম পিবিআই ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে গড়া পিবিআই ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একটি নিজস্ব বিধিমালা পেলেও মামলা তদন্তের কাজ শুরু করে ২০১৫ সালের ১০ জুন থেকেই। এরই মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক মামলার প্রকৃত চিত্র তুলে এনে প্রশংসা কুড়িয়েছে সংস্থাটি। রাজধানীর রমনায় ৩০ বছর আগের সগীরা মোর্শেদ হত্যা মামলার আসামি শনাক্ত, ২৪ বছর পর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন, ২০১৯ সালে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীকে সময়মতো অক্সিজেন না দিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগের তদন্ত আলোচনায় এনেছে পিবিআইকে।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ধনী কিংবা গরিব, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমান গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত করে পিবিআই। এ কারণে কয়েক বছর ধরে পিবিআইয়ের ওপর মামলা তদন্তের চাপ বেড়েই চলেছে। রাজধানীর রমনায় ৩০ বছর আগের সগীরা মোর্শেদ হত্যা মামলার আসামি শনাক্ত হয়েছে পিবিআইয়ের তদন্তে

সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার দেওয়া তথ্য মতে, আদালতের নির্দেশে (সিআর) ২০১৮ সালে পিবিআই যেখানে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল ১৫ হাজার ৫১টি মামলার, ২০২১ সালে তাদের কাঁধে এসেছে ২৮ হাজার ৩৯৯টি মামলা। সংস্থাটি ২০১৮ সালে যেখানে পাঁচ হাজার ৪৬৯টি থানায় দায়ের হওয়া মামলা (জিআর) তদন্তের দায়িত্ব পায়, ২০২১ সালে তাদের দপ্তরে এসেছে ছয় হাজার ৮৭১টি মামলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পিবিআই আদালতের নির্দেশে (সিআর) মোট ৮৭ হাজার ২৮২টি মামলার তদন্ত করেছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৭৩টি মামলার নিষ্পত্তি করেছে তারা। এসব মামলার ২৭ হাজার ৫৩০টিতে দেখা গেছে, এজাহারে যে অভিযোগ ছিল তা তদন্তে অপ্রমাণিতই হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭৯২টি জিআর মামলার মধ্যে পিবিআই নিষ্পত্তি করেছে ১৭ হাজার ৯৫টি মামলা। এসব মামলার চার হাজার ৯৯০টিতে দেখা গেছে, এজাহারে যে অভিযোগ ছিল তা তদন্তে অপ্রমাণিত হয়েছে।

ইউনিটের তদন্ত ও অগ্রযাত্রার বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মানুষের আস্থা আছে কি না তা জানি না। তবে আমাদের কাজটা হলো, যে তদন্তগুলো আমাদের কাছে আসে সেগুলোর মধ্যে ছোটখাটো বিষয়, জটিল খুন, চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও জালিয়াতির মতো বিষয় থাকে। আমরা সব মামলা একই রকম গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, কোন পরিবার থেকে মামলা করা হয়েছে বা ভিকটিম আমাদের বিষয়বস্তু হয় না। বিষয়বস্তু হয় ঘটনা যেটা হয়েছে সেটিই ঠিকমতো তদন্তে উদ্ধার করা। তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনা একটু জটিল মনে হলে বিধি অনুসারে টিম করে দেই, যেন পরামর্শ করে তদন্ত এগোতে পারে। ফলে ছোট-বড় সব মামলায় চেষ্টা করা হয় ভিকটিম ও আসামি উভয়ই যেন বিচার পান। যিনি জড়িত ছিলেন না, তিনি যেন অভিযুক্ত না হন। আবার করেছেন এক অপরাধ, তাকে যেন অন্য কোনো অপরাধে যুক্ত না করা হয় বা দণ্ডের সুপারিশ না করা হয়।

হত্যা মামলার বাদীই তদন্তে আসামি প্রমাণিত

আদালতের নির্দেশে প্রতারণা, জালিয়াতি, জমিজমার বিরোধ, হত্যার হুমকিসহ প্রভৃতি মামলার সবচেয়ে বেশি তদন্ত করে পিবিআই। মামলার তদন্তে অনেক সময় খোদ বাদীকেই দোষী পাওয়া যায়। যেমন, গত বছর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মো. স্বপন মিয়া নামের এক চা বিক্রেতা হত্যাকাণ্ডে তার ভাই মো. রিপন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে বাদীর নিজেরই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য। ফলে বাদীই হয়ে যান বিবাদী।

ভুক্তভোগী স্বপন মিয়ার স্ত্রী পুতুল বলেন, আমার একটা ধারণা ছিল রিপনই কাজটা করছে। আর কেউ কখনো আমার জামাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া-গালিগালাজ করতো না সে ছাড়া। পুলিশ ঘটনাটা বের করতে পারেনি। পিবিআই তদন্ত করে রিপনই মারছে এটা বের করছে। এখন তার ফাঁসি হোক এটাই চাই।

এ ধরনের ঘটনায় শুধু সাধারণ মানুষই নন, পুলিশের সদস্যদেরও জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে এনেছে পিবিআই। চট্টগ্রাম নগরে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার বিষয়টিও বেরিয়ে আসে পিবিআইয়ে তদন্তে। সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেনের জড়িত থাকার কথা তার সহকর্মীদের জবানিতেও বের করে আনে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এসব তদন্তে ভুক্তভোগী বা তাদের স্বজনরা সন্তুষ্ট হলেও কিছু কিছু সময় ঝুঁকিতে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের, এমনকি কারও কারও কপালে অপবাদও জোটে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা নিজেরা কিছুটা ঝুঁকি নেই। যে মামলাগুলো আদালত থেকে আসে সে মামলার সব আসামির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে থাকি। তাদের ভাষ্যটা জানার চেষ্টা করি। এতে আমাদের তদন্তে কিছুটা সুবিধা হয়। আবার এমনও হয়েছে অনেকে জানেন না তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সুতরাং তাকে জিজ্ঞেস করে না এগোলে তদন্ত একতরফা হয়ে যেতো। কিন্তু অসুবিধাটি হলো, বাদী যখন দেখেন, পিবিআইয়ের অফিসে বিবাদীরা বসে আছেন, তখন তিনি ভাবেন নিশ্চয়ই কোনো আর্থিক বা কোনো সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে আনা হয়েছে। অনেক কিছুতেই বিরূপ চিন্তা তৈরি হয়। তবে অভিযোগটা আমরা শুরু থেকে মাথায় নিয়েই তদন্তে প্রকৃত বিষয়টি বের করে আনার চেষ্টা করি।

পিবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাদের তদন্তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য পিবিআই ল্যাবরেটরিতে বিশেষ ডিভাইস ও সফটওয়্যার যেমন আছে, তেমনি ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের জন্য সহায়তা নেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের। এভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে বেরিয়ে আসছে প্রকৃত ঘটনা। ফলে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন নিরপরাধ ব্যক্তি, ধরা পড়ছেন আসল অপরাধী।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের বাসিন্দা মো. আব্দুল মতিন একটি হত্যা মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন। তিনিও নিরপরাধ সাব্যস্ত হয়েছেন পিবিআইয়ের তদন্তে। আব্দুল মতিন জানান, আমি গরিব মানুষ, তেমন কিছু নেই। একটা হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। অথচ আমি কিছু জানিই না। পরে পিবিআই এটার তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের ধরে। তদন্তটা ভালো হওয়াতে বেঁচে গেছি, নইলে আমার পরিবারসহ সবাই শেষ হয়ে যেতাম।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকার চারটিসহ সারাদেশে মোট ৪৯টি ইউনিট নিয়ে কাজ করছে পিবিআই। কয়েক বছর আগেও তাদের তদন্তের ৭৫ শতাংশ মামলা আসতো আদালত থেকে (সিআর)। কিন্তু এখন তাদের মামলার প্রায় ৮১ শতাংশই আদালত থেকে আসা। এসব মামলার অধিকাংশই রহস্যজনক মৃত্যু, প্রতারণা, অর্থনৈতিক প্রতারণা ও জালিয়াতির। এগুলোর তদন্ত সাধারণ মামলার চেয়ে বেশি সময়সাপেক্ষ। ফলে একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে দুই হাজার ১১৬ পুলিশ সদস্য ও ১৩০ জন সিভিল সদস্যের মোট দুই হাজার ২৪৬ জন লোকবল নিয়ে গড়া সংস্থাটি সময় দিয়ে নিখুঁত তদন্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, সীমিত জনবল নিয়েও তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় তদন্তের গতিটা মোটামুটি সঠিক লাইনেই থাকে। তবে সবসময় যে আমরা পারি তা নয়। সেখানে অনেক সময় মেধার অভাব থাকে, বোঝার ভুল থাকে, নিজস্ব কিছু ত্রুটি থাকে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যেন ভিকটিম ও আসামি উভয়েই ন্যায়বিচার পান।

তদন্ত সংস্থায় জনবল বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতে বিচার হয় পিবিআইসহ রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থার সঠিক তদন্তের ওপরই। দেশে বিচার হয়, কিন্তু ন্যায়বিচার নিয়েই প্রশ্ন ওঠে কিছু কিছু সময়। নিম্ন আদালতে বিচার প্রভাবিত হয় অনেক সময়। কিন্তু তদন্ত যদি ভালো হয়, তখন বিচারটাও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে পিবিআইসহ তদন্ত সংস্থাগুলোর জনবল ও সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, সমাজে নানা অপরাধ হয়। এসব অপরাধের মামলা তদন্তে পিবিআইসহ তদন্ত সংস্থাগুলো কাজ করে। বিচার হচ্ছে, কিন্তু ন্যায়বিচার নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে। তদন্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ জনবল নিয়ে কাজ করে। এই জনবল নিয়ে এত তদন্ত করা কঠিন। তাই তাদের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যেন না হয় সেটিও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

ড. আমানুল্লাহ বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ভালো কাজের জন্য অন্য দেশের মতো আমাদের দেশে প্রণোদনা নেই। কিন্তু ভালো কাজের স্বীকৃতি কিংবা উৎসাহ দিতে প্রণোদনা দেওয়া উচিত।

পিবিআই   তদন্ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।

বুধবার (১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

চিঠিতে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকাল পত্রিকায় “সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাম্রাজ্য যুক্তরাজ্যে” শিরোনামে এবং মানবজমিন পত্রিকায় “ব্রিটেনে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদের ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সাম্রাজ্য" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ব্লুমবার্গের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে এ দুটি সংবাদ প্রকাশিত হবার পরেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করে। 

এ কারণে চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দুদককে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন এই আইনজীবী।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী   দুর্নীতি   দুদক   সাইফুজ্জামান চৌধুরী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

‘মিতুকে আমার ছেলেই খুন করেছে, তাকে আপনি মাফ করে দিন’

প্রকাশ: ১০:৪৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব কথা বলেছেন নিহত মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ।

সাক্ষ্যে বলেন, ‘মিশন শেষ করে ফিরে এসেই বাবুল চীনে চলে যায়। সেখানে বসেই মিতুকে মারার পরিকল্পনা করে। মিতুকে খুন করার জন্য মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে দেয়, মুসার স্ত্রী এ কথা বলেছেন। আর ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর সঙ্গে বাবুলের বিয়েবর্হিভূত সম্পর্কের জেরেই মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’

মিতু হত্যা মামলার ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে আদালতকে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে বাবুল আক্তারের মা মারা যাওয়ার ১৫ দিন আগে আমাকে কল করেন। বলেন- বেয়াইন, মিতুকে আমার ছেলে খুন করেছে। তাকে আপনি মাফ করে দেন। আমি তাকে বলি- বাবুল মরলে কি এ কথা আপনি বলতেন? এসব আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলেছি। তদন্তে সবকিছু উঠে আসেনি।’

আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্যে শাহেদা মোশাররফ আদালতকে বলেন, ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল ও মাহমুদার বিয়ে হয়। এরপর তাঁরা মোটামুটি সুখী ছিলেন। বাবুল পুলিশের চাকরিতে যোগদানের পর মাহমুদার সঙ্গে আচরণ পাল্টে যায়। বাবুল কক্সবাজারে বদলি হওয়ার পর সেখানে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন মাহমুদা বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছিলেন।

শাহেদা মোশাররফ আদালতকে বলেন, বাবুল কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকাকালে সেখানে একটি হোটেলে ওঠেন। একই হোটেলে মাহমুদাও ওঠেন। বাবুল ও একটি বিদেশি সংস্থায় কর্মরত সেই নারীকে একটি কক্ষে দেখতে পান মাহমুদা।

মাহমুদার মা জানান, ২০১৪ সালে বাবুল জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে যান। বাসায় রেখে যান তাঁর একটি মুঠোফোন। তাতে বেশ কয়েকটি খুদে বার্তা পান মাহমুদা। বাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সেই নারী বাবুলকে খুদে বার্তাগুলো দিয়েছিলেন।

মিশন থেকে দেশে ফেরার পর বাবুল চীনে যান জানিয়ে শাহেদা মোশাররফ বলেন, ‘মূলত সেখানে বসে বাবুল মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ত্র কেনার জন্য বাবুল তাঁর সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার ওরফে মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দেন। আর পুরো খুনের ঘটনায় মুসা তাঁর সহযোগীদের ব্যবহার করেন। মাহমুদাকে খুনের জন্য বাবুল যে তিন লাখ টাকা দেন, তা ছিল মাহমুদার ব্যবসার টাকা।’

আদালতে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শাহেদা মোশারফ মেয়ের হত্যার পেছনের ঘটনা বলার সময় কিছুক্ষণ পরপর কাঁদতে থাকেন। চোখ মুছে আবার কথা বলেন। এ সময় আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন বাবুল আক্তার। পুরোটা সময় বাবুল ছিলেন নীরব।

আজ শাহেদা মোশারফের সাক্ষ্য শুরুর আগে দুপুরে তৎকালীন পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতে বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাঁচলাইশ থানার ওসি ছিলেন। ওসি হিসেবে তখন মামলা রেকর্ড করেছিলেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর শাহেদা মোশাররফকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। পরে আদালত জেরা মুলতবি রেখে বুধবার পরবর্তী দিন রাখেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাহমুদা খানম। এই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এই মামলায় ৪৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।


মাহমুদা খানম মিতু   পুলিশ সুপার   বাবুল আক্তার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

আলমারির ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন কুকি-চিনের প্রধান সমন্বয়ক

প্রকাশ: ০৭:১২ পিএম, ০৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বান্দরবানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ‘প্রধান সমন্বয়ক’ চেওসিম বমকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫। 

রোববার (৭ এপ্রিল) বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, কেএনএফের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে আটক করে হয়েছে। নিজ ঘরে আলমারির ভেতর লুকিয়ে ছিলেন তিনি। র‌্যাবের বিশেষ দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। 

এর আগে রোববার (৭ এপ্রিল) বান্দরবানের থানচি ও রুমায় কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে যৌথ বাহিনীর কম্বিং অপারেশন শুরুর কথা গণমাধ্যমকে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ফিল্মি কায়দায় হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করা হয়।আগের রাতের এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরদিন ৩ এপ্রিল সকালে থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে এসব ঘটনায় ৭টি মামলা করা হয়। তবে এ মামলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর কোনো নেতা ও সশস্ত্র সদস্যদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়নি।

কুকি-চিন   কেএনএফ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

পাঁচ হাজার টাকার বাতি ২৭ হাজারে কিনেছে রেলওয়ে

প্রকাশ: ০৬:০৫ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পাঁচ হাজার টাকার বাতি ২৭ হাজার টাকায় কিনেছে রেলওয়ে। যন্ত্রাংশ কেনাকাটা সহ নানা অনিয়মের এমন প্রমাণ চিত্র পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়ে এমন তথ্য প্রমাণ পায়।

দুদক বলেছে, ‘বাজারে যেসব এলইডি বাতির দাম সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, সেসব বাতি রেলওয়ে কিনেছে ২৭ হাজার টাকায়।’

দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘রেলওয়েতে লিফটিং জ্যাক, ড্রিলিং মেশিন ও কাটিং জ্যাক ক্রয়সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখা যায়, এই পণ্যগুলোর প্রাক্কলিত দর ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেখানে এই পণ্যগুলো ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে কেনা হয়। যা পিপিপি ও পিপিআরের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা এগুলো ভালো করে পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৯০টি এলইডি লাইট ও এলইডি ল্যাম্প কেনার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর ক্রয়সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিটি এলইডি লাইট ২৭ হাজার ৭০০ টাকায় কেনা হয়েছে, যেগুলোর দাম বাজারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়তলীতে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে অভিযোগসংশ্লিষ্ট আরঅ্যান্ডআইয়ের মেরামত করা কক্ষ পরিদর্শন করা হয়। এ সময় ওয়াকিটকি ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।’

জানা গেছে, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে একই ঠিকানায় নিবন্ধিত দুটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে তাদের মধ্যে একটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই অনিয়ম প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটি কিসের ওপর ভিত্তি করে ওইসব পণ্যের বাজারমূল্য নির্ধারণ করেছে, সেসব সংক্রান্ত কোনো তথ্যউপাত্ত পায়নি দুদক।

দুদক   দুর্নীতি   রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাবেক ১২ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে। গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর আগে তিন মেয়াদে যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেরই দায়িত্ব পালনের সময়টি স্বচ্ছতার ছিল না। তারা নিজেদেরকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি। আর এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মেয়াদ এ রকম অন্তত এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ এখন বিভিন্ন সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। 

বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইস্তেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেছে। এই নীতির আওতায় দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই সাবেক এই সব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখা শুরু হচ্ছে। এই অভিযোগ তদন্ত শেষে  অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যে এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে মন্ত্রী মন্ত্রী ছিলেন এরকম অন্তত চার জন মন্ত্রী রয়েছেন। এই চারজন মন্ত্রীর মধ্যে আবার দুজন ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মোট চারজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং সেটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে যে সমস্ত মন্ত্রীরা ছিলেন, তাদের চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী ছিলেন। বিদেশে তার বিপুল সম্পদের তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। আর এই সম্পদ তিনি বৈধ পথে উপার্জন করেছেন, দেশ থেকে পাচার করেননি এ বক্তব্য রেখে ওই সাবেক মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে সরকার এখন নীরবে তদন্ত করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এছাড়াও ২০১৪ ও ১৮ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী থেকে ২০১৮ সালে পূর্ণমন্ত্রী হওয়া আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ আছে। মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের কাজ এবং মন্ত্রণালয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। ওই মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় একটি ভূমি অধিগ্রহণে মূল্যস্ফীতির ঘটনায় এখন তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী, পুত্র এবং তার সাবেক এপিএস এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই তদন্তে একাধিক বিষয় সামনে এসেছে। এছাড়াও ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় একজন গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি কেনাকাটায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখন পুনরায় শুরু করা হয়েছে। ওই সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগে দায়িত্বে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্তের আওতায় পড়েছে।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে যারা মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যে দুজন প্রভাবশালী হেভিওয়েট মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মোট ১২ জন সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এরকম দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বুঝা যাবে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আদৌ সত্যি নাকি এই অভিযোগগুলো নেহাতে তাদের বিরুদ্ধে ঈর্ষা পরায়ণ হয়ে করা হয়েছে। তবে দুর্নীতি দশন কমিশনের এবাধিক সূত্র বলছে, নির্মোহ ভাবে তদন্ত করা হবে এবং সরকার এব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করছে।

সাবেক মন্ত্রী   দুর্নীতি   তদন্ত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন