আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শ্রম আইন না মেনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মচারীকে বদলির অভিযোগ উঠেছে। এসব বদলির ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত, দুর্নীতিতে দায়গ্রস্থ এবং দুদকের মামলায় অভিযুক্ত বেশ কিছু কর্মচারীদের সপদে বহাল রেখে ট্রেড ইউনিয়নের অধিভুক্ত আওয়ামীপন্থি নিরীহ কর্মচারী এবং সিবিএ নেতাদের বেছে বেছে বদলি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, এই বদলির ফলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে একটি বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং যার প্রভাব আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পড়বে। মূলত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই শ্রম আইন না মেনে এ ধরনের বদলিগুলো করা হচ্ছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) মো. মুশফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই বদলি সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলা ইনসাইডারের হাতে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগের হিসাব সহকারী মো. মালেকিন নাসিরকে কুমিল্লা উপবিভাগে এবং একই বিভাগের হিসাব সহকারী মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে সিলেট ডিভিশনে বদলি করা হলো।
তবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, বদলি একটি অফিসিয়াল প্রক্রিয়া। অফিস প্রধান হিসেবে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা। এ পর্যন্ত তিন জনকে বদলি করা হয়েছে। সামনে আরও বদলি করা হবে।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে ট্রেড ইউনিয়নের আওতাধীন সেন্ট্রাল বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) নেতা মো. মালেকিন নাসিরকে কুমিল্লায় এবং মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে সিলেট ডিভিশনে বদলি করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৮৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সিবিএ-এর সভাপতি ও কতিপয় কর্মকর্তা বদলি করা যাইবে না। কোনো ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কোনো কর্মকর্তাকে তাহাদের সম্মতি ব্যতিরেকে এক জেলা হইতে অন্য জেলায় বদলি করা যাইবে না।’ অথচ বদলিকৃত এসব ব্যক্তিদের তাদের নিজের সম্মতি ব্যতিরেকে অনেকটা জোরপূর্বকভাবেই অন্য জেলায় বদলি করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল বার্গেনিং এজেন্টের (সিবিএ) কাজ হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের সাথে বার্গেনিং করে শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার আদায় করা। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদেরই বদলি করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার আদায় স্থিমিত হয়ে পড়বে- যা বাংলাদেশ শ্রম আইন পরিপন্থি। অথচ দুদক মামলার আসামীদের বদলি করা হচ্ছে না, যেখানে দুদক তাদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ৪২ জনের কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে মামলায় পড়ে জেলও খেটেছেন ভুক্তভোগীরা। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল শাহীন নামে একজন কর্মচারী অন্যতম। এছাড়াও জামাল উদ্দিন মাস্টার নামে অপর এক ব্যক্তি এই প্রতাণার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। মোস্তফা কামাল শাহীনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। মোস্তফা কামালকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে দুদক। কিন্তু মোস্তফা কামাল শাহীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে সপদে বহাল থেকে চাকরি করছেন।
দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও অবৈধ উপায়ে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ- জাগৃক’র বেশ কয়েকজন কর্তকর্তা-কর্মচারী। বিএনপি-জামায়াতের কোটায় চাকরি পেলেও এখন তারা বনে গেছেন সামনের সারির আওয়ামী লীগ অনুসারী। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন এস এম সামছুদ্দোহা। সামছুদ্দোহা ১৯৯৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিচয়ে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরি পান। চাকরির শুরুতে অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ হলেও অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন কয়েক বছরের মধ্যেই। তার আরেক সহযোগী মোস্তফা কামাল শাহীন। গণপূর্তের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই দুদকে মামলা হয়েছে, দুদক তাদেরকে অভিযুক্ত করেছে। অথচ তারা সপদে বহাল রয়েছেন। অদৃশ্য এক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
দুদকের অভিযুক্ত কর্মকতা-কর্মচারী, যাদের বিরুদ্ধে দুদকের দায়েরকৃত মামলা চলমান, কিংবা যাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক, তারা কি চাকুরিতে বহাল থাকতে পারেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মুনিম হাসান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, এটি তদন্ত করছে দুদক, সেক্ষেত্রে আমার কি সমস্যা? দুদক যদি তদন্ত শেষ না করে, সেটাতো আমার কিছু করার নেই। আমিতো দুদককে বলতেও পারি না যে, কেন তদন্ত শেষ করছেন না? দুদক আমার কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে সেটা আমি করতে পারি।
জাগৃক চেয়ারম্যান বলেন, যতদিন পর্যন্ত কেউ অভিযুক্ত না হচ্ছে, অর্থাৎ তদন্তকালীন সময়ে চাকরিতে থাকতে কোনো বাধা নেই। দুদক যদি চার্জশিট দিয়ে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করতো, সেক্ষেত্রে আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু এ ধরনের কোনো কাগজপত্র আমি পাইনি। বদলিটা করা যায়, মাত্র তিন জন লোক বদলি হয়েছে, এরপর আরও হবে। সামনে আরও কিছু লোক বদলি হবে।
বিএনপি-জামায়াতের লোকদেরকে রেখে আওয়ামী লীগের লোকদের বদলি করা হচ্ছে, এ ধরনের একটি কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? - এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি চাকরিতে- আমরা যারা সরকারি চাকরি করি, এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াত কোনো কিছু নেই। সবাই সরকারি কর্মচারী এবং সরকারি নিয়োগে এটা সরাসরি বলা আছে, আমরা রাজনীতি করতে পারবো না। এখানে ওইভাবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
শ্রম আইন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বদলি আতঙ্ক
মন্তব্য করুন
সাবেক ভূমিমন্ত্রী দুর্নীতি দুদক সাইফুজ্জামান চৌধুরী
মন্তব্য করুন
মাহমুদা খানম মিতু পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দুদক দুর্নীতি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে। গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর আগে তিন মেয়াদে যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেরই দায়িত্ব পালনের সময়টি স্বচ্ছতার ছিল না। তারা নিজেদেরকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি। আর এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মেয়াদ এ রকম অন্তত এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ এখন বিভিন্ন সংস্থাগুলো তদন্ত করছে।