ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

কাউন্সিলর রাজীবের ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

প্রকাশ: ০৮:৪৬ এএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২১


Thumbnail কাউন্সিলর রাজীবের ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব অপরাধলব্ধ প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় করেছেন। তারেকুজ্জামানের নামিরা এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে তিনি নিজে কোনো টাকা জমা দিতেন না। পরিচিতদের মাধ্যমে তিনি সেই ব্যাংক হিসাবে ১৪ কোটি টাকা জমা করান। ৪ বছরের ব্যবধানে (২০১৫ সালের ১ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর ২০১৯) ওই হিসাবে জমা হয় ২১ কোটি টাকার বেশি। অথচ তার নিজের নামে থাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় জমা হয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর সেই হিসাবগুলোতে বর্তমানে আছে মাত্র ২ হাজার ৭২৯ টাকা। 

২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে রয়েছে তার ডুপ্লেক্স বাড়ি, যেটির দাম তিন কোটি টাকা। আছে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধের কাছে সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট। রয়েছে তিনটি গাড়ি। অর্থ পাচারের অভিযোগে করা একটি মামলায় আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি তারেকুজ্জামান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ৩৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করেন। আদালতের নির্দেশে সেসব হিসাবে থাকা টাকার লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। ৩৩টি হিসাবের মধ্যে তারেকুজ্জামানের নামে পরিচালিত পাঁচটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করে সিআইডি। পরে এই তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও সিআইডি একটি করে মামলা দেয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারেকুজ্জামান কারাগারে আছেন।

নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ জানার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিভিন্ন ব্যাংকসহ নানা দপ্তরে চিঠি পাঠায় সিআইডি। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করে সিআইডি বলেছে, তারেকুজ্জামানের নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি নামেরা এন্টারপ্রাইজ এবং অপরটি নামেরা বিল্ডার্স।
নামেরা এন্টারপ্রাইজের নামে একটি ব্যাংক হিসাবে ৩ বছরের বেশি সময়ে (১৬ মে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর) জমা হয় ২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি। বর্তমানে সেটিতে জমা আছে ৯২ লাখ টাকা। আরেকটি হিসাবে এখন আছে ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে নামেরা বিল্ডার্সের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে মাত্র ২১ দিনে জমা হয় ১ কোটি ৫০০ টাকা। বর্তমানে সেখানে আছে ৫০ লাখ ৩৮০ টাকা।

আর তারেকুজ্জামানের নিজের নামে থাকা একটি অ্যাকাউন্টে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে ৩ মাসে জমা হয় ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখন আছে ১ হাজার ২৯৫ টাকা। তাঁর নামে আরেকটি হিসাবে ৪ বছরে জমা হয় ২ হাজার ৩০৪ টাকা। এখন আছে ১ হাজার ৪৩৪ টাকা। ৪টি ব্যাংকের এই ৫টি হিসাবে ২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বেশি জমা হয়। সিআইডি তদন্তে দেখতে পায়, এসব অর্থের মধ্যে ১৯ কোটি ৯১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫০ টাকা অপরাধলব্ধ আয়। বর্তমানে এসব হিসাবে আছে প্রায় দেড় কোটি টাকা, আদালতের নির্দেশে লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে।

সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, তারেকুজ্জামান চাঁদাবাজির টাকা নিজে কখনো তার ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন না। বেশির ভাগ সময় তার কর্মচারী বা বন্ধুকে দিয়ে টাকা ব্যাংকে জমা রাখতেন। বেসরকারি একটি ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তার মাধ্যমে নামেরা বিল্ডার্সের নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন। ওই নারী কর্মকর্তার কাছে তারেকুজ্জামান এমন সব লোক পাঠাতেন, যারা লেখাপড়া ভালো জানতেন না। ওই নারী কর্মকর্তা তারেকুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা রাখার ব্যবস্থা করতেন। কেবল এই নারী কর্মকর্তা নন, আরেকটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির পরিচিত ব্যক্তিকে দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে অপরাধলব্ধ এক কোটি টাকার বেশি জমা রাখেন তারেকুজ্জামান। এর বাইরে তারেকুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবে আরও টাকা জমা রাখেন কর্মচারী রাজন শেখ, মহব্বত আলী, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ব্যবস্থাপনার কাজ করা সিরাজসহ কয়েকজন।

আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে সিআইডি বলেছে, বেসরকারি ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা, একটি ফোন কোম্পানির কর্মকর্তাসহ যারাই তারেকুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি।
অবশ্য তারেকুজ্জামানের আইনজীবী মো. মেজবাহ উদ্দিন দাবি করেন, তারেকুজ্জামান ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। তার অপরাধলব্ধ কোনো আয় নেই। ব্যবসা করে যে টাকা তিনি আয় করেন, সেটি তার ব্যাংক হিসাবে জমা পড়েছে।

সিআইডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তারেকুজ্জামান অন্যের জমি দখল করে সম্পদের মালিক হন। যেসব জমির মালিক কম প্রভাবশালী কিংবা বিদেশে রয়েছেন, সেসব জমির তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এরপর তারেকুজ্জামানের হয়ে এসব জমি দখল করেন নুর মোহম্মদ। তিনি এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। মোহাম্মদপুরের নাজিয়া রহমান নামের এক নারীর তিন কাঠা সম্পত্তি দখল করেন তারেকুজ্জামান। একইভাবে আরও কয়েকজনের জমি দখল করেন তার সহযোগীরা। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ আয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তারেকুজ্জামানের পাঁচ ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে এই মামলার আসামি করা হয়। তারা হলেন শাহ আলম জীবন, কামাল হোসেন, নূর মোহাম্মদ, রুহুল আমিন ও তামজীদ খান। তাদের মধ্যে তামজীদ খান গ্রেপ্তার হন।

আসামি শাহ আলম তারেকুজ্জামানের হয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড, ফুটপাতের দোকানসহ নানা জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতেন। অন্যরাও তারেকুজ্জামানের নির্দেশে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে টাকা আয় করেন। আর গরুর হাটের ইজারা নেওয়ার জন্য তিন বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করেন তিনি। তবে ইজারাদার হিসেবে নাম লেখান আরেক সহযোগীর।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের সূত্র ধরে সিআইডি আদালতকে জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের আয়কর রিটার্ন জমা দেন তারেকুজ্জামান। সেখানে তিনি সম্পদ দেখান ৬০ লাখ ৩৫ হাজারের। অবশ্য এই সম্পদ অর্জনের সপক্ষে বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি রাজীব। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের পর ৩ বছর (২০১৬-১৭, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০) আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। তারেকুজ্জামানের নামে বাড়ি ও জমির বাইরেও রয়েছে তিনটি গাড়ি।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া সিআইডির প্রতিবেদন বলছে, তারেকুজ্জামানের নামে একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। এর বাইরে আরও দুটি গাড়ির মালিক তারেকুজ্জামান। এর মধ্যে একটি দুদক জব্দ করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের তৎকালীন উপপরিদর্শক শামীম আহমেদ বলেন, তারেকুজ্জামানের অপরাধলব্ধ যত আয়, তার তথ্য মিলেছে ১৮ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থার প্রতিবেদনে। তারেকুজ্জামান নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যেভাবে সম্পদের মালিক হন, তা আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানানো হয়েছে।

কাউন্সিলর   মোহাম্মদপুর   সিআইডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।

বুধবার (১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

চিঠিতে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকাল পত্রিকায় “সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাম্রাজ্য যুক্তরাজ্যে” শিরোনামে এবং মানবজমিন পত্রিকায় “ব্রিটেনে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদের ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সাম্রাজ্য" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ব্লুমবার্গের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে এ দুটি সংবাদ প্রকাশিত হবার পরেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করে। 

এ কারণে চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দুদককে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন এই আইনজীবী।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী   দুর্নীতি   দুদক   সাইফুজ্জামান চৌধুরী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

‘মিতুকে আমার ছেলেই খুন করেছে, তাকে আপনি মাফ করে দিন’

প্রকাশ: ১০:৪৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব কথা বলেছেন নিহত মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ।

সাক্ষ্যে বলেন, ‘মিশন শেষ করে ফিরে এসেই বাবুল চীনে চলে যায়। সেখানে বসেই মিতুকে মারার পরিকল্পনা করে। মিতুকে খুন করার জন্য মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে দেয়, মুসার স্ত্রী এ কথা বলেছেন। আর ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর সঙ্গে বাবুলের বিয়েবর্হিভূত সম্পর্কের জেরেই মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’

মিতু হত্যা মামলার ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে আদালতকে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে বাবুল আক্তারের মা মারা যাওয়ার ১৫ দিন আগে আমাকে কল করেন। বলেন- বেয়াইন, মিতুকে আমার ছেলে খুন করেছে। তাকে আপনি মাফ করে দেন। আমি তাকে বলি- বাবুল মরলে কি এ কথা আপনি বলতেন? এসব আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলেছি। তদন্তে সবকিছু উঠে আসেনি।’

আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্যে শাহেদা মোশাররফ আদালতকে বলেন, ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল ও মাহমুদার বিয়ে হয়। এরপর তাঁরা মোটামুটি সুখী ছিলেন। বাবুল পুলিশের চাকরিতে যোগদানের পর মাহমুদার সঙ্গে আচরণ পাল্টে যায়। বাবুল কক্সবাজারে বদলি হওয়ার পর সেখানে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন মাহমুদা বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছিলেন।

শাহেদা মোশাররফ আদালতকে বলেন, বাবুল কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকাকালে সেখানে একটি হোটেলে ওঠেন। একই হোটেলে মাহমুদাও ওঠেন। বাবুল ও একটি বিদেশি সংস্থায় কর্মরত সেই নারীকে একটি কক্ষে দেখতে পান মাহমুদা।

মাহমুদার মা জানান, ২০১৪ সালে বাবুল জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে যান। বাসায় রেখে যান তাঁর একটি মুঠোফোন। তাতে বেশ কয়েকটি খুদে বার্তা পান মাহমুদা। বাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সেই নারী বাবুলকে খুদে বার্তাগুলো দিয়েছিলেন।

মিশন থেকে দেশে ফেরার পর বাবুল চীনে যান জানিয়ে শাহেদা মোশাররফ বলেন, ‘মূলত সেখানে বসে বাবুল মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ত্র কেনার জন্য বাবুল তাঁর সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার ওরফে মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দেন। আর পুরো খুনের ঘটনায় মুসা তাঁর সহযোগীদের ব্যবহার করেন। মাহমুদাকে খুনের জন্য বাবুল যে তিন লাখ টাকা দেন, তা ছিল মাহমুদার ব্যবসার টাকা।’

আদালতে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শাহেদা মোশারফ মেয়ের হত্যার পেছনের ঘটনা বলার সময় কিছুক্ষণ পরপর কাঁদতে থাকেন। চোখ মুছে আবার কথা বলেন। এ সময় আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন বাবুল আক্তার। পুরোটা সময় বাবুল ছিলেন নীরব।

আজ শাহেদা মোশারফের সাক্ষ্য শুরুর আগে দুপুরে তৎকালীন পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতে বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাঁচলাইশ থানার ওসি ছিলেন। ওসি হিসেবে তখন মামলা রেকর্ড করেছিলেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর শাহেদা মোশাররফকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। পরে আদালত জেরা মুলতবি রেখে বুধবার পরবর্তী দিন রাখেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাহমুদা খানম। এই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এই মামলায় ৪৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।


মাহমুদা খানম মিতু   পুলিশ সুপার   বাবুল আক্তার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

আলমারির ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন কুকি-চিনের প্রধান সমন্বয়ক

প্রকাশ: ০৭:১২ পিএম, ০৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বান্দরবানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ‘প্রধান সমন্বয়ক’ চেওসিম বমকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫। 

রোববার (৭ এপ্রিল) বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, কেএনএফের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে আটক করে হয়েছে। নিজ ঘরে আলমারির ভেতর লুকিয়ে ছিলেন তিনি। র‌্যাবের বিশেষ দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। 

এর আগে রোববার (৭ এপ্রিল) বান্দরবানের থানচি ও রুমায় কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে যৌথ বাহিনীর কম্বিং অপারেশন শুরুর কথা গণমাধ্যমকে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ফিল্মি কায়দায় হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করা হয়।আগের রাতের এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরদিন ৩ এপ্রিল সকালে থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে এসব ঘটনায় ৭টি মামলা করা হয়। তবে এ মামলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর কোনো নেতা ও সশস্ত্র সদস্যদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়নি।

কুকি-চিন   কেএনএফ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

পাঁচ হাজার টাকার বাতি ২৭ হাজারে কিনেছে রেলওয়ে

প্রকাশ: ০৬:০৫ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পাঁচ হাজার টাকার বাতি ২৭ হাজার টাকায় কিনেছে রেলওয়ে। যন্ত্রাংশ কেনাকাটা সহ নানা অনিয়মের এমন প্রমাণ চিত্র পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়ে এমন তথ্য প্রমাণ পায়।

দুদক বলেছে, ‘বাজারে যেসব এলইডি বাতির দাম সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, সেসব বাতি রেলওয়ে কিনেছে ২৭ হাজার টাকায়।’

দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘রেলওয়েতে লিফটিং জ্যাক, ড্রিলিং মেশিন ও কাটিং জ্যাক ক্রয়সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখা যায়, এই পণ্যগুলোর প্রাক্কলিত দর ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেখানে এই পণ্যগুলো ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে কেনা হয়। যা পিপিপি ও পিপিআরের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা এগুলো ভালো করে পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৯০টি এলইডি লাইট ও এলইডি ল্যাম্প কেনার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর ক্রয়সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিটি এলইডি লাইট ২৭ হাজার ৭০০ টাকায় কেনা হয়েছে, যেগুলোর দাম বাজারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়তলীতে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে অভিযোগসংশ্লিষ্ট আরঅ্যান্ডআইয়ের মেরামত করা কক্ষ পরিদর্শন করা হয়। এ সময় ওয়াকিটকি ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।’

জানা গেছে, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে একই ঠিকানায় নিবন্ধিত দুটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে তাদের মধ্যে একটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই অনিয়ম প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটি কিসের ওপর ভিত্তি করে ওইসব পণ্যের বাজারমূল্য নির্ধারণ করেছে, সেসব সংক্রান্ত কোনো তথ্যউপাত্ত পায়নি দুদক।

দুদক   দুর্নীতি   রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাবেক ১২ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে। গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর আগে তিন মেয়াদে যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেরই দায়িত্ব পালনের সময়টি স্বচ্ছতার ছিল না। তারা নিজেদেরকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি। আর এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মেয়াদ এ রকম অন্তত এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ এখন বিভিন্ন সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। 

বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইস্তেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেছে। এই নীতির আওতায় দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই সাবেক এই সব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখা শুরু হচ্ছে। এই অভিযোগ তদন্ত শেষে  অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যে এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে মন্ত্রী মন্ত্রী ছিলেন এরকম অন্তত চার জন মন্ত্রী রয়েছেন। এই চারজন মন্ত্রীর মধ্যে আবার দুজন ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মোট চারজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং সেটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে যে সমস্ত মন্ত্রীরা ছিলেন, তাদের চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী ছিলেন। বিদেশে তার বিপুল সম্পদের তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। আর এই সম্পদ তিনি বৈধ পথে উপার্জন করেছেন, দেশ থেকে পাচার করেননি এ বক্তব্য রেখে ওই সাবেক মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে সরকার এখন নীরবে তদন্ত করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এছাড়াও ২০১৪ ও ১৮ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী থেকে ২০১৮ সালে পূর্ণমন্ত্রী হওয়া আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ আছে। মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের কাজ এবং মন্ত্রণালয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। ওই মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় একটি ভূমি অধিগ্রহণে মূল্যস্ফীতির ঘটনায় এখন তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী, পুত্র এবং তার সাবেক এপিএস এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই তদন্তে একাধিক বিষয় সামনে এসেছে। এছাড়াও ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় একজন গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি কেনাকাটায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখন পুনরায় শুরু করা হয়েছে। ওই সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগে দায়িত্বে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্তের আওতায় পড়েছে।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে যারা মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যে দুজন প্রভাবশালী হেভিওয়েট মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মোট ১২ জন সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এরকম দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বুঝা যাবে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আদৌ সত্যি নাকি এই অভিযোগগুলো নেহাতে তাদের বিরুদ্ধে ঈর্ষা পরায়ণ হয়ে করা হয়েছে। তবে দুর্নীতি দশন কমিশনের এবাধিক সূত্র বলছে, নির্মোহ ভাবে তদন্ত করা হবে এবং সরকার এব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করছে।

সাবেক মন্ত্রী   দুর্নীতি   তদন্ত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন