হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, জনমনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারাও এই ঘটনায় বিব্রত, বিস্মিত, হতবাক। কিন্তু সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে কথা বলে দেখা গেছে যে, সরকার ভেবেচিন্তেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে এবং নির্বাচনকে মাথায় রেখেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এইসময় করা হয়েছে। নির্বাচন হতে আরও দেড় বছর বাকি। জ্বালানি তেলের মূল্য যদি এখন বৃদ্ধি না করা হতো তাহলে পরে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যেত। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক সংকটের হাত থেকে দেশ বাঁচবে বলে সরকারের একাধিক সূত্র মনে করছে। এর ফলে আগামী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময়-ক্ষণ হিসেব-নিকেশ করেই করা হয়েছে। এখন এর ফলে যদি নির্বাচনের আগে আগে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমায়, সেটা সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে। বাংলাদেশের জনগণের মনে রাখার সময়সীমা খুব কম।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছেন যে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল, বিদ্যুতের জন্য যে হাহাকার ছিল তা মানুষ ভুলে গেছে। বিদ্যুতের জন্য কানসাটে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে, মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছে। বিদ্যুতের জন্য মানুষের অস্থির অবস্থার দিনগুলো ভুলে গেছে মানুষ। কাজেই দেশের মানুষ ছয় মাসের মধ্যেই সবকিছু ভুলে যায়। কিন্তু এখন যদি সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির না করতো, তাহলে পরে আগামী ছয় মাস পর অর্থনীতি সত্যি সত্যিই একটা সংকটের মধ্যে গিয়ে পড়তো এবং আমাদের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়তো। শ্রীলঙ্কা না হোক, অন্তত পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হলেও হতে পারতো বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিশেষ করে রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয়ের যে পার্থক্য, সেই পার্থক্য সরকারকে চাপে ফেলতো। তাছাড়া আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় শুরু হবে। সেই সময় যদি অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকে, তাহলে পরে সরকার বড় ধরনের চাপে পড়তো। এই সমস্ত বিবেচনা করে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনকে মাথায় রেখে সরকার এখন জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এর ফলে সরকারের জ্বালানিতে ভর্তুকি দিতে হবে না।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, শুধু জ্বালানি খাত নয়, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসেরও মূল্যবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই এই মূল্যবৃদ্ধি করা হবে। এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কিছুদিন হয়তো হইচই হবে, কিন্তু এর ফলে ভর্তুকি সংস্কৃতি থেকে সরকার বেরিয়ে আসবে এবং সরকারের রাজস্বের উপর চাপ অনেকটাই কমবে। রাজস্বের উপরে চাপ কমার ফলে অর্থনীতির অবস্থা ভালো হবে। দীর্ঘ এক বছরের মধ্যে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হবে এবং সরকার সংকট থেকে বেরিয়ে যাবে। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক বলেছেন যে, এখন এই ভর্তুকি যদি সরকার দিতেই থাকতো, তাহলে এক বছর পর বড় রকম চাপে পড়তো এবং সেটি নির্বাচনের উপর প্রভাব পড়তো। কিন্তু এখন যখন সরকার ভর্তুকি থেকে সরে আসছে এবং আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে যদি সবগুলো ভর্তুকি থেকে সরকার সরে আসে, তাহলে সরকারের একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়বে, রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ডলারের ওপর চাপও কমবে। এটি অর্থনীতিতে একটি সুফল দিবে। এই সুফল দৃশ্যমান হবে এক বছর পর।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, যখন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠে নামবে, তখন অর্থনীতির একটা ভালো চেহারা নিয়েই মাঠে নামবে। নির্বাচনের আগে সরকার একটা বাজেট পাবে। সেই বাজেটটি জনতুষ্টির বাজেট দিয়ে সরকার ভোটারদের মন জয় করতে পারবে। কাজেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময়টা সঠিক বলে তারা মনে করছে এবং এই পরিস্থিতি সরকার দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী।