ইনসাইড পলিটিক্স

গাজীপুরের রাজনীতিতে টাইমবোমা: যেকোনো সময় হতে পারে বিস্ফোরণ

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

গাজীপুরেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা হয়েছিলো। গাজীপুরের মাটি ঐতিহাসিকভাবে শিল্প সাহিত্যে, অসাম্প্রদায়িকতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে অনুকূল ছিলো। তাই, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের এই প্রবেশদ্বারটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কারণে আলাদা আলাদা করে গুরুত্বের দাবীদার। গাজীপুর ভৌগলিক ও সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুরে বাংলাদেশের একমাত্র সমরাস্ত্র কারখানা, টাকশাল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। গাজীপুরে একটি ক্যান্টনমেন্ট আছে, এবং এর পাশে সাভারেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্টনমেন্ট। তাই, বলা যায় ভূ-রাজনৈতিক কারণে উত্তরের এই প্রবেশদ্বারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গার্মেন্টস, প্রযুক্তি, পর্যটনসহ নানা শিল্প বিকশিত হচ্ছে গাজীপুরে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাইটেক পার্কও গাজীপুরে। গাজীপুরে ৫ হাজারের বেশী কারখানা আছে। তাই, কর্মসংস্থানের নিমিত্তে গাজীপুরের বাইরে থেকে আগমন ঘটেছে লাখ লাখ শ্রমজীবি মানুষের। বহিরাগত এসব শ্রমিকদের নানা দুর্বলতার সুযোগে গাজীপুর এখন আক্রান্ত হচ্ছে বারবার। গাজীপুরের গা থেকে বসে যাচ্ছে এর অসাম্প্রদায়িক জামাটি। গাজীপুরের রাজনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরণের সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে এবং এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজীপুরের জনসংখ্যা ও কলকারখানার চিত্র:

২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী গাজীপুরে ৫২ লাখের বেশি মানুষের বাস এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পরেই গাজীপুরে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশী। গাজীপুরের মোট জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই মুসলিম, মাত্র ৬ শতাংশ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। ভৌগলিক অবস্থান ও শিল্পঘনিষ্টতার কারণে গাজীপুরে প্রচুর বহিরাগতদের আগমন ও বসবাস। এসব বহিরাগতদের কেউ পেটের দায়ে অথবা কেউ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আসে এবং নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। গাজীপুরের ৫ হাজারের বেশী কারখানার মধ্যে মাত্র ১,২০০ কারখানার অনুমোদন রয়েছে। করোনার পরে প্রতি মাসেই নতুন কারখানার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব কারখানায় প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কাজ করে যা অনেক ছোট দেশের মোট জনসংখ্যার সমান। অননুমোদিত কারখানার মতো এদের শ্রমিকরাও অননুমোদিত আর এদের অধিকাংশের ঠিকুজি স্থানীয় প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অজানা। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের পরিবর্তে মাঝে মাঝে এরা হয়ে ওঠে বিষফোঁড়া। বয়সে কিশোর বা তরুণ এসব কারখানা শ্রমিকদের অধিকাংশই ন্যূনতম মজুরি পায় না। একদিকে আর্থিক অনটন অন্যদিকে ধর্মভীরতা ও অজ্ঞতা এদেরকে করে ফেলে ভালনারেবল। রাজনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহারের জন্য এদের চেয়ে সহজ টোপ আর নেই এবং এরা সংখ্যায়ও অনেক।

বহিরাগত শ্রমিকদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার:

এই সুযোগ নিয়ে বহিরাগত শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয় অস্থিতিশীলতার উপাদান হিসেবে। অপরাধ ঘটিয়ে বিনা বাধায় তারা অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে অথবা পরিচয় লুকিয়ে ধারাবাহিক অপরাধ করে যেতে পারে। গাজীপুরের সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন গাজীপুরের সহিংসতা, জঙ্গিবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছে, এবং কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা স্থানীয় রাজনৈতিক মদদও পেয়েছে। ধর্মের আফিম ও অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের মাধ্যমে গাজীপুরের অপরাধমূলক কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে এদের অপব্যবহার ব্যপকহারে বেড়েছে। এতে গাজীপুরে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটাকে বলা যেতে পারে রাজনীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে গাজীপুর।

হঠাৎ করে মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি:

গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত ও অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অননুমোদিত মাদ্রাসা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ভবনের একটি বা দু'টি কক্ষ নিয়ে এদের কার্যক্রম এবং এদের অধিকাংশই রাষ্ট্রীয় শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ করেই না। এদের ফান্ডিং কোথা থেকে আসছে সেটার কোন হদিস নেই, জবাবদিহিতা নেই। এবং মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি মানসিকতার মানুষ দিয়ে ঠাসা। সাম্প্রদায়িক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিচালিত এসব মাদ্রাসাগুলি অসাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়ানোর হার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এরা ধর্মভীরু মানুষের সহানভূতির সুযোগ নিতে পারে সহজেই। তারা সুকৌশলে নজরদারি এড়িয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুনে দেয় সাম্প্রদায়িকতার বীজ এবং মনিটরিং ছাড়া মাদ্রাসাগুলি পরিণত হয় ছোট ছোট সাম্প্রদায়িক ঘাটিতে। এবং ধর্মের আবেগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ওয়াজের মাধ্যমে গাজীপুরের মানুষের মধ্যে ধর্মের নামী সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দেয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারের এর চেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ধর্মীয় উম্মাদনাকে ব্যবহার করছে উঠতি কিশোর ও তরুণ সমাজ। তথ্যে দেখা গেছে সময়ের পরিক্রমায় গাজীপুরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।

গাজীপুরে সম্প্রতি অদ্ভুত এক তরুণ রাজনৈতিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। এই শ্রেণী মাদক ও ঝুটের ব্যবসায়ের মাধ্যমে অঢেল অবৈধ বিত্তের মালিক হয়েছে, কিন্তু শিক্ষা নেই এবং রাজনীতির র টা জানা নেই। গাজীপুরের শতকোটি টাকা ঝুটের ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই শ্রেণী রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছে। এদের অবৈধ ড্রাগমানির কাছে ঐতিহ্যবাহী এবং ত্যাগী রাজনীতিবিদের অসহায়। নব্যধনী এই তরুণদের একেকজন শুধু পোস্টারিং যত অর্থ ব্যয় করেন, গাজীপুরের একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ পুরো নির্বাচনেও এতো অর্থ ব্যয় করার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। শুধু তাই না, স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদ কিনে নেয়ারও গুরুতর অভিযোগ এদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত। পদকেনাবেচার যেই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে টেকনাফ থেকে। নজরদারির বাইরের বহিরাগত এবং গাজীপুরের রাজনীতির নব্যধনী বহিরাগত এই উভয়ই গাজীপুরের স্থিতি বিনষ্টের পেছনের মূল উপাদান এবং ভবিষ্যতে এটা বাড়তে দিলে আরো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে।

গাজীপুরের নব্যধনী রাজনীতির বহিরাগত, বহিরাগত শ্রমিক এবং ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসাগুলি মিলে অদৃশ্য এক টাইমবোমার সেট করেছে গাজীপুরে। সঠিক ও পরীক্ষিত নেতৃত্বের মাধ্যমে এই বোমাকে নিষ্ক্রিয় না করতে পারলে, ঘটে যেতে পারে বড় অঘটন। আর এ অঞ্চলের যেকোন ঘটনা দেশকে রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত তো করেই। অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত করে ফেলে। এবং এর রেশ শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ থাকে না, প্রতিবেশী দেশগুলিতেও এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টারব্যুলেন্সের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, তাতে যেকোন ভুল নেতৃত্বের মাশুল দেশকে দিতে হবে। অনেক চড়া দামে।

আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং গাজীপুরের সন্তান বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুর পর গাজীপুরের মানুষের আবেগ ও সক্ষমতা একাধিকবার ভুল পথে গিয়েছে। এটা হয়েছে অসাম্প্রদায়িক, শিল্পমনা ও শিক্ষিত নেতৃত্বের অভাবে। বর্তমান পরিস্থিতে গাজীপুরে ভুল নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। গাজীপুরের টাইমবোমাটি ফেটে গেলে তা বাংলাদেশতো বটেই আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্যেও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

নেতৃত্বের প্রত্যাশা:

গাজীপুরে এমন একটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন যার সুশিক্ষার পাশাপাশি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক অতীত ও অভ্যাস আছে। এর পাশাপাশি আছে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দক্ষতা। তিনি তার সহজাত নেতৃত্ব দিয়ে ও নিয়মিত মনিটরিং দিয়ে গাজীপুরের সঠিক সক্ষমতার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটাতে পারবেন এবং ধর্মের মোড়কে পুরে শান্তিপ্রিয় এই জনপদকে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার কবল থেকে মুক্ত করতে পারবেন। সেই নেতার হাত ধরে গাজীপুর দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি মাতবে ভাওয়াল সংগীতে, গাজীর গীতে, পালাগানে লোকজ সংস্কৃতি ও উৎসবে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের আঞ্চলিক সমন্বয় দরকার:

গাজীপুর মহানগরের নেতৃত্ব উত্তর এবং দক্ষিণ এই দুই আঞ্চলিকতায় বিভক্ত। গাজীপুরের বিগত ৬০ বছরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিশ্লেষণ এবং ভোটের রাজনীতির বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যত মন্ত্রী, এমপি, মেয়র নির্বাচিত হয়েছে হয় তারা টঙ্গী অঞ্চল অথবা (কাউলতিয়া, মির্জাপুর এবং বাসন) অঞ্চল থেকে হয়েছে। তাই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চল ভোটের রাজনীতিতে সংগঠন উপকৃত হবে।

শিক্ষিত শ্রেণিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি কাজ করার উদ্দ্যোগ প্রয়োজন:

শিল্প অঞ্চলের পাশাপাশি গাজীপুরে বেশকিছু সুনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে- (১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২) ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর (৩)ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় অব টেকনলজি, (৪) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, (৫) উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, (৬) তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ। এছাড়াও সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান (১) বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, (২) টাকশাল, (৩) বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফেক্টরি (৪) ডিজেল প্লান্ট, (৫) ধান গবেষণা, (৬) কৃষি গবেষণা, গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। চাকুরিসূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষিত শ্রেণি পরবর্তীতে গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। রাজনৈতিক সংগঠন যদি শিক্ষিত, ভদ্র, দুর্নীতিমুক্ত সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে, তবে এই বিশাল শিক্ষিত শ্রেণিকে সহজে সমৃদ্ধ এবং উনাদের সমর্থন আদায় করতে পারে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ০২:১২ পিএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। তা হয়নি, বরং আরও বেড়েছে। সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।  

রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের পূর্বে বহু নেতাকর্মীকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এখনো গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা কারাগারে রয়েছেন। বিরাজনীতিকরণ করতে ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসারস্থল হচ্ছে কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ, এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র তখন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে যায়, রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা টাকা পাচার করে সেটি বিনিয়োগ করেছে বিদেশে, অথচ বাংলাদশের মানুষের অবস্থা খারাপ।

ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কে আসলো তাতে ইন্টারেস্ট নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। তাকে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টাই তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন। 


মির্জা ফখরুল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন: কুমিল্লায় চার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের চার স্বজন প্রার্থী

প্রকাশ: ০৯:৩৯ এএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

কুমিল্লায় তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চারটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র চার সংসদ সদস্যের চার স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। ওই চার সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটাররা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কুমিল্লার চারটি আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় চার নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

কুমিল্লা-২ (হোমনা ও মেঘনা) আসনের সংসদ সদস্য হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মজিদের স্ত্রী রেহানা বেগম হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। রেহানা বেগম কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

জানতে চাইলে রেহানা বেগম বলেন, ‘২০১৯ সালেও আমি চেয়ারম্যান হয়েছি নৌকা প্রতীক নিয়ে। এবার দল সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। নেতা-কর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছি।’

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম সরকার উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৯ সালেও আহসানুল চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। আহসানুল আলম সরকার মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সদস্য। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

কুমিল্লা-৫ ( বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এম এ জাহেরের বড় ভাইয়ের ছেলে আবু তৈয়ব ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তৃতীয় ধাপে প্রার্থী হয়েছেন। আবু তৈয়ব কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

স্বজনদের প্রার্থী হওয়া বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. আবদুল মজিদ ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারে ভাষ্য, প্রার্থীরা গতবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। তাই এবারও তাঁরা প্রার্থী।

সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, দল প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। সারা দেশে বড় নেতাদের ভাই, ছেলে, স্ত্রী, সন্তানেরা প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে অনেকে জয়ী হয়েছেন। দেবীদ্বারের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মামুনুরকে চান। অনেকটা একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন সংসদ সদস্য এম এ জাহের। 


উপজেলা   নির্বাচন   কুমিল্লা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিলুপ্তির পথে জাতীয় পার্টি?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

কাগজে কলমে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল তারা। কিন্তু দলটি সাংগঠনিক অবস্থা এত নাজুক যে, এই দলটি কবে বিলুপ্ত হবে তার দিনক্ষণ এখনও গননা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি এখন অস্তিত্বের সংকটে। আওয়ামী লীগের কৃপায় বেঁচে থাকা এই দলটি এখন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে কোন রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টিকে মনে করছে না সরকারি দলের না বিরোধী দলের! সবকিছু মিলিয়ে একটি বিভ্রান্ত আদর্শিক অবস্থা জাতীয় পার্টিকে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু করতে করতে এখন বিলীন প্রায় করে ফেলেছে।

স্বৈরাচারী হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করে। তার পর আস্তে আস্তে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বিভিন্ন দলছুট উচ্ছিষ্টভোগীদের কে নিয়ে এই জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন। জাতীয় পার্টি গঠিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল এবং ক্ষমতার হালুয়া রুটি খাওয়াই জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। ৯০ এর দশকে স্বৈরাচার পতনের পর অনেকে ধারণা করেছিলেন যে জাতীয় পার্টি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সময় অস্তিত্বের পরীক্ষায় নাটকীয়ভাবে জয়ী হয় জাতীয় পার্টি। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি সেই সময়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মিজানুর রহমান চৌধুরী অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। তার কারণেই স্বৈরাচারের পতনের পর ১৯৯১ এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তৃতীয় স্থান লাভ করে এবং সকলকে চমকে দেয়। এর পর জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ, বিএনপি যখন যায়, তখন তারা এই নীতি অনুসরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।

বাংলাদেশে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। জাতীয় পার্টিকে ছাড়া ক্ষমতা গঠন করা, কোনও দলের পক্ষে সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব এ রকম একটি রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়। যে সমীকরণের সুবিধা নিয়ে জাতীয় পার্টি এখনও টিকে আছে। ২০০১ সালে নির্বাচনে দলটি সমর্থন দেয় বিএনপিকে। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠণ করে। সেই থেকে মহাজোটেই আছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রধান নেতা এরশাদের মৃত্যুর পর জতীয় পার্টি এখন শুধু মাত্র নেতৃত্বের সংকট নয় অস্তিত্বের সংকটই হচ্ছে। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির হাল ধরেছেন তার ছোট ভাই জিএম কাদের। জিএম কাদের একজন সৎ পরিচ্ছন্ন মানুষ কিন্তু রাজনীতির অভিজ্ঞতায় তিনি একেবারেই কাঁচা পরিপক্ক এবং অদূরদর্শী বটে। রাজনীতিতে তার অবস্থান কি সেটি সুস্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকেই জাতীয় পার্টি ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করেছে। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নেয় এবং সরকারের বিরোধিতার একটা আবরণ পড়ে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই আবরণ গ্রহণযোগ্যতা হয়নি। জাতীয় পার্টি ২০২৪ নির্বাচন বর্জন করার কথাও ভেবেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনে হতাশাজনক ফলাফল পায়।

জাতীয় পার্টির এই দিকবদল এবং বার বার অবস্থান পরিবর্তন সাধারণ মানুষের কাছে একটা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। আর এ কারণেই সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রওশন এরশাদের পৃথক অবস্থান জাতীয় পার্টির নেতাদেরকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। দলটিতে নতুন কর্মীর আগমণ ঘটছেনা। পুরোনো নেতারা নানা রকম সুযোগ সুবিধার আসায় দিনের বেলায় সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করছেন। রাতের বেলায় তাদেরকে দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে। জাতীয় পার্টিতে এখন পার্ট টাইম রাজনীতির প্রধান্য আর এ সমস্ত রাজনীতিবিদরা দলের চেয়ে নিজের স্বার্থরক্ষার জন্যেই বেশি ব্যস্ত।

এখন জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে কোন রকমের টেনে তোলার চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু এরশাদের যেরকম সারা দেশ জুড়ে একটা আলাদা ইমেজ ছিল, একটা জনপ্রিয়তা ছিল জি এম কাদেরের তা নেই। তার একমাত্র পরিচয় তিনি হোসেন মুহাম্মাদ এরশাদের ছোট ভাই। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ এখন আর নেই। এই রাজনৈতিক দলটিযে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তা এখন বিলীন হওয়ার পথে।


জাতীয় পার্টি   জি এম কাদের   রওশন এরশাদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে চাঙ্গা বিএনপি: কাদের

প্রকাশ: ০৭:২৩ পিএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু’ ঢাকায় সফর করায় আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে চাঙ্গা বিএনপি।

শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আরে বেকুবের দল, লু আসছেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে। বিএনপির স্বপ্ন পূরণের জন্য আমেরিকাও আর আসবে না, কেউ আসবে না।

তিনি বলেন, ‘গয়েশ্বর রায় কোথায় পালিয়ে ছিলেন, ভারতে? মাথায় তো একটা গান্ধী টুপি দিয়েছেন। তিনি আমাদের বলেন ভারতের দালাল। এই অপবাদ আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সময় থেকে অনেক শুনেছি। দালালি কারা করে? ভারতে নরেন্দ্র মোদির বিজয়ের পরে ভোর হওয়ার আগে ফুল আর মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। দালালি কারা করে? ভারত সফরের সময় খালেদা জিয়া তিস্তা চুক্তির কথা ভুলে গিয়েছিল। দালাল কারা?’ 

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। ৪২ শতাংশ লোক আমাদের ভোট দিয়েছিল। শেখ হাসিনার অর্জন, উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছিল দেশের ৪২ শতাংশ জনগণ। নির্বাচনে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আমরা ক্ষমতা চাই না, বন্ধুত্ব চাই। শত্রুতা আমাদের ক্ষতি করেছে। আমরা সেই অবস্থা আর ফিরে পেতে চাই না।’

বিএনপির উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের দাবি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, যে ৩৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন তারা কারা? তারা এই দেশের জনগণ। তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নে মুগ্ধ।


আওয়ামী লীগ   ওবায়দুল কাদের   মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু’  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের ‘ফ্রি স্টাইল’ নেতারা নজরদারীতে

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ যারা অমান্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত কারণে ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপনই করেননি। কিন্তু যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তারা যে পার পেয়ে যাবেন বা ছাড় পাবেন এমনটি নয়। এরকম দাবী করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতা। যেসমস্ত নেতারা দলের শৃঙ্খলা লঙ্ঘণ করেছেন এবং ‘ফ্রি স্টাইলে’ কাজ-কর্ম করছেন তারা নজরদারিতে আছেন এবং শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখা যাবে বলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদের-একরাম চৌধুরীর নোয়াখালীর বিরোধ: যেখান থেকে শুরু

তবে আওয়ামী লীগ বহিষ্কার বা দল থেকে বের করে দেয়ার মতো অবস্থানে যাবে না। আওয়ামী লীগের শাস্তি হবে কৌশলগত এবং সুদূর প্রসারী। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে ৩ ধরনের নির্দেশনা ছিল।

প্রথমত, উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে দলগতভাবে সমর্থন করা যাবে না। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে।

দ্বিতীয়ত, মন্ত্রী এমপিদের আত্মীয়-স্বজনরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং মাই ম্যান’দের জিতিয়ে আনার চেষ্টা করা যাবে না।

তৃতীয়ত, নির্বাচনে যেন কেউ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যেসমস্ত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই সমস্ত নির্দেশনা ভঙ্গ করেছেন, তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে তারা নজরদারীতে আছেন।

আরও পড়ুন: ভারত বিরোধীতা সামনে আনছে বিএনপি

লক্ষ্য করা গেছে, তারা শুধু এবার নয় অতীতেও দলের অবস্থানের বিপরীতে ফ্রি স্টাইলে’ নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করতেন। তারা যা বিবেচনা করতেন সেটি বলতেন এবং এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে দলের স্বার্থ লঙ্ঘিত হতো।

শাজাহান খান

শাজাহান খান এমন একজন ব্যক্তি যিনি দলের নির্দেশ অমান্য করে তার পুত্রকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। শাজাহান খান এর আগেও আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থানের বিপরীতে বিভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। শাজাহান খানের বিষয়টি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এবং তিনি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নজরদারীর মধ্যে আছেন।

ড. আব্দুর রাজ্জাক

ড. আব্দুর রাজ্জাক তার ভাইকে এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। যদিও আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে, তার ভাই আগে থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু এবার যেহেতু পরিস্থিতি ভিন্ন সেহেতু এবার তার ভাইয়ের প্রার্থী হওয়াটা দলগতভাবে পছন্দ করা হয়নি। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ড. রাজ্জাকের ভাইয়ের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিরোধীতা করেছিলেন এবং এ নির্বাচনে ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ড. রাজ্জাক নির্বাচনের আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় ছিলেন। অনেকে মনে করেন, এই বিতর্কিত মন্তব্যের কারণেই এবার তিনি মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন। আর একারণেই ড. আব্দুর রাজ্জাক এখন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের নজরদারীতে আছেন। ভবিষ্যতে যদি ড. রাজ্জাক বা শাজাহান খানের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ চলে যায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

একরামুল করিম চৌধুরী

একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি। এবার তিনি তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে সুবর্ণচর উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। ঐ উপজেলায় চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে হারিয়ে দিয়ে নিজের পুত্রকে নির্বাচিত করার বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক মহলে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়নি। তারা বিষয়টিকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল বলে মনে করছেন। একরামুল করিম চৌধুরীর পরিণতি কি হয় তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।

গাজী গোলাম দস্তগীর

গাজী গোলাম দস্তগীর পুরো রূপগঞ্জকে গাজীগঞ্জ বানিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার নিজস্ব আত্মীয় স্বজন সর্বত্র সবকিছু দখল করে নিয়ে এমন অভিযোগও রয়েছে। গাজী গোলাম দস্তগীর এবার মন্ত্রীত্ব পাননি। ভবিষ্যতে তিনি নতুন রাজনৈতিক সংকটে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।   


আওয়ামী লীগ   শাজাহান খান   ড. আব্দুর রাজ্জাক   একরামুল করিম চৌধুরী   গাজী গোলাম দস্তগীর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন