ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এই পরিবর্তনগুলো অনুমোদন দেন কাউন্সিলররা। শিগগিরই এ গঠনতন্ত্র পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এই তথ্য জানিয়েছেন।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, এবারের গঠনতন্ত্রে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো: ১. কেন্দ্রীয় কমিটির নাম সুনির্দিষ্ট করে ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’করা হয়েছে। ২. দলের যে কোনো পর্যায়ের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। আগে এই বাধ্যবাধকতা ছিল না। ৩. দলের উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন কমিটির উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়িয়ে ২৭ করা হয়েছে। আগে উপজেলা বা থানায় ২১ জন এবং ইউনিয়ন কমিটিতে ১৫ জন নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হতো। ৪. মহানগরের প্রতিটি পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় ভোটার রাখতে হবে। ৫. স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ৬. মহিলা শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ৭. আওয়ামী লীগের যে কোনো শাখা কমিটির নিয়মিত সভা এক মাসের পরিবর্তে দুই মাস পর পর করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন গঠনতন্ত্র উপকমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এমনিতেই যুগোপযোগী ও আধুনিক। এর পরও আমাদের সাংগঠনিক কাজের সুবিধার জন্য অল্প কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ’
আওয়ামী লীগের আগের গঠনতন্ত্রের ২৫-এর ৭ (ক) অনুসারে শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবারের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ দুই সংগঠনের সঙ্গে মহিলা শ্রমিক লীগকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিলা শ্রমিক লীগ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে তাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত হবে।
আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে গঠনতন্ত্র উপকমিটির সদস্যসচিব ছিলেন সেলিম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা মহিলা শ্রমিক লীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের গঠনতন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে যেন আইএলওর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু না থাকে, সেটা দেখা হবে।’
দলের গত মেয়াদের গঠনতন্ত্রে ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে গঠনপ্রণালী অংশের ৩ নম্বরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম লেখা আছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি’। আবার গঠনতন্ত্রের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদসহ একাধিক স্থানে কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’লেখা আছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এখন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম নির্দিষ্ট করা হয়েছে ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’।
জানতে চাইলে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এত দিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নাম একেক জায়গায় একেকটা লেখা হতো। এবার নাম চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সব জায়গায় ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’ লেখা হবে।
আওয়ামী লীগের সব শাখা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে; না পারলে ওই কমিটি বাতিল করা হবে। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি তাদের অনুমোদনকারী কমিটির কাছে সময় বাড়ানোর লিখিত আবেদন করতে পারবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এত দিন দেখা যেত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে দু-এক বছর চলে যাচ্ছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পেছনে ঘুরে হয়রান হয়ে যান, কিন্তু কমিটি আর হয় না। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সমস্যা হয়। এ জন্য আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় বেঁধে দিয়েছি। ’
দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে উপদেষ্টা পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে দলের সব পর্যায়ের কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ হবে ২৭ সদস্যের।
আগের গঠনতন্ত্রের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা পরিষদ অংশের ৩ নম্বরে বলা ছিল, ‘সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন পর্যায়েও কেন্দ্রের অনুরূপ উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হইবে। মহানগরে ২৭, জেলায় ২৭, উপজেলা ও থানায় ২১ জন, ইউনিয়নে ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হইবে। ’
দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদের (ক)-তে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা ও পুরুষ) পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এবারের গঠনতন্ত্রে ধারাটি পরিবর্তন করে দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আগের গঠনতন্ত্রের ২৮ (৬)-এ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এবারের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নের অনুচ্ছেদটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এবারের গঠনতন্ত্রে মহানগরের যে কোনো স্তরের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কমিটিতে দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় ভোটার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মহানগরের ভোটের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় যে মহানগরের বিভিন্ন কমিটিতে জেলা থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাধান্য থাকে। এতে স্থানীয় ভোটের রাজনীতিতে কিছু সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে মহানগরের সব পর্যায়ের কমিটিতে দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় ভোটারকে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
গঠনতন্ত্র উপকমিটির একাধিক নেতা জানান, এবারের গঠনতন্ত্রে সব শাখা কমিটির নিয়মিত সভার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রে প্রতি মাসে একবার করে সভার নিয়ম রাখা হয়েছিল। এবারে তা দুই মাস করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগের গঠনতন্ত্রে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬৪ জেলা পরিষদের কথা উল্লেখ ছিল। এবারে তা পরিবর্তন করে ৬১ জেলা পরিষদ করা হয়েছে। কারণ পার্বত্য তিন জেলা পরিষদে নির্বাচন না হওয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হয় না।
এ ছাড়া আগের গঠনতন্ত্রে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা ছিল না। এবারের গঠনতন্ত্রে এগুলোর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে উপহাস করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থান থেকে তারা লিটলেট বিতরণ কর্মসূচিতে নেমে এসেছে। এবার বুঝুন তাদের অবস্থা।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই আজ দেশের এত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি এবং মির্জা ফখরুল বাকশালকে গালিতে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমও লিখছে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বিএনপি। ভারত প্রশ্নে এখন মধ্যপন্থা নিতে চায় বিএনপি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, সংসদ এবং সংসদের বাইরেও সরকারের বিরোধিতা জারি আছে। সরকার কোনো দল বা গোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিচারে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।