চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তারা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ও জাসদ মনোনীত প্রার্থী মুনিরুজ্জামান মুনির।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা এই মনোনয়নপত্র বাতিল করেন বলে জানিয়েছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একাধিক সূত্র।
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রমে এই ঘোষণা দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের নাবীউল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী খুরশিদ আলম বাচ্চু, জাকের পার্টির প্রার্থী গোলাম মোস্তফা।
এ ছাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম শেষে এই ঘোষণা দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী কামরুজ্জামান খাঁন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা সামিউল হক লিটন ও তাহরিমা খাতুন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রার্থীদের ব্যাংক জামানত, ঋণ, হলফনামা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র দেখে বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো আপত্তি থাকলে তা বিবেচনা করা হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সেই আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের একটি ফরমে স্বাক্ষর প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারের জমা দেওয়া ভোটারদের স্বাক্ষর দেখার জন্য দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা স্বাক্ষর দেওয়া ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ১০ জন ভোটারের মধ্যে একজন ভোটার স্বাক্ষর করেনি বলে জানান। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ আলী সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে তিনি আপিল করতে পারবেন। এই আসনে মোট ছয়জন মনোনয়ন তুলেছিলেন, সবাই জমা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট) আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন। ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের ১২৩০টি ভোট কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন। এই আসনে ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের ১২৪০টি ভোট কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঋণখেলাপির দায়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ও একটি ঋণের জামিনদার থাকায় সেটি ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে জাসদের প্রার্থী মুনিরুজ্জামান মুনিরের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে তাদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় আসন ২টি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৫ জানুয়ারি, বাছাই করা হয় ৮ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৫ জানুয়ারি। ১৬ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রার্থী মনোনয়ন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।