ইনসাইড পলিটিক্স

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কতখানি যৌক্তিক?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি এটিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে আয়োজন করেছিল। তাতে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এতে মহানগর উত্তর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মানব বন্ধনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন।

বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামীতে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করায় ২০১৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করেছিলাম। এর নায়ক ছিলেন কে?

নিজের প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক (এবিএম খায়রুল হক)। যদি ভবিষ্যতে কোনোদিন সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার, গণতন্ত্রের সরকার আসে তাহলে বিচারপতি খায়রুল হকেরও বিচার হবে গণতন্ত্র, বাংলাদেশের সংবিধানকে ধবংস করার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য।

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে এককভাবে দায়ী করে তার বিচারের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও ত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কতখানি যৌক্তিক- তারও একটি যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁরা। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বক্তব্য মানেই ‘হুমকি’। আর রাজনীতি মানেই ‘জ্বালাও-পোড়াও’।   মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্য, তা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতিই শুধু নয়, বিশেষ একজন বিচারককে দায়ী করে বিচার করার যে ‘হুমকি ও প্রতিশ্রুতি’- তা আইন, গণতন্ত্র ও বিচারে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন করতে পারে কি না সেটি অবশ্যই বিচার্য বিষয়।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১০মে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় প্রদান করেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৌলিক বেশ কিছু দুর্বলতা দেখিয়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ৩ মাসের সরকার, নির্ধারিত ৯০ দিন সময় অতিক্রম করার নজির স্থাপনের সম্ভাবনাটিও ২০০৫ থেকে ০৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সরকারে ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন। আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের বিধানের ফলে বিচার বিভাগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

সূত্রমতে, দেশ অনির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ সংবিধানে রাখার বিপদ, ঝুঁকি এবং সাংঘর্ষিক সম্পর্কেও আদালত সে সময় তুলে ধরেন। জটিল এই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে আইন আকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই ভিত্তিতেই এই রায় অনুযায়ী দেশে সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত) সঙ্গে সংবিধানে সৃষ্ট সাংঘর্ষিকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ২০১১ সালের ৩০ জুন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ও নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিল সংসদে উত্থাপিত হয় এবং এটি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নামে গৃহীত হয়। বিএনপি তখন এই বিলের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে বিএনপির এমন দাবি অযৌক্তিক। কারণ ২০১১ সালেই তাদের বিরোধীতা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তারই ফলশ্রুতিতে দলীয় সরকারের অধীনে দেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন, উপ নির্বাচনসহ অনেক নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে। জনমতের প্রশ্নে বিএনপি হেরে গেলে সেক্ষেত্রে সরকারের বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।    

অন্যদিকে, গেল বছরের ৮ ডিসেম্বর ‘বিএনপি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে’- এমন অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে এ জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। আমরা সমাবেশস্থলে যাব। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে সরকার দায়ী।

বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যকেও একটি হুমকি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করছেন, এমন বক্তব্য মানে হচ্ছে, আমরা অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা সংগঠিত করব এবং তার জন্য সরকারকে দায়ী করব। এমন হুমকির কারণেই আটক হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস। তবে বিএনপির রাজনীতি শুধু ‘হুমকি’তেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবতায় তা শূণ্য ফলাফল। ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপি আসলে কী করতে চায়?- এমন একটি প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং এই দিনটি ঘিরে জনগনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। কি হতে পারে ১০ ডিসেম্বর? সে সময়ে প্রকাশ্যে সরকার উৎখাতের হুমকিও দিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান। তিনিও হুমকিতেই সীমাবদ্ধ। এছাড়াও বিএনপির বিগত আন্দোলনগুলোতে বাসে আগুন দেওয়া, ভাংচুর- এসব প্রত্যক্ষ করেছে জনসাধারণ। এজন্যই বিএনপির এসব হুমকিতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে খুব সহজেই।     

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই আগ্রাসী মনোভাবের কারণ বোঝা কঠিন কিছু না। তারা যেনতেন প্রকারে গদি চায়। আর গদি হারানোর রাগে সুযোগ পেলেই এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সেই দল যাদের আসলে কোন আক্কেল দাঁতই ওঠেনি। এই দলটি সরকার থেকে ইচ্ছেমতো গজিয়ে ওঠা একটি দল। গণতন্ত্র ও জনস্বার্থে একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। কিন্তু তাদের যে জনসমর্থন, তাতে হুমকি-ধামকিতে আরও কমে যাচ্ছে। তারা কেন তা করে?- তা বোঝা কঠিন কিছু নয়। 

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আসলে বিএনপি রাজনৈতিক শিষ্টাচার মানার দল নয়। এটাই তাদের ইতিহাস। বিএনপিকে আওয়ামী লীগ হটায়নি। তাকে অবৈধভাবে সরকার গঠনের কারণে সরিয়ে দিয়েছিল ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা। তারপর জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সে থেকে তারা রাজপথে থাকার পরিবর্তে একের পর এক ষড়যন্ত্র আর সংঘাতে সরকার পতনের জন্য মরিয়া। আসলে এসব হুমকি-ধামকি দিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে সরকার হঠানোর যে আন্দোলন বিএনপি করতে চায়, তা সফল হবে না। স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাশাপাশি থেকে আন্দোলন করেছে, সেটা জাতি দেখেছে। এ থেকেও বিএনপির রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান হওয়াটা উচিৎ ছিল। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, বিএনপি এসব হুমকি-ধামকি, জ্বালাও-পোড়াও এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত রাজনীতি পরিহার করে কি না?


বিএনপি   আওয়ামী লীগ   রাজনীতি   হুমকি   জ্বালাও-পোড়াও   শিষ্টাচার   রাজনৈতিক বিশ্লেষক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের আগে ও পরে একই কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: মঈন খান

প্রকাশ: ০৭:১৫ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র যে কথা বলেছিল, নির্বাচনের পরেও একই কথাই বলেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

শুক্রবার (১৭ মে) কারামুক্ত বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবীর বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মঈন খান বলেন, সরকার যদি ভাবে মার্কিন প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে এসে কথা বলেছে আর সব সমস্যার সমাধান হয়েছে, তাহলে সরকারের ধারণা ভুল। নির্বাচনে আগে যুক্তরাষ্ট্র যে কথা বলেছিল, নির্বাচনের পরেও সেই কথা বলেছে।

তিনি বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের একমাত্র উদ্দেশ্য এ দেশের মানুষকে কথা বলতে দেবে না। মানুষকে ভিন্নমত পোষণ করতে দেওয়া হবে না। গণতন্ত্র দেওয়া হবে না। সরকার জানে সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

এই সরকার সব অধিকার হরণ করেছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের (সরকার) কোনো ভিত্তি নেই। এদেশের ৯৭ শতাংশ জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। এ জন্য সরকার ভীতু। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

মঈন খান বলেন, সরকার এদেশের রাজনীতি অনেক আগেই ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে আর সুস্থ ধরার রাজনীতি নেই। এখন আছে পরহিংসার রাজনীতি। সংঘাতের রাজনীতি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ বলে দেবে এ সরকারের পরিণতি কি হবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বৈরাচারী সরকারের কি পরিণতি হয়ে ছিল। এ দেশের সরকারের বেলায় যে ভিন্ন কিছু হবে এটা কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না।

বিএনপি   ড. আব্দুল মঈন খান  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কেন জোট করতে চায় না বিএনপি

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যারা বিএনপির সঙ্গে এতদিন ছিল এবং আন্দোলন করেছে, তারা এখন নতুন করে আন্দোলনের আগে একটি লিয়াজোঁ কমিটি করতে চায়। আর আন্দোলনের লক্ষ্য এবং পথ পরিক্রমা চূড়ান্ত করতে চায়। লিয়াঁজো কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হোক, সেটিও তারা চায়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়নি। নানা বাস্তবতার কারণে বিএনপির জোটবদ্ধ আন্দোলন করতে চায় না। লিয়াঁজো কমিটিও করতে চায় না। 

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে আলাপ করে দেখা গেছে, তারা যে সমস্ত শরিক দলগুলো এখন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে কোন আনুষ্ঠানিক ঐক্যে যেতে চায় না। এমনকি লিয়াঁজো কমিটির করতে চায় না। এর কারণ হিসেবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বলছেন, যে সমস্ত শরিক রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে চায়, আন্দোলনের মাধ্যমে তারা অনেকেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা বা রাজনৈতিক ডিগবাজি দেওয়ার মাধ্যমে তারা আন্দোলনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এটি শুধু এই স্থায়ী কমিটির সদস্য নয়, বিএনপি অনেকের ধারণা।

গত বছরের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করার কারণে যারা পরিচিতি পেয়েছিল তারাই সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্যে এবং গোপনে যোগাযোগ করেছেন। এদের মধ্যে জেনারেল ইব্রাহিমের কথা বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন। তারা বলছেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে একেবারে এতিম ছিলেন। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার কারণেই তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি হয়েছিল। আর সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি সরকারের সাথে গোপনে আঁতাত করেছেন। 

এর আগেও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা প্রসঙ্গটিও বিএনপির অনেক নেতা বলে থাকেন। তাছাড়া ২৮ অক্টোবরের পর আকস্মিকভাবে মাহমুদুর রহমান মান্নার নীরবতাকেও বিএনপির নেতারা সন্দেহ করছেন। 

বিএনপির কাছে এরকম তথ্য আছে যে, আন্দোলন বানচালের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং তাদেরকে নানা রকম টোপ দেওয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতেও আন্দোলন যদি বেগবান হয় তাহলে আবার টোপ দেওয়া হবে। এই সমস্ত লোভ পরিত্যাগ করে শরিকরা কতটুকু আন্দোলনের ব্যাপারে অটল থাকতে পারবে এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। আর কারণেই বিএনপি এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে জোটে যেতে চায় না।

বিএনপি মনে করে তারা আন্দোলন করবে। তাদের কর্মসূচির সঙ্গে যদি কেউ একমত পোষণ করে তাহলে তারা যুগপৎ আন্দোলন করবে। তবে আন্দোলন তাদের নিজেদেরই করতে হবে এমনটি মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। আর এ কারণে বিএনপি কোন রকম জোট বা লিয়াঁজো কমিটির পক্ষে নয়।

বিএনপি   যুগপৎ আন্দোলন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

২০৪ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

প্রকাশ: ০২:৫৩ পিএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।

এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।

বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।

দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত জন চেয়ারম্যান পদে, জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।

দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জুন।


বহিষ্কার   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা

প্রকাশ: ১০:৪১ এএম, ১৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।

কারণ, যুগপতের সব দল জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।

বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।

নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।


লিয়াজোঁ   কমিটি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: সেদিন কী বলেছিলেন বিএনপির নেতারা

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। 

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চারদিন পর ২১ মে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে। ওই অধিবেশন ছিল ৩৪ কার্যদিবসের। মোট ৪১ দিন অধিবেশন চলে। ২১ মে এর অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতা আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন শেখ হাসিনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করেন। পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে আসাদুজ্জামান খানের এই বক্তব্যের পর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির অনেক নেতাই টিপ্পনি মূলক ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। 

আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে সুধাংশু শেখর হালদার এসব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করে দেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধও জানিয়েছিলেন। এই সময় যে সমস্ত বিএনপির নেতারা পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। তিনি এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন কিছুই করতে পারবেন না।

শাহ আজিজ এটাও মন্তব্য করেছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আর কোনদিন বাকশালে ফিরে যাবে না। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশে কোনোদিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলেরও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। 

এসময় বিএনপির আরেকজন সংসদ সদস্য তৎকালীন পাবনা-২ নির্বাচিত ডা. এম এ মতিন বলেছিলেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব যা করেছেন তাঁর জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় সংসদে এই নেতা। 

যশোর-৯ থেকে নির্বাচিত তরিকুল ইসলামও ঐ অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখেন। এই বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছর শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে দিলীন হয়ে গেছে। কাজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া যায় না। তিনি শেখ হাসিনার বিচারও দাবি করেছিলেন। 

এই অনির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বিএনপির আরেক নেতা তৎকালীন ঢাকা-২৮ থেকে নির্বাচিত আব্দুল মতিন চৌধুরীও আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন। এই অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি যেন নতুন ষড়যন্ত্র না করেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে লক্ষ্য রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। পয়েন্ট অফ অর্ডারের এই আলোচনায় অবশ্য কোন রকমের সিদ্ধান্ত হয়নি। স্পিকার এর পর মূল আলোচনার জন্য দিনের কার্যসূচিতে ফিরে যান।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন