একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। দিন তারিখ ঠিক না রেখে, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবস না মেনে উপর্যোপুরি আন্দোলন কর্মসূচির ফলে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে তা হলো- গতকাল মধ্য রাতের পর তাদের আজকের যে ঢাকা দক্ষিণের কর্মসূচি, সে কর্মসুচি প্রত্যাহার করা হয়। ইতিমধ্যে বিএনপির কর্মীরা এবং তৃণমূলের নেতারা সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ কারণে তাদের অর্থ ব্য়য় হয়েছে। যে কোনো কর্মসূচি করতে গেলে অনেক ধরনের প্রস্ততির ব্যাপার থাকে। মধ্যরাতে যখন কর্মসিূচিটি বানচাল করা হয়েছে, তখন তারা হতাশ হয়েছেন, বিভ্রান্ত হয়েছেন। বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ( ৭ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হয়, বৃহস্পতিবার (৯ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের ভুমিকম্পে মৃতদের জন্য শোক পালন করা হবে। তুরস্ক বাংলাদেশের একটি ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ, তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত সুসম্পর্ক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তুরস্কের অবদান রয়েছে। এ রকম একটি দেশের মানবিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশে যে শোক প্রকাশ হবে এটি জানা কথা। কিন্তু এই শোক প্রকাশের বিষয়টি মঙ্গলবার ঘোষণা করার পরও বিএনপি কিভাবে পদযাত্রা কর্মসূচিটি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল- সেটি একটি বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
জানা গেছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক, সমবেদনা, সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে পূর্ব ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি স্থগিত করেছে দলটি। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যকে এই তথ্য জানান। দিদার জানান, তুরস্ক ও সিরিয়ায় মানুষের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৯ ফেব্রুয়ারির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত গণ-পদযাত্রা কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শক্রমে এই কর্মসূচি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গণ-পদযাত্রা কর্মসূচির পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,বিএনপি কেন এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করলো, সেটি নিয়েও নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মধ্যে যে এক ধরনের অস্থিরতা, বিভ্রান্তি এবং সমন্বয়হীনতা রয়েছে- তা এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হলো। শুধু এটি নয়, এর আগেও বিএনপি একাধিকবার একই ঘটনা ঘটিয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির পর বিএনপি ২৪ ডিসেম্বর কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল- যা অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয়েছিল। সে কারণে বিএনপিকে পিছু হটতে হয়। এর আগেও বিএনপি একটি কর্মসূচি দিয়েছিল- সেদিনও একটি ধর্মীও অনুষ্ঠানের দিন ছিল। বিএনপি কোনো দিনক্ষণ বিবেচনা না করেই বিভিন্ন সময়ে অহেতুক কর্মসূচি ঘোষণা করে থাকে- ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে গুরুত্ব বা গম্ভীরতা এবং দায়িত্বশীলতা থাকা দরকার, সেটি তাদের নেই। রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে যে দিক নির্দেশনা বিএনপি পেয়ে থাকে- সে দিক নির্দেশনায়ও গুরত্ব বা দায়িত্বশীলতার বিষযটি পরিলক্ষিত হয়না। এটি না থাকার কারণেই বার বার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি। এখন দেখার বিষয় দায়িত্বশীলতার দিক থেকে বিএনপি এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আবারও কোনো ধরনের হোঁচট খায় কি না।
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।