আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে পথ হাটছে বিএনপি এবং জামায়াত। বস্তুতপক্ষে দল দুইটি একই অবস্থানে থাকলেও সমসাময়িক সময়ে দল দুটির যে দূরত্ব- তা দেশের রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে দল দুটির ভিন্ন ভিন্ন কৌশল বলেই জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে,‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিকে দেশে-বিদেশে অনেক ভুগতে হয়েছে। জামায়াতের সম্পৃক্ততার কারণে কূটনৈতিক মহলে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। যে কারণে দূরত্ব রেখে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে দল দুটি।
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক সময়ের সবচেয়ে কাছের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির দূরত্ব বেড়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি তো দূরের কথা, সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেও একে-অপরকে এড়িয়ে চলছে। সর্বশেষ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে নতুন-পুরাতন জোটসঙ্গীদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও অংশ নেয়। কিন্তু জামায়াতের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। ফলে, রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে কি সত্যিই ভাটা পড়েছে- নাকি এটি নির্বাচনী কৌশলের অংশ?
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকার ইস্যুকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে অনেক দল আপত্তি জানিয়েছিল। এ কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি আলাদা জোট করে। শুধু তাই নয়, জামায়াত জোটে থাকার কারণে আওয়ামী লীগ ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ হিসেবে বিএনপিকে নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রচারণা চালিয়েছে। এসব কারণে এবার ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। এর মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শিথিলতা আসে। তারপরও যোগাযোগ ছিল দুই পক্ষে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে শুরু হলে সেখানে জামায়াতও অংশ নেয়। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালনের সময় গত ৩০ ডিসেম্বর মালিবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জামায়াত, যা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে পছন্দ হয়নি। এরপর থেকে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।
সূত্র জানায়, গত ৩ এপ্রিল দেশের রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান জোটসঙ্গীদের দাওয়াত দেওয়া হলেও জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০দলীয় জোটের সাবেক সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের এখনও জামায়াতের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। যদিও তিনি বলছেন, নেই। আর লন্ডন-কেন্দ্রিক বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক কেমন, সেটা কেউ জানে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান জানান, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এখন জোট নেই, তাদের সঙ্গে তার সম্পর্কও নেই। ইফতারে কেন তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, সেটা তিনি জানেন না। কারণ কাউকে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্বে তাকে দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ জানান, তারা কোনো দাওয়াত পাননি, তাই বিএনপির ইফতারে অংশ নেননি। বিএনপি একটা নীতি-আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করে। তারাও একটা নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন। ফলে, বিএনপি কার সঙ্গে জোট গঠন করবে কিংবা সম্পর্ক রাখবে সেটা তাদের বিষয়। তবে, জামায়াত সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। এটা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। কোনো দল যদি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখতে চায় তাহলে জামায়াত কী করতে পারে?- বলেও জানান তিনি।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে কেউ স্থায়ী শত্রু নয়, আবার কেউ চিরদিনের বন্ধুও নয়। এই মুহূর্তে কাউকে শত্রু কিংবা মিত্র বানানো বিএনপির লক্ষ্য নয়। বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করা। আর এখানে যত পারা যায় রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করা। সরকার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তাই অনেকটা আলোচনার ভিত্তিতে কৌশলগত কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এখন যে দূরত্ব সেটা একটা কৌশল। কিন্তু এই কৌশল দুই পক্ষের মধ্যে সততার নাকি চালাকির সেটা পরিষ্কার নয়। তবে, এটুকু বলতে পারি, এখানে যারা চালাকি করবে, তারা ঠকবে। কৌশলগতভাবে এই দূরত্ব বজায় থাকলেও নিশ্চয়ই নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে আবারও সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। আর চালাকির হলে সেটাও স্পষ্ট হবে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দীর্ঘদিনের মৈত্রী ছিল। কীভাবে তার পরিসমাপ্তি হবে সেটা এখন প্রশ্ন। আপনি জামায়াতের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে সম্পর্ক রাখবেন, আবার কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেবেন না, এটা তো হতে পারে না। আবার জামায়াত মুখে যদি বলে, আমরা বিএনপির সঙ্গে থাকতে চাই, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড যদি বিএনপির বিপক্ষে যায়, বিএনপির কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পক্ষে হয় তাহলে সেটাও দ্বিমুখী আচরণ হয়ে গেল।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি কৌশলগত কারণে দূরত্ব বজায় রাখলেও জামায়াত বিষয়টিকে কীভাবে নিচ্ছে- তা বোঝা মুশকিল। কারণ তাদের অনেক কার্যক্রমে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ফলে, বিএনপি-জামায়াতের এই দূরত্ব নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা আছে। তবে এটা বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েরই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল হতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এই সম্পর্কের দূরত্ব আসলে কতখানি- সেটা বোঝা যাবে। তবে এখন দেখার বিষয় বিএনপি এবং জামায়াত উভয়েই কি ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে কি না?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।