সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় ইতিমধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না- এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। কেননা গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) ছিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার শেষ দিন। কিন্তু শেষ দিন অবধি বিএনপি মনোনীত কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্র বলছে, এখন কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আওয়ামী লীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতা। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের তালিকায় এবারের মনোনয়ন প্রাপ্তীতে এগিয়ে আছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান।
সূত্রমতে, আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ৪১ জন মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। গত রোববার থেকে শুরু হয়ে গতকাল বুধবার ফরম বিতরণ শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, এই নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গাজীপুরে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৭ জন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে।
সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ, সাবেক সহসভাপতি আসাদুর রহমান, সাবেক সদস্য মো. আবদুল আলীম মোল্লা, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রিয়াজ মাহমুদ, সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মো. আজহারুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস এম আশরাফুল আলম, গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আবদুল কাদের এবং প্রাথমিক সদস্য মো. হারুন অর রশিদ।
এছাড়াও, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ করে প্রার্থী হতে ইচ্ছাপোষন করেছেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল, আওয়ামী যুবলীগ সদস্য মো. রুহুল আমীন মণ্ডল, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মেজবাহ উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন এবং শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান।
সূত্র বলছে, এসব প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন পাবার দৌড়ে এগিয়ে আছেন তিন জন। তারা হচ্ছেন- গাজীপুরের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান। তবে এই তিন জনের মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।
২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে গাজীপুরের মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে দেখা যায় এবং তিনি সেখানে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ ঘটনার পর ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর চলতি বছর ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে তাকে ক্ষমা করা হয় এবং দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পান জাহাঙ্গীর আলম। কাজেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, বিতর্কিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম বহিস্কৃত হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান আসাদুর রহমান কিরণ। কিন্তু কিরণ দায়িত্ব নেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। কাজেই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। অন্যদিকে আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দলীয় নিয়ম-নীতি অুনসরণ করে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থানীয়ভাবেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়াও, তিনি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করার পরও দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সেসব বিবেচনায় আজমত উল্লা খানকেই এবারের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এখন কেবল দেখার বিষয় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আজমত উল্লা খান মনোনয়ন পাচ্ছেন কি না এবং আসছে শনিবার (১৫ এপ্রিল) তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন মো. আজমত উল্লা খান আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন