গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে একের পর এক চমকপ্রদ খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচনের বাকি আর প্রায় দুই মাসের মতো সময়। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে যেমন ছিল আলোচনা, তেমনি বিএনপির প্রার্থী কে হবেন- এ নিয়েও ছিল স্থানীয় জনসাধারণ এবং ভোটারদের মধ্যে কৌতুহল।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সেই সূত্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সরকার শাহ নূর ইসলাম ওরফে রনি। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সরকার শাহ নূর ইসলাম। এ সময় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন হাসান উদ্দিন। তাঁকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহ নূর ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম সরকারও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুব ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক। নুরুল ইসলাম বর্তমানে টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় জেল খাটছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকার শাহ নূর ইসলাম বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের ছেলে। আমার বাবা ও চাচা বিএনপির ত্যাগী নেতা। আমি নগরের প্রতিটা এলাকায় ঘুরেছি। মানুষের মধ্যে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। তাই আমি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই।’
সরকার শাহ নূর ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন কারাগারে। তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতা ছিলেন। আমি তাঁর পক্ষ হয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’
বর্তমান সরকারের অধীন বিএনপি কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি সমর্থন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির একজন কর্মী। দলে আমার কোনো পদ-পদবি ছিল না বা নেই। তবে আমি যেহেতু বিএনপি পরিবারের সদস্য, তাই আশা করছি বিএনপির সব ভোটার ও কর্মী–সমর্থকদের পাশে পাব। শুধু তা–ই নয়, দলমত নির্বিশেষে সবাই আমাকে ভোট দেবেন।’
১৭ এপ্রিল গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে হাসান উদ্দিন সরকার বলেছিলেন, ‘দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করব। দল সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা কৌশল গ্রহণ করব। আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে ছেড়ে দেওয়া হবে না।’
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অুনযায়ী, আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল। এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মেয়র পদে ১৩ জন ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়পত্র সংগ্রহ করেছে মোট ৪৩৮ জন। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন পাঁচজন। আর কাউন্সিলর পদে দাখিল করেছেন ২৫৯ জন।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিলেও অতি কৌশলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপির একাধিক কর্মী-সমর্থক এবং নেতা। মূলত কাউন্সিলর পর্যায়ে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীই প্রার্থী হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি আর তৃণমূলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকার কারণেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে আসছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি পরিবারের একজনকে মেয়র প্রার্থী হতে দেখা গেছে। এমন প্রতিটি সিটি নির্বাচনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। এখন দেখার বিষয় কোন কোন সিটিতে বিএনপির কোন কোন নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন বিএনপি মেয়র প্রার্থী শাহ নূর ইসলাম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন