দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বরিশাল বিভাগের কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং বাহাউদ্দিন নাছিম অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটি বলছে, এক সময়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদের পাল্টাপাল্টি আধিপত্য এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের আধিপত্য বরিশাল অঞ্চলে দেখা গেলেও আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর উত্থানের মধ্য দিয়ে আমু, তোফায়েল এবং নানক বরিশাল অঞ্চল থেকে বের হয়ে রাজধানী কেন্দ্রীক রাজনীতি শুরু করেছিলেন। সেই থেকে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের এসব বর্ষীয়ান নেতাদের খুব একটা বেশি দেখা যায়নি।
দলটির বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুকেও গত পাঁচ বছর বরিশালের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এ ঘটনাকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের আভাস হিসেবেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, আগে বরিশালের রাজনীতি হয়ে পড়েছিল এককেন্দ্রিক। এখন সে ধারা থেকে রাজনীতি বের হয়ে আসছে। এটা আপাতত ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমির হোসেন আমুর নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি। গত পাঁচ বছরে তিনি বরিশালের ওপর দিয়ে বিভিন্ন সময় ঝালকাঠি গেছেন এক রকম নীরবে। মাঝেমধ্যে বরিশাল নগরে জীবনানন্দ দাশ সড়কে (বগুড়া রোড) তাঁর নিজ বাড়িতেও অবস্থান করতেন। সেখানে নেতা-কর্মীদের তেমন ভিড় থাকত না। তবে গতকাল শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দিনভর নির্জন ওই বাড়িতে ছিল নেতা-কর্মীদের সমাগম; স্লোগানে স্লোগানে মুখর বাড়ির আঙ্গিনা।
সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে কয়েক শ’ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে আমির হোসেন আমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বিশেষ অতিথি ছিলেন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন এই নেতারা। দীর্ঘদিন পর বরিশালে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে আমির হোসেন আমুর প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে।
এদিকে বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে এখন শোভা পাচ্ছে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ব্যানার। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ব্যানার-পোষ্টার দিয়ে সাজানো হয়েছে সমস্ত নির্বাচনী এলাকা। সেখানে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ কিংবা তার ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহর কোনো চিহ্ন নেই।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বরিশাল অঞ্চলের রাজনীতিতে আমির হোসন আমু একজন প্রভাবশালী নেতা। বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর ক্রমেই বরিশালের রাজনীতিতে একক প্রভাববলয় তৈরি হতে থাকে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। তাঁর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বরিশালের রাজনীতির প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন আবুল হাসানাত। এতে আমির হোসেন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গত পাঁচ বছর এ জন্য তাঁকে বরিশালের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকে পাল্টাতে শুরু করেছে দৃশ্যপট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় বর্তমান মেয়র সাদিক আবুদল্লাহ ও তাঁর সমর্থকেরা হতাশ। এর মধ্য দিয়ে বরিশালে পাঁচ বছর ধরে সাদিক আবদুল্লাহর একক আধিপত্য খর্ব হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তাঁর বাবার রাজনীতিতেও। বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর দীর্ঘদিন পর বরিশালে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান এরই ইঙ্গিত বলে মনে হচ্ছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সব বর্ষীয়ান নেতারই যথাযথ মূল্যায়ন, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা উচিত।
বরিশাল সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ দৃশ্যপট
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন