২১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। গাজীপুর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থীরা এখন প্রচারের অপেক্ষায়। অন্য সিটি করপোরেশন গুলোতেও প্রার্থীদের জনসংযোগ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে নতুন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও বিএনপি'র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা এই সরকারের অধীনে এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন করবেন না। কিন্তু মুখে বিএনপি যাই বলুক না কেন বিএনপি'র একাধিক নেতা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে গাজীপুর নির্বাচনে বিএনপির নেতা এবং আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত কারান্তরীণ নুরুল ইসলামের পুত্র প্রার্থী হচ্ছেন।
বরিশালেও বিএনপির নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন এমন নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও তিনি যে প্রার্থী হবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এর ফলে আগামী সিটি নির্বাচনের উত্তাপ সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। এই সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে যে দলীয় সরকারের অধীনেও বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি প্রমাণের জন্য এটাই আওয়ামী লীগের শেষ সুযোগ। দ্বিতীয়তঃ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে তার দলের ভিতরে যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধ ইত্যাদি মীমাংসা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে কোন্দল মুক্ত দল তৈরি করার ক্ষেত্রে এই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় সুযোগ।
তৃতীয়ত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা এখনও জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। কাজেই একদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অন্যদিকে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা এই দুটি একসাথে করার চ্যালেঞ্জটা আওয়ামী লীগকে ভালোভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। আর এই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মূল দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের চারজন হেভিওয়েট নেতা। যারা এখন সংসদ সদস্য নন। কারণ নির্বাচনের বিধিনিষেধ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। আর এইবার নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টি অত্যন্ত কঠোর ভাবে নিবে। কাজেই আওয়ামী লীগের চার জন নেতার ওপরই এই নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব পড়বে। তবে এই চার নেতা কেবল পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারক না। এই নির্বাচনগুলোর ইতিবাচক এবং ফলাফল তাদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যে চার নেতার দিকে তাকিয়ে আছেন পাঁচ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং যে চার নেতার অগ্নিপরীক্ষা নির্বাচন, তাদের মধ্যে রয়েছেন;
জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক সবগুলো নির্বাচনই পর্যবেক্ষণে রাখছেন, সবগুলো নির্বাচন পরিচালনার কার্যক্রমে তাকে সম্পৃক্ত দেখা যাবে। তবে তিনি বেশি করে সম্পৃক্ত বরিশাল এবং সিলেটের নির্বাচন নিয়ে। বরিশালে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। প্রার্থী পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর ফলে বরিশালে হাসনাত যুগের অবসান ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন এবং নানক যুগের সূচনা হয়েছে বলে কারো কারো ধারণা। জাহাঙ্গীর কবির নানক বরিশালে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং তার পুত্রের বিকল্প নেতা হিসেবে সাড়া জাগাতে পারেন কিনা এই নির্বাচন তার পরীক্ষা। কেউ কেউ মনে করছেন এটি আসলে খোকন সেরনিয়াবাত এর নির্বাচন নয়। বরং জাহাঙ্গীর কবির নানকের নির্বাচন।
সিলেটে যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের রাজনৈতিক শিষ্য। এক-এগোরোর সময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে আওয়ামী লীগের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তিনি মইন উ আহমেদকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন এবং এসব কর্মকাণ্ড করেছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে। জাহাঙ্গীর কবির নানক তখন যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমানও সবগুলো নির্বাচন তদারকি করবেন। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তার পরে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। কিন্তু এবার তিনি আবার মনোনয়ন পাবেন কিনা সেই পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাকে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় সম্পৃক্ত থেকে। এই প্রচারণা যদি তিনি সফল হন এবং তার নেতৃত্বের যোগ্যতা যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেতেও পারেন।
বাহাউদ্দিন নাসিম: বাহাউদ্দিন নাসিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রিয় নেতা। এবার সবগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি নজর রাখবেন এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তৃণমূল আওয়ামী লীগের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণে বাহাউদ্দিন নাসিম কোন্দল মেটানোর ক্ষেত্রে কাজ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসএম কামাল হোসেন: এসএম কামাল সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিপক্ক এমন ধারণা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তিনি গাজীপুরে ব্যাপক প্রচারণার কাজ শুরু করেছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এসএম কামালকে আগামী ২১ জুনের মধ্যে প্রমাণ করতে হবে যে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা এখন অনেক বেশি। আর এটি প্রমাণের মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো আগামী নির্বাচনে নিজের মনোনয়নও নিশ্চিত করতে পারবেন।