বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শনিবার (২০ মে) রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করবে ১২ দলীয় জোট। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে এই মিছিল বের করা হবে বলেও জানানো হয়। মঙ্গলবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ এলডিপির কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সভায় এই কর্মসূচি গৃহীত হয়। সভায় বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টিকে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে ১২ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় বলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সভায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর, পরবর্তীতে স্যাংশন দেওয়া রাষ্ট্র থেকে কোন কিছু কিনবেন না জানিয়ে বক্তব্য এবং ৬টি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের কূটনৈতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা বাতিলের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নেতারা বলেন, বর্তমান সরকারের পায়ের তলার মাটি নাই বলেই প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের আবোল- তাবোল বক্তব্য দিচ্ছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনৈতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদেই বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনা দলগুলো এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কূটনেতিক তৎপরতার মাধ্যমেই তারা সরকার হঠানোর চেষ্টা করছিল। কাজেই এসব কূটনৈতিকদের পাশে দাঁড়াতেই তাদের এই বিক্ষোভ।
উল্লেখ্য গত সোমবার (১৫ মে) যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ ঢাকায় নিযুক্ত চার রাষ্ট্রদূতের বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা (এসকর্ট) প্রত্যাহার করা হয়। অন্য দুই রাষ্ট্রদূত হলো যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সোমবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশই বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দেয় না। আমরা তিন-চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। সম্প্রতি অন্তত আরও ১২ থেকে ১৫ টি দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই সবাইকে সমানভাবে নিরাপত্তা দেয়া হবে। এজন্য চারজন রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও জানান, বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া ভিত্তিতে বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকার এ ক্ষেত্রে বাধা দিবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসমিন সাইকা পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই চারটি রাষ্ট্রের পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকা থেকে তারা কোথাও যেতে চাইলে এতদিন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হতো তাদের।
হঠাৎ তাদের এসকট সুবিধা প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, ঢাকায় কূটনৈতিক জোন ৫৩টি রয়েছে। প্রতিটি দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেখভাল করতে হয়। এতে অনেক ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এর বাইরে কোন বিশেষ দেশের জন্য আলাদা করে ফোর্স দেওয়ার মত বাড়তি পুলিশ নেই।
পুলিশ জানায়, এতদিন চারটি দেশের কূটনৈতিকরা কোথাও যেতে চাইলে (কূটনৈতিক এলাকা থেকে) তাদের এসকর্টে বাড়তি ফোর্স বা পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হতো। এর কারণে অন্যদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর জন্য অনেক প্রস্তুতিও নিতে হয়। তাই এখন থেকে সব রাষ্ট্রকে একইভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হবে। এখন থেকে ঢাকায় বাড়তি প্রটোকল সুবিধা পাবেন না তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে) জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান ক্বারী মুহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল ) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, ন্যাপ- ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শওকত আমিন, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির মহাসচিব মানসুর আলম শিকদার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০ মে শনিবার মতিঝিলে পীরজঙ্গি মাজারের সামনে জনসমাবেশ করবে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
কূটনৈতিক বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার বিএনপি বিক্ষোভ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন