আগামীকাল গাজীপুর
সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে
না, কিন্তু এই নির্বাচন উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেই ধারণা করা
হচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা
খানের সঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের। জায়েদা
খাতুন একজন প্রতীকী প্রার্থী। আসলে নির্বাচনের মাঠে লড়াই হচ্ছে আজমত উল্লা বনাম জাহাঙ্গীর
আলমের।
আজমতুল্লাহ
যদিও আওয়ামী লীগের টিকিটে সাবেক মেয়র ছিলেন। তাছাড়া তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার নির্বাচনে তিনি আওয়ামী
বিরোধী শক্তির প্রধান ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ
করে তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই হারাতে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে,
২০১৮ নির্বাচনে গাজীপুর থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। সে সময় আজমত উল্লা
মনোনয়ন না পেলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হননি। বরং জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করেছেন।
মেয়র হবার পর জাহাঙ্গীর আলম একের পর এক নানা রকম অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে
দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তৃত্ববাদী মনোভাব ইত্যাদি অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি
তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটুক্তি করেছিলেন। এই কটুক্তির বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয় এবং সেই সময় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকেও অপসারণ করে। আর এ কারণে
এবারের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। যদিও আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে তার বহিষ্কারাদেশ
প্রত্যাহার করে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে। সেই আবেদনে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন
এবং ভবিষ্যতে দলের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজকর্ম করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু
সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবার নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
ঋণ খেলাপি থাকার
অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে গিয়েছিলো। এ বিষয়টি তিনি জানতেন। এ কারণে তিনি
তার মাকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছিলেন। এখন তার মার সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী মূল
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হতে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের পায়ে
কুড়াল মারার চেষ্টা করছেন। জাহাঙ্গীর আলম সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় বিএনপি,
জামায়াত, হেফাজতসহ আওয়ামী বিরোধী সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
অন্যান্য সময়
যেটি হত যে, নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ বিভক্ত থাকতো, দুই গ্রুপের আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মীরা দুইরকম অবস্থান গ্রহণ করতো। যার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য জয়ী হওয়া কঠিন
হতো। ২০১৩ সালে এভাবেই নির্বাচনে হেরে যান আজমত উল্লা। কিন্তু এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট
অন্যরকম এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে গত এক বছরে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ে
পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটিগুলো গঠন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং নীতিবানদের প্রাধান্য দিয়েছেন। মির্জা আজম ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক
সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন
এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির পরামর্শে
তিনি গাজীপুরে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে
এবার অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এর মধ্যে
কোন অন্তঃকলহ নেই এবং এই ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়েই আজমত
উল্লাহর পক্ষে লড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্তত এখন পর্যন্ত সেরকম একটি অবস্থাই লক্ষ্য
করা যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন
হল যে, শেষপর্যন্ত যদি আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কি আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা
সম্ভব? আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন,
অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে হারানোর শক্তি
কারো নেই।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর
আলম আওয়ামী লীগ হলেও তিনি স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী বিএনপি-জামাতকে এক করে নির্বাচন
করছেন। আদর্শ বিকে দেওয়ার এটি একটি অনন্য উদাহরণ। এখন দেখার বিষয় যে, শেষ পর্যন্ত
আওয়ামী লীগ বনাম অ্যান্টি আওয়ামী লীগের লড়াইয়ে কে জয়ী হয়।
গাজীপুর আওয়ামী লীগ অ্যান্টি আওয়ামী লীগ লড়াই
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।