গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসন। পাঁচটি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগের দুজন মন্ত্রী রয়েছেন। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রিয় নেতা। একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর নির্বাচনের ব্যাপারে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। এমনকি একজন প্রেসিডিয়ামের সদস্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সার্বিক তদারকির সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এই নেতারা এখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের ভূমিকা এবং কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এই সমস্ত নেতাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
গাজীপুর নির্বাচন সম্পর্কে তাদের উদাসীনতা ভুল তথ্য প্রদান এবং ভুল কৌশল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর এই সমস্ত হিসেব-নিকেশগুলো সামনে এসেছে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের দুইজন মন্ত্রী রয়েছেন। মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর পর জেষ্ঠ্য মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত। গাজীপুরে তিনি প্রভাবশালী নেতা।এই নির্বাচনে তার ভূমিকা কি ছিল? তিনি দলকে সংগঠিত করতে বা প্রার্থীকে জেতানোর জন্য কি করেছেন?- এই প্রশ্নটিই গাজীপুরে ওঠেছে।
আওয়ামী লীগের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেলও গাজীপুরের। তিনি এলাকায় জনপ্রিয় এবং তার এলাকায় একটি প্রভাব রয়েছে। এই নির্বাচনে তার ভূমিকা কি ছিল?- তা নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। কারণ গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধ পক্ষের অন্যতম নেতা হিসেবে মনে করা হতো জাহিদ হাসান রাসেলকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য তিনি কি করলেন? এছাড়াও গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্যের ভূমিকা নিয়েও এখন কথা হচ্ছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়াকে। কিন্তু মায়ায় ভূমিকা ছিল শুরু থেকেই নিরব নিস্তরঙ্গ। তিনি আসলে আজমত উল্লাকে জেতানোর জন্য কতটুকু ভূমিকা পালন করেছেন?- এই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ওঠেছে।
গাজীপুরসহ ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে পালন করেছেন মির্জা আজম। একজন জনপ্রিয় নেতা, ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বাড়তি মনোযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ ভুল ছিল বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান এবং জাহাঙ্গীরকে প্রতিরোধ করার ঘোষণা- এগুলো আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন, গাজীপুর নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীর আলমকে দুর্নীতি দমন কমিশনে ডেকে নিয়ে যাওয়া। তার দুর্নীতির কথা বলে, তাকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করা- ইত্যাদি সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
তাছাড়া নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীর আলমকে তড়িঘড়ি করে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তটি কতটুকু সঠিক ছিল- সেই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে। মির্জা আজম নির্বাচনের ব্যাপারে শুধুমাত্র দল নির্ভর থেকেছেন। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, যিনি সাতবারের নির্বাচিত এমপি, তিনি নির্বাচনে কোন কৌশলে শুধুমাত্র দলকে অন্তর্ভুক্ত রাখেন কিভাবে? তবে অনেকে মনে করেন, শেষ পর্যন্ত গাজীপুরে যে আজমত উল্লা এতগুলো ভোট পেয়েছেন- তার একটি বড় কারণ হল মির্জা আজমদের ভূমিকা।
এস এম কামাল আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক। যিনি এই নির্বাচন উপলক্ষে গাজীপুরে সার্বক্ষণিকভাবে ছিলেন। তিনিও এই নির্বাচনে দলের কর্মী নির্ভর ছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে, জনগণকে নিয়ে যাওয়া বা সাধারণ ভোটারদেরকে মন জয় করার চেয়ে কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, এই সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ভুল কৌশল গ্রহণ করেছিল গাজীপুরে। বিশেষ করে বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, তাদেরকে হয়রানি করানো- ইত্যাদি নেতিবাচকভাবে কাজ করেছে। ৬০ জন বিদায়ী ওয়ার্ড কমিশনারই ছিলেন জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে এবং তারা সার্বক্ষণিকভাবে জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে কাজ করেছেন- যার ফলাফল দেখা গেছে ভোটে।
আর এই সমস্ত ভুলের কারণে গাজীপুরে বিপর্যস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন প্রশ্ন হলো, যে সমস্ত নেতারা গাজীপুরের দায়িত্ব ছিলেন- তারা কি তাদের ভুলগুলো নিজেরা বিশ্লেষণ করবেন? আত্মশুদ্ধি করবেন? নাকি তারা সবকিছু এড়িয়ে দায় চাপিয়ে দিবেন প্রার্থীর উপর?
গাজীপুর নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী নেতা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ওবায়দুল কাদের শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেটি চেয়েছিলেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে যে যার মতো করে অংশগ্রহণ করবেন এবং সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন। সে রকম একটি নির্বাচন এখন দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আর এই দুরাশায় পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হল মন্ত্রীদের ক্ষমতার লোভ, এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং কোথাও কোথাও পরিবারতন্ত্র কায়েমের আগ্রাসী মনোভাব।
শেষ পর্যন্ত খোকনের ব্যাপারে পিছু হটল বিএনপি। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। বরং চা-নাস্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিন ঘণ্টার বৈঠকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও যুক্ত হয়েছিলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং তার বিরুদ্ধ পক্ষের নেতা কায়সার কামাল কথা বলেন বলে জানা গেছে।