জামায়াতে ইসলাম দীর্ঘ ১০ বছর পর ঢাকায় সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশ নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আরেকটি ইসলামপসন্দ দল ইসলামী আন্দোলন গত কয়েকটি স্থানীয় পর্যায়ে এবং উপ-নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েছে। সর্বশেষ তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা দ্বিতীয় হয়েছে। এই সমস্ত দক্ষিণপন্থি দলগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং উত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সংশয় এবং উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে কি ইসলামী বিপ্লব আসন্ন?
জামায়াতে ইসলামের সাম্প্রতিক একটি দলিল থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সালের পর থেকে জামায়াতের সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। জামায়াতের হিসেব অনুযায়ী, ২০০৮ সালে তাদের পূর্ণকালীন সদস্য বা রোকন’র সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৮শ’ ৬৬ জন। সেটি এখন ৭৩ হাজার ৪৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি বিস্ময়করও বটে! জামায়াতে ইসলাম দাবি করেছে, তাদের সাধারণ সদস্যদের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। তাদের হিসেব মতে, এই সদস্য সংখ্যা অন্তত তিন গুণ হয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২১ হাজার, সেখানে এখন জামায়াতের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ ৩৯ হাজারে।
২০০৮ এর পর থেকে জামাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠে এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সকল নেতাই দণ্ডিত হয়েছেন। জামায়াত ২০০৮ এর পর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন হারায় এবং এই নিবন্ধন হারানোর পর জামায়াতের কোনো কর্মকান্ড ছিল না। দশ বছর প্রকাশ্যে কোনো সাংগঠনিক সমাবেশ বা সাংগঠনিক তৎপরতা করতে পারেনি ইসলামপসন্দ এই রাজনৈতিক দলটি। তাহলে প্রশ্ন হলো- যুদ্ধাপরাধ অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত এতো বাধা-বিপত্তির পরও কিভাবে তার সদস্য সংখ্যা তিনগুণ বাড়ালো? শুধু জামায়াতে ইসলামের একার যে উত্থান হয়েছে- এমনটি নয়।
জামায়াতের পাশাপাশি বাংলাদেশে হেফাজত হেফাজত, ইসলামী আন্দোলনের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বড় বড় শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এখন বাংলাদেশে বিএনপির পর দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল কোনটি- এটি নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। জাতীয় পার্টি তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের চেয়ে অনেক ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। জাতীয় পার্টি এখন একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে বলেও কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে। বিশেষ করে উত্তর অঞ্চল এবং সিলেট ছাড়া জাতীয় পার্টির অবস্থা অন্য জায়গাগুলোতে খুবই দুর্বল।
অন্যদিকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন সারা বাংলাদেশে একটি অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। বাংলাদেশের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে দক্ষিণপন্থী ইসলামিক দলের সংখ্যা ৩০ টির মতো। এই দলগুলোর মধ্যে অন্তত ৫টি দলের সারাদেশেই জনভিত্তি এবং কিছু কিছু কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এই উত্থান কেন হলো?- সেটি একটি বড় প্রশ্ন বটে। আবার অন্যদিকে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো যেন গভীর সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। দলগুলো সঙ্কুচিত হতে হতে নিঃশেষ প্রায় হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগও তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন ধর্ম-কর্ম এবং ধর্ম-কর্মকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার একটা সূক্ষ্ম প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম- সে স্বপ্ন কি আসলে বিবর্ণ, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে? বাংলাদেশে কেন ধর্মান্ধ, উগ্র, মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটছে?- এটি নিয়ে রাজনীতিতে গবেষণা হতেই পারে।
তবে একটি বিষয় সকলেই একমত, তা হলো- আমাদের দেশে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের অভাব, তাদের ভুল রাজনীতি এবং জনবিচ্ছিন্নতার ফলেই দক্ষিণপন্থী ইসলামপসন্দ রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটছে।
বাংলাদেশে ইসলাম বিপ্লব রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চীন সফর বাম দল জাসদ ওর্য়ার্কাস পার্টি সাম্যবাদী দল
মন্তব্য করুন
শৃঙ্খলা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরে তিনি ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অবশেষে আর ছাড় নয়, আওয়ামী লীগ তাঁর দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রগুলো বলছে, দলের ভেতর যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছে এবং দলের ভেতরের কোন্দল করছে তাদেরকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং এই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে কোন্দলরত এলাকাগুলোতে কমিটি বাতিল করে দেওয়া হবে। যারা কোন্দলের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হবে না।