ইনসাইড পলিটিক্স

রাজাকার ও ‘আউয়াল লীগ’ এ পরিণত পিরোজপুর আওয়ামী লীগ?


Thumbnail রাজাকার ও ‘আউয়াল লীগ’ এ পরিণত পিরোজপুর আওয়ামী লীগ?

সম্প্রতি সারাদেশের জেলা, উপজেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব সম্মেলনের পর জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন করে কমিটিও ঘোষণা করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের প্রভাব বিস্তার, আর্থিক লেনদেন, আত্মীয়করণ এবং যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার কারণে এসব নব গঠিত জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে স্থান করে নিচ্ছেন স্থানীয় বিতর্কিত ব্যক্তিরা। ফলে কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী, দুঃসময়ের কাণ্ডারি এবং পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা। আর্থিক লেনদেন, স্থানীয় প্রভাব বিস্তার, আত্মীয়করণ ও যথাযথ মূল্যায়নের অভাবে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এসব নব গঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য, রাজাকার পরিবারের সদস্যসহ দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগ বিরোধী হাইব্রিট আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় বিতর্কিত ব্যক্তিরা। সম্প্রতি বাংলা ইনসাইডারের এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। 

কেইস স্টাডি: পিরোজপুর জেলা         

সম্প্রতি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। গত ১৮ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট এই নতুন কিমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত কমিটিতে আলহাজ্ব  এ কে এম এ আউয়ালকে সভাপতি এবং অ্যাড. কানাই লাল বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করে এই নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন এই জেলা কমিটি অনুমোদন হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় জেলা আওয়ামী লীগে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

অভিযোগ ওঠেছে, ঘোষিত এই নতুন কমিটি- সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান ও তাদের বংশধর, বিতর্কিত ব্যক্তি  এবং তার ব্যক্তিগত অনুসারী ও আত্মীয়-স্বজন দিয়ে পূর্ণ করেছেন। ফলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। মূলত সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল নতুন কমিটিকে ‘আউয়াল লীগ’এ পরিণত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই কমিটি অনুমোদন করা হলেও সম্মেলন হয় গত বছরের ২৭ নভেম্বর। অর্থাৎ ৭ মাস পর এই কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে জেলার আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে- যার প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান- এমনকি রাস্তাঘাটেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ব্যক্তিগত অনুসারী, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের সন্তান, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কিন্তু অর্থ ব্যয়ে পদ পেতে সক্ষম- এমন ব্যক্তি ও বিতর্কিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। আউয়াল পরিবারের অনুগত না হওয়ায় কারণে ঘোষিত নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরীক্ষিত অনেকেই। 

সম্প্রতি বাংলা ইনসাইডারের এক অনুসন্ধানে জানা গেছে,পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত নতুন কিমিটির সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ৫টি দুর্নীতির মামলার আসামি। এর মধ্যে তিনটি মামলায় ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক। মামলার বিচার কাজও শুরু হয়েছে। যে কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনে নির্বাচনের জন্য তিনি মনোনয়ন পাননি।

নতুন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এই নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে স্থান পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মোবারক আলী খানের পুত্র অ্যাড. মো. আলাউদ্দিন খান। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধীতাকারী এবং দেশ স্বাধীন হবার পর ২ বছর কারাগারে ছিলেন রাজাকার মোবারক আলী খান। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ পেয়েছেন অ্যাড. মো. শহিদুল হক পান্না। তার বাবা ফজলুল হক খান ছিলেন যুদ্ধাপরাধী। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে সরকারি চাকরি করেছেন তিনি। ভান্ডারিয়ার কুখ্যাত রাজাকার মজিদ জমাদ্দার, আশরাফ তালুকদার, নুরুল হক গংদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন অ্যাড. মো. শহিদুল হক পান্নার বাবা  ফজলুল হক খান। দেশ স্বাধীনের পরে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল ফজলুল হক খান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর, তিনি আনন্দ উচ্ছ্বাস করে মিষ্টি বিতরণসহ মিলাদ পড়িয়েছিলেন। তার পরিবারের ও আত্মীয়-স্বজনেরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ লিখিতভাবে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পান্নার ফটো দিয়ে, যুদ্ধাপরাধীর পুত্র কিভাবে সরকারি আইনজীবী হয়েছিল- তা জানতে চেয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

এ হলো আওয়ামী লীগের নীতিবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগে পদায়নের নমুনা। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এ কে এম এ আউয়াল আত্মীয়করণ এবং বিরাজনীতিকরণ করেছেন স্বেচ্ছাচারিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে।    

কমিটি অনুযায়ী, নতুন কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মো. জাকির হোসেন খান। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের সম্পর্কে ভাতিজা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মো. ফজলুল হক সেন্টু। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। মুক্তিযুদ্ধকালে আওয়ামী লীগ বিরোধী কট্টর চীনপন্থী নকশাল বাহিনীর সদস্য ছিলেন তিনি। বাগেরহাটে রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে সংগঠিত চীনপন্থী স্বশস্ত্র বাহিনীরও সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে ভাষানী ন্যাপ, কাজী জাফরের ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। সেন্টু, মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের ঝগড়া হিসাবে অভিহিত করা রাজনীতির কট্টর কর্মী ছিলেন। সভাপতির ব্যক্তিগত অনুসারী হওয়ায় তাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কমিটির ৩৩ নং সদস্য কামরুজ্জামান, তার ডাক নাম মুক্তা এবং বংশের নাম ফকির। ইচ্ছাকৃতভাবেই নামের ক্ষেত্রে ডাক নাম উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, ডাক নাম ও বংশের নাম উল্লেখ করা হলে প্রকৃত পরিচয় বের হয়ে আসবে। খানাকুনিয়ারী গ্রামের অধিবাসী তার পিতা আব্দুস সোবাহান ফকির ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার। সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের ব্যক্তিগত অনুসারী ও ক্যাডার হওয়ায় নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য তাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শ্রম সম্পাদক হয়েছেন শেখর শিকদার। সর্বহারা পার্টির অন্যতম সদস্য ছিলেন শেখর। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণসহ ভয়াবহ অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শেখর প্রায় ১ ডজনের উর্ধ্বে মামলার আসামি ছিলেন। এছাড়া, পিরোজপুরের রাজনীতিতে কখনোই সম্পৃক্ত নন, একটি বড় কোম্পানীতে এলাকার বাইরে সার্বক্ষনিক চাকুরি করেও সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. মতিউর রহমান। তার ঘনিষ্ট সুত্র জানায়, টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছেন তিনি। একইভাবে ঢাকার এক ব্যবসায়ী মো. মণিপুর রহমান কখনোই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থেকেও সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন।

কমিটির ৭নং সদস্য আলতাফ হোসেন খান। তিনি ঢাকার একজন ধনী ব্যবসায়ী। গত ১০ বছরেও পিরোজপুরের কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায়নি। কমিটির ২৫ নং সদস্য মো. জাকারিয়া স্বপন, তিনিও ঢাকায় ব্যবসা করেন, এছাড়াও তাকে নেছারাবাদ উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে।

কমিটির ১৭ নং সদস্য মো. ইব্রাহীম হোসেন। তিনি ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি। দলীয় পদ পেতে বাবার নাম পরিবর্তন করে জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের মহানগর কমিটি থেকে বাদ পরেছিলেন তিনি।

ঘোষিত নতুন কমিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, কমিটির ৪ নং পদে রয়েছেন লায়লা পারভিন। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের স্ত্রী। এছাড়াও লায়লা পারভিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পদে বহাল রয়েছেন। সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা করতে গিয়ে আউয়াল পরিবারের দ্বার লাঞ্চিত হয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রীক।

নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন আলহাজ্ব মো. হাবিবুর রহমান মালেক। যিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আপন ভাই। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন মো. মুজিবুর রহমান খালেক। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আপন ভাই। কার্যকরি কমিটির ৫ নং সদস্য হলেন মিসেস সালমা রহমান হ্যাপি। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আপন ভাই মুজিবুর রহমান খালেকের স্ত্রী। অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান মহারাজ। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আপন ছোট ভাই। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের ১ নং সদস্য।

২০ নং সদস্য হয়েছেন মো. তোফাচ্ছেল হোসেন মল্লিক। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বোনের ছেলে। এছাড়া তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যতম সহ-সভাপতি অ্যাড. খান মো. আলাউদ্দিন। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আপন ভাই মুজিবুর রহমান খালেকের ছেলের শ্বশুড়। বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম হিরু এবং ২৭নং সদস্য ইসলাম মিরণ। তারা সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের এক ভাইয়ের ভায়রার ছেলে। যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. নুরুল হুদা আলম। তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আত্মীয়। মো. নুরুল হুদা আলমের স্ত্রী মিসেস তাহমিনা আলমও পদ পেয়েছেন এই কমিটিতে। তারা সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের আত্মীয় হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এছাড়া আরও ৮ জন রয়েছেন সভাপতি পরিবারের আত্মীয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি জেলা কমিটি- কোনো প্রকার নিয়মনীতি না মেনে কেবল সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে কিভাবে অনুমোদন হলো- সে বিষয়টিই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিরোজপুর   আওয়ামী লীগ   জেলা কমিটি   রাজাকার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গীরাও তারেকের ওপর বিরক্ত

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের জন্য বিএনপি কমবেশি অন্তত ৫০ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বৈঠক করেছিল। এই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। 

২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন ভালোই জমিয়ে তুলেছিল। এই সময় এই দলগুলোকে নিয়ে একটি জোটবদ্ধ আন্দোলন করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত জোটবদ্ধ আন্দোলন হয়নি। বরং সবাই তাদের নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপির হঠকারিতা এবং ভুল রাজনীতির কারণে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

নির্বাচনের পর শরিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে নির্বাচনের পরও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছিলেন শরিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আন্দোলনের সঙ্গীদের বিশ্বাস করতে পারেননি। আর এই অবিশ্বাসের কারণে এখন শরিক দলগুলো মোটামুটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। বিএনপির সাথে তাদের যোগাযোগ আলগা হয়ে গেছে। আর সে কারণেই এখন বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাদের উৎসাহ নেই। অনেকেই এখন ঘরে উঠেছেন এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বে তারা বিরক্ত হয়েছেন। এবং বিএনপির সঙ্গে নতুন করে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনের অন্যতম অংশী ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি অত্যন্ত সরব ছিলেন এবং এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি বিএনপির অন্যতম পরামর্শক হিসেবে বিবেচিত হতেন। কিন্তু এখন তিনি লাপাত্তা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, মাহমুদুর রহমান মান্না তারেক জিয়ার ওপর অত্যন্ত বিরক্ত এবং বিএনপির কৌশল নিয়েও তিনি হতাশ। আর এ কারণেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। একই অবস্থা জেএসডির নেতা আ স ম আবদুর রবের। আবদুর রব মনে করছেন যে, বিএনপির রাজনীতির কৌশলই ভুল ছিল এবং এখন এই কৌশলের মাসুল দিতে হচ্ছে গোটা দেশকে। বিএনপি একদিকে যেমন সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না, অন্যদিকে শরিকদেরকেও বিশ্বাস করছে না। আর এ কারণে বিএনপির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এই নেতা।

শরিকদের মধ্যে অন্যতম ছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ। তারাও এখন নিজের আলাদা অবস্থান থেকে রাজনীতি করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে নুর বলেছেন যে, উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। 

শরিকদের যারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে একমাত্র জোনায়েদ সাকি ছাড়া কেউই বিএনপির প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছেন না। বরং বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। 

অন্যদিকে বিএনপির আদর্শিক জোট জামায়াত মাঝখানে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। কিন্তু আবার ঘনিষ্ঠতায় ছেদ ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান অভিযোগ হলো তারেকের উদ্ভদ বিভ্রান্তিমূলক এবং অরাজনৈতিক সূলভ সিদ্ধান্ত। শরিকদের মধ্য থেকে একাধিক নেতা বলেছেন, তারেক জিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব রয়েছে। হুটহাট তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিণতি এবং সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নেন। একজন রাজনৈতিক নেতার যে গুণাবলি থাকা উচিত তা কিছুই তার মধ্যে নেই। আর এ কারণেই শরিকরা এখন বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন বিএনপির দলের মধ্যে হতাশা অন্যদিকে শরিকরাও এখন বিএনপির প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছে না।


বিএনপি   তারেক জিয়া   মাহমুদুর রহমান মান্না  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির সরব নেতারাও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির আন্দোলন এখন হতাশার চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা। আর এই হতাশা এখন সংক্রমিত হয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা স্থায়ী কমিটিতে। স্থায়ী কমিটির নেতারা এখন নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন এবং হতাশায় তারা আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন;

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে যাচ্ছেন ওমরাহ পালন করতেন। তিনি দুদিন আগেই পয়লা মে জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মে দিবসের জনসভায়। আর সেই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সৌদি আরবে চলে গেলেন। দলের মূল চালিকাশক্তি যখন বিদেশে চলে যান তখন দলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং হতাশা তৈরি হয় এটাই স্বাভাবিক। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা স্বীকার করেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন মানসিক ভাবে দলের নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে প্রস্তুত নন। তিনি বারবার নেতাকর্মীদের কাছে বলছেন, আমি থাকতে চাচ্ছি না। আমাকে জোর করে রাখা হচ্ছে। অনীহা সত্ত্বেও বিকল্প কোন মহাসচিব না করার কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনও রাখা হয়েছে। আর তিনি দলে যতটা না সময় দিচ্ছেন তার চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে।

বিএনপির বিভিন্ন নেতা মনে করেন যে, আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং ভুল নেতৃত্ব, তারেক জিয়ার বাড়াবাড়ি ইত্যাদি কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম হতাশ এবং এ কারণেই তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগেও ২৮ অক্টোবর আগ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যেভাবে সরব এবং সক্রিয় দেখা গিয়েছিল এখন তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না এবং এটি বিএনপির মধ্যে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়া আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়া তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে চলে গেছেন। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, তিনি দলের কার্যক্রমে বিরক্ত হতাশ। এ কারণে তিনি তার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তিনি কারাগার থেকে বেরোনোর পর খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। 

নজরুল ইসলাম খান: নজরুল ইসলাম খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই সময় নজরুল ইসলাম খানকেও খুব একটা পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তিনি থাকছেন না। নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বলছেন, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ। যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব ততটুকু চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিএনপির নেতারাই বলছেন, নজরুল ইসলাম খানকে তারা যে অবস্থায় দেখেছেন অতীতে তার ধারেকাছেও এখন তিনি নেই। 

মির্জা আব্বাস: মির্জা আব্বাস বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা এবং ঢাকা মহানগরীর অন্যতম চালিকাশক্তি মনে করা হয় মির্জা আব্বাসকে। কিন্তু মির্জা আব্বাসও এখন নিষ্ক্রিয়। কারাগার থেকে বেরোনোর পর তার কর্মসূচি তিনি সীমিত করেছেন। এখন দলের কার্যক্রমে তাকে উদ্যোগী দেখা যায় না। উদ্যোগ নিয়ে তিনি কোন কিছু করেনও না। দলের যে সমস্ত কর্মসূচি গুলো ঘোষিত হয় সেখানে রুটিন উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক জন সদস্য। কিছু দিন আগ পর্যন্ত তাকে অত্যন্ত সরব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আস্তে আস্তে যেন পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছেন। তাকে কোন আগ বাড়িয়ে কর্মসূচি পালনের জন্য দেখা যাচ্ছে না। কোন বিবৃতি দিতেও তিনি আগ্রহী নন। এক ধরনের হতাশা থেকে তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।

স্থায়ী কমিটির পাঁচ জন সদস্য অনুপস্থিতি। আর পাঁচ জনের অবস্থা এ রকম। কয়েকজন একেবারেই অসুস্থ। এই অবস্থায় বিএনপি এখন স্থায়ী কমিটি শূন্য হয়ে পড়ছে। 

বিএনপি   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলায় বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

আগামী ৮ মে যে ১৫০ উপজেলায় নির্বাচন হবে সেখানে প্রায় ৭০ টিতেই মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তি রয়েছেন। সেই পছন্দের ব্যক্তিদেরকে জেতাতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশনও এদের নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং নির্বাচন কমিশন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ঠেকানোর জন্য করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। 

একাধিক উপজেলার খবর নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে জেতানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। যেমন, তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে নির্বাচনে যারা প্রতিপক্ষ রয়েছে তাদেরকে নানা রকম হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভোটারদের ভীতি দেখানোর জন্য সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সমস্ত প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্র-এমপিদের স্বজন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের উৎসবমুখর আমেজ ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলেও বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নমনীয় এবং সহনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি থাইল্যান্ড সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের বহু মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় স্বজনরা আগে থেকেই রাজনৈতিক দল করে এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন কমিটিতে আছে। তাদেরকে আমরা কীভাবে নির্বাচন করতে বাধা দেব। তার এই বক্তব্যের পর চাপে থাকা মন্ত্রী-এমপিরা এখন যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

তারা মনে করছেন যে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আপাতত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সেহেতু এখন তাদেরকে জিতিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা যেতে পারে। আর এই কারণেই তারা একের পর এক উপজেলাগুলোতে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা এলাকায় নানারকম কৌশল গ্রহণ করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে তাদের পক্ষে আনার জন্য প্রলুদ্ধ করছেন। যা তাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে উপজেলা নির্বাচন এখন কার্যত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। 

তবে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বলছেন, এটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নেতার লড়াই না। উপজেলা নির্বাচন এখন আসলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপির পছন্দের প্রার্থীর সাথে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থীর লড়াইয়ের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে তৃণমূল শক্তিশালী সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবোধ করতে পারছেন। যেখানে তারা শক্তিশালী নন সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।

উপজেলা নির্বাচন   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার বিদেশে চিকিৎসা: পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

এর আগে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে কয়েকজন চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তারা একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করেছিলেন। এবার অবশ্য বিএনপির নেতারা সে পথে হাঁটছে না। বরং তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়াই উত্তম এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুরোধ বা দাবিটি আবার সামনে চলে আসছে। 

তবে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার ভাই বোনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়াই আসল কৌশল। সরকারের ওপর যদি চাপ সৃষ্টি করা যায় তাহলে সরকার শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই চাপের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সঠিক ভাবে জানানো এবং আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার জন্য তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে যদি বিদেশ না নেওয়া যায় তাহলে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। আর এ কারণেই তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটাকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। আর এ ক্ষেত্রে যে কোন শর্তে বেগম জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

শামীম ইস্কান্দার নিজে এবং কয়েকদফা সরকারের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং যে কোনো শর্তে তিনি তার বোনকে বিদেশ নিয়ে যেতে চান চান বলেও আশ্বস্ত করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য যদি সরকারকে অনুমতি দেওয়া হয় তা হলে সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে হবে। এ নিয়ে শামীম ইস্কান্দার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গেও দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। আজ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো এক সময় দেখা করতে যেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

বেগম খালেদা জিয়া এখন আগের অবস্থানে নেই। তিনি যে কোন প্রকারে বিদেশ যেতে চান। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, রাজনীতিতে তার এখন কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি নিজেও মনে করেন যে, তার চিকিত্সাটাই উত্তম। তবে এটি আসলে কোন রাজনৈতিক কৌশল নাকি সত্যি সত্যি বেগম জিয়া অসুস্থ সেটি নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। 

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাতে তার এক থেকে দেড় বছর স্থিতিশীল থাকার কথা। আর বেগম খালেদা জিয়ার যে বয়স এবং তার যে অন্যান্য শারীরিক অবস্থা তাতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো পরিস্থিতি তার নাই। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার একটা বয়স লাগে। অন্যান্য রোগ শোক থেকেও মুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একাধিক রোগে আক্রান্ত। তার কিডনির অবস্থা ভালো না। তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। এ রকম পরিস্থিতিকে একজন রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি রাজনৈতিক বাহানা কি না সেটি নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে শামীম ইস্কান্দার সরকারের কাছে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তাতে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেটার জন্য তারা সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা সৌদি আরবে যেতে চান।

খালেদা জিয়া   এভারকেয়ার হাসপাতাল   বিএনপি   শামীম ইস্কান্দার   ডা. জাহিদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা শনিবার

প্রকাশ: ০৪:৪০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।


আওয়ামী লীগ   মনোনয়ন বোর্ড   সভাপতি   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন