দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত এই দ্বীপ ইজারা (লিজ) দিলে আগামীতে ক্ষমতায় থাকাটা নির্বিঘ্ন হয়; ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে দ্বীপ নিয়ে এমন বিতর্ক নতুন নয়। স্বাধীনতার আগে এবং পরেও বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টির নজির রয়েছে। এর মধ্যে অতীতে এ ধরনের বিতর্কে টেনে আনা হতো ভোলার মনপুরা দ্বীপকে। পরে সে জায়গায় আসে সেন্ট মার্টিন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে নিতে চায় এবং বিএনপি দ্বীপটি ‘বিক্রির মুচলেকা’ দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়—ক্ষমতাসীন দল ও তার জোটসঙ্গীরা কিছুদিন ধরে এমন অভিযোগ করে আসছে। বিষয়টি ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং পর্যন্ত গড়িয়েছে।
গত সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, এটি ঠিক নয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো আলোচনা করেনি।
৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। পর্যটন করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। দ্বীপটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যে অনেক আগে থেকেই হচ্ছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৮০ সালের ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে; যার শিরোনাম ছিল, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কাউকে নৌঘাঁটি করতে দেওয়া হবে না।’ ওই বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট দেশকে সেন্ট মার্টিনে নৌঘাঁটি করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে কয়েকটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল যে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ভোলার মনপুরা দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগের কথা প্রথম শোনেন। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠক ঘিরে চীনপন্থী বাম দলগুলো অপপ্রচার চালায় যে মনপুরা দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হচ্ছে। তার বদলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তখন সেন্ট মার্টিন এতটা পরিচিত ছিল না। পরিচিতি ছিল মনপুরা। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে মনপুরার নাম সবার মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২৩ সালে এসে রাজনীতিতে সেন্ট মার্টিনের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আনেন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ১৪ জুন জাতীয় সংসদে সেন্ট মার্টিন ইস্যুটি তোলেন। মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। বেশ কিছু সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর কৌশলের অংশ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন চায়, কোয়াডে (যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কৌশলগত জোট) বাংলাদেশকে চায়।
ছয় দিন পরে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আরেক জোটসঙ্গী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে, আমেরিকার হঠাৎ এই অতি উৎসাহের হেতু কী? গণতন্ত্র, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ?’
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তার জন্য প্রত্যাশার কথা বারবার তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দেশটির ভিসা দেওয়া হবে না। এর আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন সরকার।
নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশ সরকার, সরকারি দল ও তাদের মিত্র দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে আলোচনায় আনা হয়।
২১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে গণভবনে যে সংবাদ সম্মেলন করেন, তাতেও উঠে আসে সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গ। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ (ইজারা) দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটা তাঁর দ্বারা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়?’
অবশ্য ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশল। এখন এসব বক্তব্য দিয়ে তাঁরা সুবিধা নিতে চান।
বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক বিতর্ক নিয়ে গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরটির ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ে করা প্রশ্ন ও উত্তর প্রকাশ করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়, সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর বিএনপি তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করতে চায়। এ কারণে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হবে; যদিও গত ১৫ বছর তিনি বাংলাদেশের জনগণের মতামতের প্রতিফলন ছাড়াই ক্ষমতায় আছেন। এসব তথ্য সত্য নাকি ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায় থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে? কোনো কারণ ছাড়াই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি শুধু বলব যে এটি ঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি। আমরা কখনোই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা করিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বকে গুরুত্ব দিই। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনসহ গণতন্ত্রের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে আমাদের সম্পর্ককে জোরদারের চেষ্টা করি।’
এ সময়ের সেন্ট মার্টিন
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ–জরিপ দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। জরিপে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় ধর্মযাজক মার্টিনের নামানুসারে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। তবে দ্বীপটিতে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং আইন না মেনে কেয়া বন উজাড় করে হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
২০২০ সালে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কাউসার আহাম্মদ, ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মো. ইউসুফ গাজী ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তাহরিমা জান্নাতের এক গবেষণায় উঠে আসে, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রবাল প্রজাতি ১৪১টি থেকে কমে ৪০টিতে নেমেছে। বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সাড়ে ৪ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে নেমেছে ৩ বর্গকিলোমিটারে।
আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে।
দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকলেও রাজনীতিতে এটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকে মনপুরা বা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিয়ে দেওয়া, ভারতকে সুবিধা দেওয়া—এ রকম অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা এ দেশে পুরোনো রাজনৈতিক কৌশল। অতীতে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই চর্চা বেশি ছিল।
বাংলাদেশ রাজনীতি সেন্ট মার্টিন
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
আজিজ আহমেদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসলে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অনুসরণ করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান বলেও আম আদমি পার্টির এই নেতা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আর এই বক্তব্য নিয়েই বিএনপির মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির নেতারা শুধু ইউটিউবেই এটি রিপোস্ট করেনি, তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং টুইটারেও এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধী প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভারতের সমালোচনা করা এবং ভারত এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে এমন বক্তব্য বিএনপি নেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। যদিও ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিক কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের অন্য একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকারের সমর্থক। বিজেপি গত এক দশকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় ভারতের নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যত্যয় হবে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এর মধ্যে আম আদমি পার্টির বক্তব্য নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকেই নানারকম টীকা-টিপ্পনি কেটেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, এর আগে যখন কংগ্রেসকে হারিয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তখনও বিএনপির মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল যে, কংগ্রেস চলে গেলেই আওয়ামী লীগের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিজেপির সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নির্বাচনের মাঠের বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপি আশায় বুক বেঁধে আছে। মুখে মুখে ভারত বিরোধীতা করলেও ভারতের অনুগত এবং ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি কম চেষ্টা করেনি।
আর এখনও বিএনপি যে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্যকে নিজেদের দলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কিন্তু বিএনপি নেতারা ভুলে গেলেন যে, একজন রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য, আর ক্ষমতায় এসে তার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড- দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেউলিয়া রাজনীতির কারণে বিএনপি সবসময় অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে কেজরিওয়ালের বক্তব্য বিএনপির ইউটিউবে ছাড়ার মধ্য দিয়ে সেই দেউলিয়াত্ব আরেকবার প্রকাশিত হল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
কিছুদিন আগেও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র বলতে অন্ধ থাকত। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে ফোন আসলে বিএনপির নেতারা নাওয়া খাওয়া ভুলে ছুটে যেতেন। এমনকি কোনদিন সকালে মার্কিন দূতাবাসে প্রাতরাশ, রাতে নৈশভোজেও দেখা গেছে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা অবতার হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দেবে, যুক্তরাষ্ট্রই এই সরকারের পতন ঘটাবে এমন একটা স্থির বিশ্বাস ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সেই মোহভঙ্গ ঘটেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনাগ্রহী বিএনপি। এটা যেন অনেকটা আঙুল ফল টকের মতো ঘটনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে তিনি একটি হ্যাটট্রিক করেছেন। টানা তিন তিনবার আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র যিনি আওয়ামী লীগের তিনবার বা তার বেশি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এখন ওবায়দুল কাদেরও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। এবার তিনি আরেক রকম হ্যাটট্রিক করলেন।
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি বক্তব্যকে নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আম আদমি পার্টির জামিনে মুক্তি পাওয়া এই নেতার একটি বক্তব্য বিএনপি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করেছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বক্তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি রাশিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। রাশিয়া নির্বাচনে পুতিন একচ্ছত্রভাবে বিরোধী দল দমন করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন। তিনি পাকিস্তানে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে তার দলের প্রতীক কেড়ে নিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।