আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি হলে পাঁচ মাস বাকি। সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের মেয়াদ আর সর্বোচ্চ দুই মাস। এর পরই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এদিকে আওয়ামী লীগ বলে আসছে, বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এতে কে অংশগ্রহণ করলো বা কে করলো না, এটা নিতান্তই তাদের দলীয় ব্যাপার। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা একাধিকবার বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, বর্তমান জাতীয় সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে এবং সরকার গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে নারাজ। বিএনপি বলছে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। যদিও বিএনপির তৃণমূল থেকে বেশ কিছু নেতা-কর্মী সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তথাপিও কেন্দ্র থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। সেই ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় একাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে- যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
ফলে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন ওঠেছে, এই ঘণীভূত হতে থাকা রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের উপায় কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পরস্পর বিরোধী এ অবস্থান কেবলমাত্র ‘সংলাপ’র মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব হতে পারে এবং এর মাধ্যমেই উদ্ভূত রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করা সম্ভব। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ‘সংলাপ’ শব্দটি আবারও আলোচনায় এসেছে, এ নিয়ে চলছে নানা আলাপ-আলোচনাও। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় নেতারাও ইতিমধ্যে ‘সংলাপ’ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তৃতা করেছেন।
তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও ঘণীভূত করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে আলোচনা বা ‘সংলাপ’র বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। তবে সেই আলোচনার উদ্যোগ কে নেবে, এই প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে উঠেছে?
এদিকে সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করার কথা বলে আসছে বিএনপি। দলটি রাজপথেই ফয়সালার কথা বলছে। তবে গত শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কিছুটা নমনীয় ভূমিকায় দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারকেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা পথ বের করতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্যে- দলটির আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা সংলাপ করতে রাজি আছেন কি না। এরপর আমরা বিবেচনা করব। কারণ, আমাদের রাষ্ট্রপতি একবার ডেকেছিলেন, নির্বাচন কমিশন দুইবার তাঁদের ডেকেছে, তাঁরা আসেননি। তাঁদের মনোভাবটা (অ্যাটিচিউড) কী, সেটা আগে জানান।’
দুই দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এই দুই নেতার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা মনে করছেন, দুই দলই আলোচনার দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে নিতে রাজি নয়। একে অপরের দিকে দায় চাপাতে চাইছে। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর, দেশের রাজনীতিতে ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের জন্যই এক ধরনের চাপ তৈরি করেছে এই ভিসা নীতি। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দলগুলোর চাপ আরও বাড়তে পারে, সেটা দুই দলই বিবেচনায় রেখেছে। ফলে দুই দলেরই মধ্যবর্তী একটা অবস্থানে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও রাজনৈতিকভাবে তাঁরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মানুষকে ক্ষুব্ধ করছে। এমন পরিস্থিতি বিএনপির জন্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এবার তাঁরা এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করতে চান না। সে জন্য রাজপথের আন্দোলন জোরদার করার পক্ষপাতী তারা। তবে আন্দোলনে সংঘাত বা সহিংতা এড়ানো যাবে কি না, এসব বিষয়ও তাঁদের আলোচনায় রয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের বিষয়টিও বিএনপির নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের কারও কারও চিন্তায় রয়েছে।
তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের পদক্ষেপের কারণে সরকার বড় চাপে পড়েছে। ফলে সংকটের সমাধান না হলে সরকারের জন্য বিপদ আরও বাড়াতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে চাপ বাড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করা যায় কি না, সে আলোচনাও বিএনপিতে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি আলোচনা বা সংলাপ চাইলে সেটা হতে পারে। তবে সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করা সম্ভব না-ও হতে পারে, এমন আলোচনাও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমমনা রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। সে সময়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ৩ অক্টোবর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমেই ড. কামাল হোসেন সে সময়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যস্থাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে মময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বিএনপির ‘সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, তার সমাধান সম্ভবপর হয়েছিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও এ ধরনের একটি মধ্যস্থতাকারী ঐক্য আবির্ভাব হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে কে, কারা হচ্ছেন এই মধ্যস্থতাকারী সেটিই এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বড় চমক।
রাজনীতি চমক সঙ্কট সমাধান উদ্যোগ
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।