গণ অধিকার পরিষদ। সমসাময়িক সময়ে দেশের রাজনীতিতে একটি আলোচিত নাম। দলটির সূচনা হয়েছিল সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সমমনা দল হিসেবে। কিন্তু অন্তঃকোন্দল এবং অর্থ লেনদেনের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের মনোমালিন্য, মতানৈক্যের কারণে দলটির দুই নেতা পরস্পর দুই মেরুতে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণ অধিকার পরিষদের দুই শীর্ষ নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। নুরুল হকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত করা এবং সই জাল করার অভিযোগ এনেছেন রেজা কিবরিয়া। অপরদিকে নুরুল হক বলেছেন, তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন রেজা কিবরিয়া।
এদিকে দলটির দুই নেতা রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুরকে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন ওঠেছে, কার অভিযোগ সত্য- কার অভিযোগ মিথ্যা? তবে এ কথা সত্য যে অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে একটি অন্তকোন্দল সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। অতি সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ করেছেন বলেও দাবি করেছেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই খবর ইতিমধ্যেই চাউর হয়েছে, বিশেষ করে সাবেক ভিপি নুরের দুবাইয়ে অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি সম্বলিত এই সংবাদটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ ঘটনার সত্যতা প্রশ্নে গণমাধ্যমকে বরাবরই একথা অস্বীকার করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর।
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘গণ অধিকার পরিষদ’। এই রাজনৈতিক দলের স্লোগান ঘোষণা দেয়া হয়, ‘জনতার অধিকার - আমাদের অঙ্গীকার’। তাদের এ রাজনৈতিক দলের চারটি মূলনীতিও ঘোষণা করা হয়েছিল। এগুলো হলো- গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। নতুন এই দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। সে সময় ছয় মাস মেয়াদে ৮৩ সদস্যের একটি কমিটিও ঘোষণা করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বেড়ে উঠা সংগঠন গণ অধিকার পরিষদ। ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদ। কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকেই জন্ম নেয়া একটি দল গণ অধিকার পরিষদ।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের পক্ষে নুরুল হক নুর বিজয়ী হন। সেখান থেকেই আলোচনায় আসেন সাবেক ভিপি নুর। তখনই নতুন দল গঠন নিয়ে আভাস পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে নিজেদের আরও সংগঠিত করতে একে একে তৈরি করতে থাকে যুব অধিকার পরিষদ, মহিলা অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, পেশাজীবী অধিকার পরিষদ এবং প্রবাসী অধিকার পরিষদ। মূলত এসব পরিষদগুলোর সমন্বিত দলই হচ্ছে গণ অধিকার পরিষদ। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে এই গণ অধিকার পরিষদে কেন এতো হট্টগোল, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ?
রেজা কিবরিয়াকে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরদিন রোববার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে নিজেকে দলের আহ্বায়ক দাবি করে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘সে (নুরুল) জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দেখা করেছে। সে মনে হয় ওদের মতো হতে চায়। মন্ত্রী হবে, কিছু টাকাপয়সা বানাবে। এটাতে সে সন্তুষ্ট।’
এ সময় নুরুল হককে বিশ্বাসঘাতক আখ্যায়িত করেন রেজা কিবরিয়া। তিনি দাবি করেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক বা সভাপতিকে সরাতে ৮১ জনের ভোট লাগে। কিন্তু তাঁকে সরাতে ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন সই করেছেন। বাকিরা সই করেননি। সেই বৈঠকের আগে কয়েকজনের নামে ভুয়া স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। সই জালিয়াতির অভিযোগে নুরুল, রাশেদ খান ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।
রেজা কিবরিয়া আরও দাবি করেন, নুরুল হকের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির দুবাইয়ে বৈঠক হয়েছে। গত ১৮ জুন দলের বৈঠকে নুর এই কথা স্বীকার করেছে।
এরপর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন নুরুল হক ও তাঁর সঙ্গে থাকা নেতারা। গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারও সই জাল করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজনকে গণ অধিকার পরিষদের কমিটিতে জায়গা দিয়েছিলেন। তাঁদের দু–একজনকে দিয়ে তিনি উল্টো বক্তব্য দেওয়াতে পারেন। তবে তাঁরাও পাল্টা প্রস্তুতি রেখেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৮১ জনের সই হলে চলে, সেখানে ৯১ জন সই করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে নুরুল হক বলেন, আপস করলে রেজা কিবরিয়ার সেটা করার সুযোগ আছে। তাঁর বাবা জিয়াউর রহমানের আমলে পররাষ্ট্রসচিব হয়েও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, সুযোগ–সুবিধা নিয়েছেন। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে তাঁর কোনো বৈঠক হয়নি। আর ইনু, মেনন এরা আওয়ামী লীগেরও কেউ নন।
নুরুল হক বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। রেজা কিবরিয়ার বাবার হত্যার বিচার শেষ হয়নি। তিনি এখন গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের নামে মামলা করবেন।
তিনি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে গণ অধিকার পরিষদকে ‘জি এম কাদেরের মতো আদালতে ব্র্যাকেটবন্দী’ করতে চাইছেন। জি এম কাদেরকে যেভাবে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সে রকম সাময়িক হয়রানি করতে পারবেন। তাতে গণ অধিকার পরিষদের কার্যক্রম থামানো যাবে না।
সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন দাবি করে নুরুল হক বলেন, ‘তিনি (রেজা) এবং তাঁর গংরা যাঁরা গোয়েন্দা সংস্থা, মাসুদ করিম-এনায়েত করিম গংরা কিংবা ইনসাফ বেইনসাফ গংরা তাঁকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে, ভিপি নুরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।’
মোসাদ বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে নুরুল হক বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এসব অপপ্রচার করছেন। গণ অধিকার পরিষদ ইসলামপন্থী ও বামপন্থী সবাইকে রাস্তায় নামাতে পেরেছে। ইসলামি মূল্যবোধের মানুষের কাছে গণ অধিকার পরিষদকে বিতর্কিত করতে মোসাদের কথা আনা হচ্ছে।
রেজা কিবরিয়ার কারণে ২৬ বছরের গণফোরাম ভেঙেছে দাবি করে নুরুল হক বলেন, তিনি ২-৩ জন মুরব্বির পরামর্শে রেজা কিবরিয়াকে দলে নিয়েছিলেন। এখন মনে হচ্ছে কেউ কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাজেন্ডা নিয়ে এটি (রেজা কিবরিয়াকে নেওয়ার পরামর্শ) করেছিলেন।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন ধরেই রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। বিভিন্ন সময় তা প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ করেন। তাঁরা নিজ নিজ ফেসবুক পাতায়ও পোস্ট দিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘোষণার পর গত শনিবার গণ অধিকার পরিষদের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তাঁদের আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় এই যে, বিভিন্ন সময়ে এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে যেসব পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছেন, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কে সত্য, আর কে মিথ্যা।
গণ অধিকার পরিষদ রাজনীতি ধোঁয়াশা
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।