গত ১৫ জুলাই (শনিবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়ে ইইউ প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। জামায়াত নেতা মো. তাহের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, সে বিষয়টি আমরা ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি। দেশ বাঁচাতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে।’
সূত্র জানায়, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করে জামায়াত। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রিকার্ডো শেলেরি। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের চারজন নেতা ওই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জামায়াত নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে সরাসরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধীতা করেছেন। অন্যদিকে জামায়াতের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাত গড়ে ওঠার একটি গুঞ্জনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়েছে।
তবে গত প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দলটি নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে কখনো বিএনপি আবার কখনও আওয়ামী লীগের সাথে এক ধরনের বোঝাপড়া করেই বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালতের একটি রায়ের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছিলো। এর পর ২০০২ সালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা বিডিপি নামে নতুন একটি দল সংগঠিত করার চেষ্টা করে জামায়াত। বিডিপি নামের দলটির কার্যক্রম আগে জানা না গেলেও ২০২২ সালের আক্টোবরের দিকে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে দলটি, তখনই নতুন গঠিত দল বিডিপির সাথে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। নিবন্ধিত দল হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বাধীনতা পেলে দলটির এককভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, শুধু নির্বাচনকেন্দ্রীক নয়, সব সময়ই দেশের স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে সক্রিয় ছিল জামায়াত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এর পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার পর থেকে জামায়াত কিছুটা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। কিন্ত চলতি বছরের ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জামায়াত যে সমাবেশ করেছিল, সে সমাবেশে দলটি বেশ ভালো করেই তাদের উপস্থিতির কথা জানান দিয়েছিল।
এসব বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতেই জামায়াতকে নিয়ে ত্রিমুখী সঙ্কটে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এসব সঙ্কটগুলোর বিষয়ে জামায়াতকে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার। সঙ্কটগুলোর মধ্যে :-
প্রথমত, প্রথম সঙ্কট হলো জামায়াতকে যদি সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক চাপ শুরু হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মানবাধিকার প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতকে বাংলাদেশে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে- তাতে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে যদি সভা-সমাবেশ করতে দেয়া না হয়, যারা এ ধরনের সভা-সমাবেশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদেরকে কোনো ভিসা দেওয়া হবে না। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে এখন তারা জামায়াতকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, জামায়াতকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার ফলে, যারা উদার প্রকৃতির, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে থাকেন, তারা আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তটাকে সহজভাবে নেননি। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সমঝোতা করেছে, জামায়াতের সাথে আপোষ করেছে। এতে আওয়ামী লীগের যে ভোট ব্যাংক, যারা স্বাধীনতার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে- এ ঘটনা তাদের কাছে একটা ভুল বার্তা দিচ্ছে।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মহলে যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক- এটা চায়, তারাও জামায়াতের ব্যাপারে নেতিবাচক। বিশেষ করে ভারত, ভারত মনে করে- বাংলাদেশে উগ্র, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকানো দরকার। এজন্য জামায়াতকে প্রতিহত করা দরকার। বিশেষ করে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার পর- ভারত এখন সরাসরি মনে করে, জামায়াত গণতন্ত্রের বড় শত্রু এবং জামায়াত সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদকে লালন করে।
সুতরাং জামায়াত সরকারের জন্য বড় একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো মহল মনে করে, জামায়াতকে মাঠে নামানোর জন্য সরকারের একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে। তারা মনে করে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে- তাহলে জামায়াত, হেফাজত, খেলাফত মজলিস- এ সমস্ত দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলসহ আরও কিছু নির্বাচনমুখী দলকে মাঠে নামিয়ে একটি নির্বাচনী আবহ তৈরি করা সম্ভব হবে। সেই রকম একটি আবহ তৈরি করতে পারলে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করে, তাহলেও সে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। তারা কখনোই বলেনি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের কাছে কোনো ইস্যু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন, ‘জনগণের মতামতের প্রতিফলন যেন নির্বাচনে ঘটে।’ সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য ছোট একটা পথ খোলা আছে। সেই খোলা পথটি হচ্ছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাদ দিয়ে অনেকগুলো রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সেটা অর্জন করা সম্ভব। তাই যদি হয়, সেজন্য জামায়াতকে মাঠে নামানো হয়েছে।
আবার জামায়াতকে বিশ্বাস করা আর আত্মহত্যা করা একই ব্যাপার বলে মনে করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, মানুষ সাপকে বিশ্বাস করতে পারে, কিন্তু জামায়াতকে নয়। সরকারের মধ্যে কেউ কেউ সন্দেহ করছে, জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সু0যোগ নিয়ে বিএনপির বি-টিম হিসেবে মাঠে নামতে পারে। কারণ বিএনপি সন্ত্রাস, সহিংসতা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য যে অঙ্গ-সংগঠনগুলো রয়েছে, তাদের মাধ্যমে বিএনপি সন্ত্রাস, সহিংসতা চালাতে পারে। জামায়াতের অঙ্গ-সংগঠন যেগুলো রয়েছে, এর সবই সন্ত্রাসী সংগঠন এবং অতীত ইতিহাস তাই বলে। এছাড়াও হরকাতুল জিহাদ, লস্কর-ই-তাইয়েবার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথেও জামায়াতের সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই সামনের দিনগুলোতে যখন বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইবে, তখন জামায়াত তাদের সাথে যুক্ত হবে এবং সন্ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে।
কাজেই জামায়াতকে আসলে কি করা উচিৎ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ভূমিকা আসলে কি হবে?- এসব নিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে।
জামায়াত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।