আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিনটি ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই নিয়ে গত ক’দিন থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দুই দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম তিন সংগঠন এবং বিএনপির এই সমাবেশ রাজধানীতে একটি সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপির আবেদন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি এবং আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের আবেদন বায়তুল মোকাররম গেটে সমাবেশের অনুমতি। কাছাকাছি এই দুই স্থানে প্রধান এই দুই দলের সমাবেশের কারণে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করেছেন অনেকে।
এছাড়াও নয়াপল্টন এবং বায়তুল মোকারমের মতো স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলে- এসব অঞ্চলে আশেপাশের এলাকার মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে, সৃষ্টি হতে পারে অসহনীয় যানজট। এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে শেষ পর্যন্ত প্রধান দুই দলের কাউকেই তাদের প্রত্যাশিত স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পরে দুটি দলই মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নির্ধারণ করেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বদলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছের গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের পরামর্শ দেয় পুলিশ। বিএনপি সেই অনুমতির প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার গোলাপবাগ মাঠে এই সমাবেশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে শুক্রবার ছুটির দিনে নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় দলটি। তারা সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেল পৌনে চারটার দিকে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা বিএনপিকে গোলাপবাগে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছি।’
তবে পুলিশের পরামর্শে গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করবে না বলে জানায় বিএনপি। তারা নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায়। প্রয়োজনে বিএনপি শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সমাবেশ করতে রাজি আছে। মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার (২৬ জুলাই) রাত সোয়া ৮ দিকে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির মিটিং চলছে। মিটিং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’ মিটিংয়ের পর বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শুক্রবার সমাবেশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) শান্তি সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। সে জন্য তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের অনুমিত দেয়নি ডিএমপি। এজন্য আমরা বিকল্প হিসেবে জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।’
বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে ধানমন্ডি ৩/এ বৈঠক থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে সেই স্থান পরিদর্শনে যায় প্রতিনিধি দল। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল জানান, তারা মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছেন। পছন্দ হলে গণমাধ্যমকে জানাবেন। পরে তিনি জানান, আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে শুক্রবার এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচন আসলে নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস, তাণ্ডব, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব মোকাবিলা করতে হবে। আবার সভা-সমাবেশ করা যেহেতু রাজনৈতিক দলের অধিকার, তাই তাদের অনুমতি দিতে হবে। অনুমতি দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরু দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমনটা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নয়া পল্টনের পরিবর্তে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছে ডিএমপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠ বা মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করার কথা বলেছে ডিএমপি। আর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। তাদের অন্য কোনো দিন সমাবেশ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ডিএমপির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। দলটি পুরানা পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি যদি সমাবেশ নয়া পল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সরিয়ে নেয় সেক্ষেত্রে যুবলীগও সমাবেশ সরিয়ে নেবে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই নয়া পল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমনকি যুবলীগকেও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকেই ভিন্ন ভেন্যুর জন্য বলা হয়েছে। ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সমাবেশের এসব বিষয় নিয়ে দিনভর নানা বৈঠক করা হচ্ছে। দফায় দফায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যা যা করা দরকার তাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা ও জনভোগান্তি এড়াতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপির একাধিক গোয়েন্দা ও ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মূল নজর থাকবে তিনটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে। দল তিনটি হলো- বিএনপি, যুবলীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য কাল একযোগে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন থাকবেন। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। প্রস্তুত রাখা হবে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় ব্যবহৃত ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, র্যাকার গাড়ি। চেক পোস্টগুলোয় সক্রিয় তল্লাশি ও নজরদারি থাকবে। যানজট তৈরি হবেই, তা ধরে নিয়ে বিকল্প রুটগুলো সচল রাখার আগাম প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের ঠিক পাঁচ মাস আগে রাজধানীতে একাধিক দল একযোগে সমাবেশ কর্মসূচি ডাকায় নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে ডিএমপি। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল থাকবে। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কারণে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা ছাড়াও র্যাব সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বাংলা ইনসাইডারকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বলেছেন, মার্কিন ভিসা নীতি কতটা কার্যকর- তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি কম্বোডিয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে। কম্বোডিয়ার নির্বাচনের দিন দু’একের মাথায় দেশটির নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে বসলেন। সেই অুনমান বা অনুসিদ্ধান্ত ধরে আমরা যদি ২৭ জুলাই, পরস্পর বিরোদী দুই দলেরর যে, সমাবেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে- তা অহিংস থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করা যায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলোর প্রত্যাশা, যারাই নির্বাচনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ভিসা নীতির আওতায় পড়ে যেতে হবে। সেজন্য এই ভিসা নীতি সকল পক্ষের জন্য সহিংসতা ঠেকাতে একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। আমার অনুমান শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক সমাবেশ- তার পরিণতি পাবে।
দুই দল সমাবেশ শক্তি পরীক্ষা আওয়ামী লীগ বিএনপি শুক্রবার
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।