অবশেষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বলয় থেকে বেরিয়ে গেল বিএনপি। দলের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে জ্বালাও-পোড়াও, আক্রমনাত্মক কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সমাবেশগুলোতে স্লোগানও দিয়েছেন। সমাবেশ, পদযাত্রা ইত্যাদি কর্মসূচিগুলোকে বিএনপির কর্মীরা পানসে কর্মসূচি বলে অভিহিত করতেন। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি কর্মীরা হরতালের পক্ষে স্লোগান দিতেন, অবরোধের পক্ষে শ্লোগান দিতেন। আর তাই আজকে যখন ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সহিংসতার ঘটনা ঘটলো, তখন বিএনপির কর্মীরা উল্লসিত, উজ্জীবিত, তারা এটাই চাচ্ছিলেন। বিএনপির একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন যে, সমাবেশ বা পদযাত্রার মতো কর্মসূচি করে আর যাই হোক, সরকারকে চাপে ফেলানো যাবে না। এ ধরনের অহিংস কর্মসূচি কোন উপকারে দেবে না। বরং এর ফলে সরকার তার অবস্থানে অটল থাকবে এবং আরেকটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে। বিএনপির কর্মীরা আজ উল্লসিত। তারা আজ সকাল থেকেই সহিংস অবস্থানে ছিলেন।
বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাদেরকে দেখা গেছে, তারা আগবাড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝগড়া করছেন। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতারা কোন উস্কানি ছাড়াই সহিংসতায় জড়িয়েছেন। আগামী কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি একই পথ অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা বলছেন যে, এ রকম কর্মসূচি তারা চান। সরকারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মসূচির কোন বিকল্প নেই বলেও বিএনপির কর্মীরা মনে করেন। বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় তারা মনে করেন যে, হরতাল, ঘেরাও, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমেই দাবি আদায় সম্ভব। পদযাত্রা, তারণ্যের সমাবেশ কিংবা সমাবেশের মাধ্যমে দাবি আদায় সম্ভব নয়। ফলে বিএনপির কর্মীরা অনেকদিন পর উজ্জীবিত হয়েছে। তবে বিএনপির কর্মীদের এই উৎসাহ, উদ্দীপনায় জল ঢালছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, সিনিয়র নেতারা। যারা বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেছেন, তারা এই ঘটনায় মোটেও খুশি নন। বরং তারা মনে করছেন, এটি বিএনপির জন্য একাধিক কারণে বিপর্যয় আনবে।
প্রথমত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ বিভিন্ন নেতা মনে করেন, এই পরিস্থিতিটি কাম্য ছিল না। বরং এটির ফলে প্রকারান্তে সরকারই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেল। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলছেন, আমরা এতোদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর সহানুভূতি চাচ্ছিলাম। ১৪ জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছিল। আর এটির একটি মাত্র শর্ত ছিল, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা। ওই নেতা বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল যখন বিএনপির সঙ্গে বসেছে, তখন তাদের দাবি ছিল একটাই যে, কোনো রকম সন্ত্রাস বা সহিংস কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে না। এর ফলে আন্তর্জাতিক যে চাপ- সরকারের উপর ছিল, সেই চাপটি সরে যাবে বলে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দ্বিতীয়ত, এই ধরনের কর্মসূচি বিএনপির পুরনো ইমেজ আবার ফিরিয়ে আনবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। ২০১৩ এবং ১৪’তে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস এবং সহিংসতার কর্মসূচি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আবার এ ধরনের কর্মসূচির ফলে দল সমালোচনার মুখে পড়বে।
তৃতীয়ত, অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে সরকার বিএনপি নেতাদের উপর ধরপাকড় করার সুযোগ পাবে। এমনিতেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা, এই সমস্ত মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা এবং আজকের ঘটনার সূত্র ধরে বিএনপির উপর নতুন করে মামলা এবং গ্রেপ্তারের সুযোগ পাবে সরকার।
চতুর্থত, আওয়ামী লীগের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি বাড়বে বলেও মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতারা। ফলে আজকের এই কর্মসূচি নিয়ে একদিকে যেমন বিএনপির মধ্যে উল্লাস, অন্যদিকে বিএনপির মধ্যে হতাশা।
বিএনপি কর্মী উল্লসিত নেতা হতাশ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি রাজনীতির খবর মির্জা আব্বাস
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি আওয়ামী লীগ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুশীল সমাজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এনবিআর কাস্টমস জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার দরকার নেই। সরকারেরও দরকার নেই। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিয়েছে, আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। সেদিনও দেখলাম পল্টন ময়দান থেকে একে একে দৌড়াতে দৌড়াতে অলিগলি কোথায় দিয়ে যে পালিয়েছে, কেউ চিন্তাও করেনি।
সোমবার (১৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। যদি তারা আবারও জ্বালাও-পোড়াও করে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে পালিয়ে যাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। ২০০৭ সালে আর রাজনীতি করব না এই মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদের মূল নেতা পালিয়ে আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৮ অক্টোবরও বক্তব্য দিয়েছিল আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। শেষ পর্যন্ত দেখলাম দৌড়াতে দৌড়াতে তারা পালিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে এসে কেউ আবারও বিএনপিকে মদত দেবে সে পরিস্থিতি এখন বিশ্বে নেই। যারা দাপট দেখাতো তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত হয়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাই ইসরায়েল শুনে না।
এসময় ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক গোলাপ, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের বিএনপি
মন্তব্য করুন
জামায়াতকে নিয়ে নতুন বিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি। স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির ভেতরে যেমন শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব অন্তঃকলহ তেমনই বিএনপি যাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রতিরোধের আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতদ্বৈততা। বিএনপির নেতৃত্বের একটি বড় অংশ জামায়াতকে নিয়ে আবার প্রকাশ্য আন্দোলনের পক্ষে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সহ স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য জোটের ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
আগামীকাল দুদিনের সফরে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর এটি প্রথম সফর। নানা কারণেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে যেরকম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ত, এখন সে রকম পরিস্থিতি নেই। ডোনাল্ড লু এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলাপ আলোচনা আছে। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এর কেউই এই সফরকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না।
আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে বিএনপিকে আবারও পালাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার দরকার নেই। সরকারেরও দরকার নেই। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিয়েছে, আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। সেদিনও দেখলাম পল্টন ময়দান থেকে একে একে দৌড়াতে দৌড়াতে অলিগলি কোথায় দিয়ে যে পালিয়েছে, কেউ চিন্তাও করেনি।