কৌশলের রাজনীতিতে বারবার মার খাচ্ছে বিএনপি। দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি যখনই গুছিয়ে উঠছে এবং নতুন করে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করছে, তখনই কৌশলের খেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে হেরে যাচ্ছে। এই কৌশলের খেলায় পরাজিত হয়েই দলটি বারবার হোঁচট খাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ২৯শে জুলাই সর্বশেষ কৌশলের খেলায় বিএনপি হেরে গেল। বিএনপি এখন যতই চিৎকার করে বলুক না কেন, এটি সরকারের কারসাজি, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি আবার জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করেছে। বাস পুড়ানোসহ বিভিন্ন তাণ্ডবের দায় বিএনপি এড়াতে পারছে না, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেও এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বিএনপি প্রকাশ্যে যাই বলুক না কেন, গোপনে এবং দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় তারা আত্মসমালোচনা করছেন। বিএনপি গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের কাছে একের পর এক কৌশলের খেলায় পরাজিত হয়েছে। দেখে নেয়া যাক কৌশলের খেলায় বিএনপি পাঁচ সেরা পরাজয়ের ঘটনাবলী।
১. চায়ের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান: ২০১৩ সাল। বিএনপি টানা আন্দোলন করছে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। বেগম খালেদা জিয়া বলছেন যে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কিছুতেই তিনি নির্বাচনে যাবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। এই সরকারে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ যে মন্ত্রণালয় তারা চায়, সে মন্ত্রণালয়ই দেওয়া হবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন এবং আন্দোলন রেখে গণভবনে চায়ের দাওয়াত দেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সে চায়ের দাওয়াতের জবাবে অরাজনৈতিকসুলভ কুৎসিত ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিরুপ ধারণা তৈরি হয়।
২. কোকোর মৃত্যুর পর সহানুভূতি: বেগম খালেদা জিয়া ২০১৪ সালে নির্বাচনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আবার লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনে তিনি বিজয়ী না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময়ে এক অনাকাঙ্খিত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। মালেশিয়ায় অবস্থারত বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যায়। তার মৃত্যুর সময় সারাদেশ অবরুদ্ধ ছিল। বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচির কারণে। এরমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী সমস্ত প্রোটোকল ভেঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি জানানোর জন্য চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে যান। কিন্তু ওই সময় বিএনপির নেতারা নূন্যতম সৌজন্যতা দেখাননি। বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির দড়জাও খোলা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর জন্য। এটি রাজনীতির মাঠে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক একটি ধারণা তৈরি হয় জনমনে।
৩. ২০১৮-এর নির্বাচন: ২০১৮-এর নির্বাচনে আবার কৌশলের খেলায় বিএনপি হেরে যায় আওয়ামী লীগের কাছে। ওই সময় বিএনপি অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হবার পর ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসার আহবান জানান। এই সময় এই প্রস্তাব লুফে নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সবাইকে গণভবনে ডাকেন। এই সময় সংলাপ প্রত্যাখ্যান করার কোনো সুযোগ ছিল না বিএনপি নেতাদের। কারণ তারা নিজেরাই এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নিজেদের জালে ফেঁসে যান নিজেরাই এবং এই কৌশলের খেলায় পরাজিত হয়ে বিএনপি নির্বাচনে যায় এবং নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়।
৪. বেগম জিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি: ২০২০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। এ সময় বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ব্যাপক আন্দোলন করবে, সারাদেশ অচল করে দিবে-ইত্যাদি ঘোষণা দেয়। বেগম খালেদা জিয়াকে করাগারে রাখলে সারা দেশে আগুন জ্বলবে- এমন কথাও বিএনপির নেতারা উচ্চারণ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতে বা আন্দোলনে- কোনটাতেই সফল হয়নি বিএনপি। অবশেষে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই এবং বোন সরকারের কাছে রীতিমতো করুণা ভিক্ষা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই করুণা ভিক্ষায় সারা দিয়ে তাকে ফিরোজায় থাকার অনুমতি দেন। এতে সরকার এবং আওয়ামী লীগ কৌশলের খেলায় বিএনপির থেকে অনেক এগিয়ে যায়।
৫. সংসদ থেকে পদত্যাগ: বিএনপির নেতারা মনে করেছিল যে, সংসদ থেকে বিএনপির ছয় জন সদস্য পদত্যাগ করলে একটি জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি হবে, সরকার টালবাহানা করবে, নির্বাচন করবে না, পদত্যাগপত্র গ্রহণে অসম্মতি জানাবে। ফলে তাদের গুরত্ব বাড়বে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। তাদের পদত্যাগ মুহূর্তের মধ্যেই গৃহীত হলো এবং উপনির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ হয়ে গেল বিএনপি শূণ্য। বিএনপির নেতারাই এখন স্বীকার করছেন, যদি সংসদে বিএনপির ছয় জন সদস্য থাকতো, তাহলে আনেক জরুরী কথাই তারা বলতে পারতো। কিন্তু এখানেও কৌশলের খেলায় বিএনপি হেরে গেল।
এভাবে বারবার কৌশলের খেলায় হেরে যেয়েই বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না, বরং বিপর্যস্ত একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠিত হয়। ইতোমধ্যে এসব কমিটি ঘোষণার চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আর তাঁতী লীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯ সালেই। বেশির ভাগ সংগঠনের তৃণমূলও অগোছালো। এসব সংগঠনের বেশির ভাগেরই সুপার ইউনিট খ্যাত ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) শাখার কমিটিও এলোমেলো। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের দাবি দায়িত্ব নেয়ার পর বেশির ভাগ জেলা, মহানগরীর সম্মেলন তারা করেছেন। করোনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে পারেননি। চলতি বছরেই তৃণমূল পর্যায় থেকে সব ইউনিটের সম্মেলন শেষ করার কথা বলছেন নেতারা।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫.(২) এর ক ধারা মতে, “বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বলিয়া গণ্য হইবে। তবে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের স্ব-স্ব সংগঠনের গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হইবে।” মৎস্যজীবী লীগও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি পেয়েছে।
তাঁতী লীগ: ২০১৭ সালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় তাঁতী লীগ। এ কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত আলী সভাপতি ও খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন। তাঁতী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রতিবেদককে জানান, ‘আমাদের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৭৮ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২-৪ টি ছাড়া বাকি সবগুলোর কমিটি দিয়েছি। তাঁতীদের উন্নয়নে কী করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে যোগাযোগ করতে বলেন।’
বাংলাদেশ কৃষক লীগ: ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় কৃষক লীগের সপ্তম সম্মেলন। এতে কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনটির কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ বলেন, নেত্রী যখন চাইবেন তখনি সম্মেলন হবে। যেসব ইউনিটের কমিটি গঠন বাদ আছে আমরা সেগুলোর সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ: ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন তিন বছরের জন্য সভাপতি হন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক হন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। যুবলীগের সুপার ইউনিটখ্যাত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ: ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি এবং আফজালুর রহমান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্মল রঞ্জন গুহের মৃত্যুর পর সভাপতি হন গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মেয়াদও শেষ হয়েছে। তবে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তৃণমূলের অনেক ইউনিট। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাচ্চু জানান, ‘৭৯ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১২-১৪ টির সম্মেলন হয় নি। আমরা সেগুলোর সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মৎস্যজীবী লীগ: ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর মৎস্যজীবী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোহাম্মদ সাইদুর রহমান সভাপতি, মোহাম্মদ আজগর নস্কর সাধারণ সম্পাদক হন। মৎস্যজীবী লীগ সারাদেশে যতগুলো কমিটি করেছে তার বেশিরভাগই বিতর্কিত। তবে সব ছাপিয়ে যায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে। নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন। ৫০ টির মতো সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করেছি। অধিকাংশ কমিটি দিয়েছি। অল্পকিছু বাকি আছে।’
সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা। সেটা কেন্দ্র হোক আর জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে হোক। আওয়ামী লীগেরও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ করার কথা বলা হয়েছে। একেবারে তৃণমূল পর্যায় বিশেষ করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন সম্মেলন করে এরপর পর্যায়ক্রমে পৌর, উপজেলা, জেলা, মহানগর সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করা হবে।"
মন্তব্য করুন
দলীয়
সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৪৫ নেতাকে শোকজ
করে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত
চিঠিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে
তাদের শোকজের জবাব দিতে বলা
হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দেওয়া চিঠির বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদেরকে শোকজ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০০ শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে, বহিষ্কৃত অনেক নেতা নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এই প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই কারণে এখন পর্যন্ত কতজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বিএনপি ৮২ জন নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করে। দ্বিতীয় ধাপে ৬৬ জনকে বহিষ্কার করে। আর তৃতীয় ধাপে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে কতজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যাটি পাওয়া যায়নি।
গত ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনে বহিষ্কৃতদের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান এবং তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের ভোটে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে এরইমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর ৪৫ জনকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শোকজ নোটিশপ্রাপ্ত নেতার মধ্যে ১৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। বাকি নেতারা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠিত হয়। ইতোমধ্যে এসব কমিটি ঘোষণার চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আর তাঁতী লীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯ সালেই। বেশির ভাগ সংগঠনের তৃণমূলও অগোছালো। এসব সংগঠনের বেশির ভাগেরই সুপার ইউনিট খ্যাত ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) শাখার কমিটিও এলোমেলো। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের দাবি দায়িত্ব নেয়ার পর বেশির ভাগ জেলা, মহানগরীর সম্মেলন তারা করেছেন। করোনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে পারেননি। চলতি বছরেই তৃণমূল পর্যায় থেকে সব ইউনিটের সম্মেলন শেষ করার কথা বলছেন নেতারা।