এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ২৮ ও ২৯ তারিখে টানা কর্মসূচি দেয়ার পর দলটি একদিন বিরতি নেয়। গতকাল সমাবেশ করেছে, তবে নতুন কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। দলের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, আজ তারা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসবেন এবং নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। ২৯ জুলাই কর্মসূচির সহিংসতার কারণে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে দলটি। আর এজন্য দলটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে বিএনপি সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল খুঁজছে দলটি। সেই পথের দিশা পাওয়ার জন্যই বিএনপির নেতারা বৈঠক তরছেন। কিন্তু বিএনপি যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ঘোষণা দিচ্ছে। তখণ বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই তাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছেন। অনেকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আর এটা নিয়ে দলের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস দানা বেধে উঠছে, দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকাতেই তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণােএবং গণসংযোগ শুরু হয়ে গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেন জয়ী হন সেজন্য তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ওই নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন। বাদ নেই ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনিও পঞ্চগড় নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করছেন।
সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু তার স্ত্রী ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। সিরাজগঞ্জ শহরে তার পক্ষে বিভিন্ন রকম প্রচারণা এখন কোন গোপন বিষয় নয়। বগুড়ায় সব বিএনপি প্রার্থী এখন নির্বাচনমুখী এবং নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা, শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত পোস্টার ইত্যাদি বগুড়ার প্রায় সব নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান হয়েছে।
রাজশাহীতে বিএনপির হেভিওয়াট নেতা মিজানুর রহমান মিনুর পক্ষে বিভিন্নরকম প্রচারণা চলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে ভোট দেয়ার জন্য কর্মীরা বিভিন্নরকম কলা-কৌশল অবলম্বন করছেন। কমিটি গঠন করা হচ্ছে ওয়ার্ড পর্যায়ে। রাজশাহীতে এরকম আরও দুইজন নেতার সন্ধান পাওয়া গেছে যারা আগামীতে সংসদ নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন এবং কমিটি গঠন করছেন।
চট্টগ্রামে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা সেখানে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেছেন। বিএনপি না করলেও কর্নেল অলি আহমেদের এলডিডিপি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছেন। এলডিডিপির নেতা কর্নেল অলি আহমেদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কারা কারা কাজ করবে সেটি চূড়ান্ত করছেন। এছড়াও চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা ডা. শাহাদাত তার নির্বাচনী এলাকাকে গোছানোর কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শাহাদাতের পক্ষে প্রতিদিনই পাড়া মহল্লায় নানা রকমের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সিলেটের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করেননি আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু সিটি নির্বাচন না করলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন তিনি। এ লক্ষ্যে তার কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় ঘরোয়া বৈঠকের কাজ করছে। পিছিয়ে নেই নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রীও। তার পক্ষেও বিভিন্নরকম পোস্টার দেখা যাচ্ছে তার নির্বাচনী এলাকায়।
এভাবেই আস্তে আস্তে বিএনপির নেতারা নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের প্রচারণা এবং তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, এটি স্বাভাবিক এবং রুটিন কাজ। বিএনপি সবসময়ই বলছে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়। বরং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবী আদায় করেই তারা নির্বাচন করবে। আর তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই মন্তব্য করছেন বিএনপির কোন কোন নেতা।