বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে নাটক এখন জমজমাট। এ নিয়ে কথার যুদ্ধ চলছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে যে আদর অ্যাপায়ন করা হয়েছে সেটা মানবিক কারণে। এটার সাথে কোনো রাজনীতি নেই। অন্যদিকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে, খাইয়ে দাইয়ে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াটা অরুচিকর, অনভিপ্রেত। তার সাথে সুর মিলিয়েছেন বিএনপির অন্যান্য নেতারাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপির এ রকম যে তর্ক-বিতর্ক এর মধ্যেই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ডিবির অফিস থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর তার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ অনেক নেতা। অনেকে ফোন করে তাকে সহানুভূতি জানান। অনেকে তাকে নিয়ে সরকার যে নাটক করেছে সেই নাটক এর নিন্দা জানান। কিন্তু রুহুল কবির রিজভী অন্য পথে হাটলেন। তিনি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ফোন করেননি, তার সাথে দেখাও করেননি। দুই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একটু অবাক হলেন।
রুহুল কবির রিজভী বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয় নেতা। বিএনপির মূত্রপাত্রও বটে। তিনি তার কোনো খোঁজ-খবর নিলেন না এটি গয়েশ্বরকে ব্যথিত করেছে। আর এ কারণেই গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রুহুল কবিরকে টেলিফোন করেন। টেলিফোন করে তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। তখন রুহুল কবির রিজভী বলেন, দাদা আপনার খাওয়ার দৃশ্য দেখলাম। যেভাবে আপনি খাইলেন তাতে মনে হয় যে, সামনে যদি বাংলাদেশ পাইতেন তাহলে পুরো বাংলাদেশই খাইয়ে ফেলতেন। এই খাওয়ার দরকার কি ছিল?
রুহুল কবির রিজভীর এই কথায় কিছুটা বিস্মিত হন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তাকে বলেন, আপনি তো আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন। রিজভী বলেন, না, আমি আওয়ামী লীগের ভাষায় না, আমি একজন রাজনীতিবিদের ভাষায় কথা বলছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমিও নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে আমিও দুপুরে খাইনি। নির্বাচন কমিশন আমাকে চা পানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু আমি চা পান না করেই চলে এসেছি। সেটা সম্ভব হয়েছে। আপনাকে যখন মেরে পিটিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হল সেখানেই আপনার প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। কিন্তু আপনি যেভাবে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনার সাথে তাদের পুরনো হৃদ্যতা রয়েছে। এইগুলো কর্মীরা ভালো ভাবে নেয় না। যখন কর্মীরা রাস্তায় ক্ষূধার্ত অবস্থায় পালাচ্ছে, মার খাচ্ছে তখন ডিবি অফিসে আপনার খাওয়াটা সঠিক হয়নি। রিজভী এটিও বলেছেন, আমি খুশি হতাম যদি দেখতাম আমার নেতা সেখানে খাননি, খাবার প্রত্যাখান করেছে। কিন্তু আপনি যেভাবে খেয়েছেন তাতে মনে হয় না যে, আপনি এই সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। আপনি কি হারুনকে চেনেন না। হারুন কে আপনি জানেন না। তাহলে সেখানে কিভাবে আপনি এত খাতির যন্ত্রে আপ্লুত হলেন।
উল্লেখ্য, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এরপর পুরো ঘটনা এবং পরিস্থিতি তাকে ব্যাখ্যা করেন। রিজভীর বক্তব্য হল যখনই আপনি দেখলেন ভিডিও করা হচ্ছে তখনই তো আপনার খাবার টেবিল থেকে উঠে যাওয়া উচিত ছিল। তখনিই আপনার বুঝার উচিত ছিল এটা একটা ট্র্যাপ। আপনি যদি ট্র্যাপ না বুঝেন, আপনি যদি খাওয়ার লোভ সামলাতে না পারেন তাহলে আপনি কিভাবে নেতা। আপনার নেতৃত্বে আমরা কিভাবে এই সরকারের পতন ঘটাব।
উল্লেখ্য যে, এই কথোপকথনের সময় রিজভীর প্রান্ত থেকে স্পিকার অন করা ছিল। অন্তত চারজন কর্মী সেখানে রিজভীর বক্তব্য শুনেন। রিজভীর বক্তব্য শুনার পর তারা হাততালি দিয়েছেন।