২০০৪ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ উত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং এই উত্থান ঠেকানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। সে সময় মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। একই সাথে বাংলাদেশে জামায়াতের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে এটিও বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। আর এই পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ক্ষেত্রে যে কয়জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছিল অন্যতম। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত এই ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং তার মৃত্যুর পর বিএনপি এখন তার স্তুতি গাইছে। এটি নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
২০০৫ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলেও উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনা, সরাদেশে একযোগে বোমা হামলার কথা উল্লেখ করে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে বলে উত্থাপন হয় এবং ওই প্রতিবেদনেও জামায়াতের তৎকালীন নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর উস্কানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য জঙ্গিবাদকে মদদ দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোনো প্রতিবাদ করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন সকাল-বিকাল মার্কিন দূতাবাসে বৈঠক করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের স্মরণ সভায় বলেছেন, বিএনপি এখন তাদের চোখের মনি। বঙ্গোপসাগরের জন্য বাংলাদেশে একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠন করতে চায় পশ্চিমারা। আর সে কারণেই তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন নিয়ে এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল বলছেন, বিএনপির সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর সখ্যতা হয়েছে বটে, কিন্তু এক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর একটি বড় শর্তের জায়গা রয়েছে। তারা সব সময় বিএনপিকে বলেছে যে, বিএনপি যেন কোনোভাবেই মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে সমর্থন না করে। বিএনপির পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে তাদেরকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, বিএনপি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিবে না। আর এর পর থেকেই বিএনপি আস্তে আস্তে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে এবং ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় করে। প্রকাশ্যে জামায়াতের সাথে কোনো কর্মসূচিও ঘোষণা করছে না।
কিন্তু গত ১৪ আগস্ট দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক আর গোপন থাকেনি। বরং বিএনপির নেতারা যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জন্য রীতিমতো আর্তনাদ করেছেন। শুধু আর্তনাদ নয়, বরং দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে তারেক জিয়া এবং বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রমাণ করেছে যে, তারা আসলে এখনও জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসেনি। এটি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে নতুন প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছে।
সাঈদী সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মদদদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন