এ মুহূর্তে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা নেই। মোটামুটি একটি এতিম সংগঠনে পরিণত হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি। বিএনপির প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক, তিনি একাধিক মামলায় দণ্ডিত। তিনি বিএনপির নেতা থাকতে পারেন কি না- তা নিয়ে কূটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক মহলে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির জেষ্ঠ্যতম নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। সেখানে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার নাম করে গোপন সলাপরামর্শের জন্য গেছেন। এতে কর্মীরা আশাহত, ক্ষুব্ধ। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন নেতা মির্জা আব্বাস সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু এখন সিঙ্গাপুরে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে অবস্থান করছেন, তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি এই অনুমতিতে সাড়া না দিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন।
এই যখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অবস্থান, তখন ছিন্নভিন্ন কর্মীরা দিকনির্দেশনাহীন। দলের নেতাকর্মীরা কি করবেন? তাদের কর্মসূচি কি? এক দফা আন্দোলন কিভাবে বাস্তবায়িত হবে?- এ সম্পর্কেও তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। হতাশায় নিমজ্জিত বিএনপি’র এরকম একটি সময়ে বিএনপির একমাত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রুহুল কবির রিজভী বিএনপির কোনো নীতিনির্ধারক নন, তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যও নন। কিন্তু বিএনপির সব সঙ্কটেই তিনি দলকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন, দলের কর্মীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেন। এ কারণেই তৃণমূল এবং কর্মীদের কাছে প্রিয়ভাজন রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু কর্মীদের কাছে প্রিয়ভাজন হলে কি হবে, দলের মূল নেতাদের কাছে তিনি অপ্রিয় ব্যক্তি। রুহুল কবির রিজভীকে অপছন্দের তালিকায় রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম জিয়া এখন পর্যন্ত সাতবার বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফিরোজায়। ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সময় দলের মহাসচিব এবং অন্যান্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে ফিরোজায় ডেকে নেন, তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। কিন্তু একটিবারের জন্যও তিনি রুহুল কবির রিজভীকে ডাকেননি। এছাড়াও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়াও রুহুল কবির রিজভীকে খুব একটা পছন্দ করেন না। বরং বিভিন্ন সময় তার নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। দুই শীর্ষ নেতার অপছন্দের হয়েও রাজনীতিতে টিকে আছেন রুহুল কবির রিজভী।
যখন নেতাদের পলায়নপরতা, যখন বিএনপির নেতারা নানারকম সুযোগের সন্ধান করছেন বিভিন্ন জায়গায়, সেই সময়ে রুহুল কবির রিজভী তার জায়গায় অটুট রয়েছেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ ভুল হতে পারে। তিনি ভুল রাজনীতির চর্চাও করতে পারেন। কিন্তু তিনি যা বিশ্বাস করেন, সেই বিশ্বাসের প্রতি অটল রয়েছেন। বিএনপির রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনোই পুরস্কৃত হননি, কখনো মন্ত্রী হননি, এমপি হননি। বিএনপি যে দুইবার ক্ষমতায় ছিল, সেই দু’বারই দলে তিনি ছিলেন অপাংক্তেয়। কিন্তু ১/১১’র সময়ে তিনি যেমন দলের হাল ধরেছিলেন খন্দকার দেলোয়ারের সঙ্গে, তেমনি এখন এই সময়ে তিনি প্রায় একাই দলের নেতাকর্মীদেরকে আগলে রাখছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা কেউই রুহুল কবির রিজভীকে পছন্দ করেন না। স্রোতের বিপরীতে তিনি আর কতদিন সাঁতার কাটতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বেগম জিয়া তারেক অপছন্দ রুহুল কবির রিজভী বিএনপি নেতা
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।